প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড ২০২০ সালের প্রথম ছয় মাসের আর্থিক ফলাফল প্রকাশ করেছে। ক্যাপিটালের পর্যাপ্ততা ও তারল্যের দিক থেকে রেগুলেটরি বাধ্যবাধকতা যথাযথভাবে বজায় রাখতে পেরেছে এবং ইন্ডাস্ট্রির অন্য ব্যাংকের তুলনায় শক্তিশালী অবস্থানে আছে, যা ব্যাংকটির স্থিতাবস্থা ও দৃঢ় আর্থিক সামর্থের প্রতিফলন বহন করে। ক্যাপিটাল ও তারল্যের স্থিতাবস্থা অনিশ্চয়তার এই সময়ে ব্যাংকটিকে শক্তিশালী ভিত ধরে রাখতে সাহায্য করবে। প্রসারমান ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশনের অংশ হিসেবে গত কয়েক বছরে প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের ফলে দুর্যোগের সময়েও গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদান করতে সক্ষম হয়েছে প্রাইম ব্যাংক।

সরকারের কোভিড-১৯ প্রণোদনার আওতায় ঋণ বিতরণে কার্যকর ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে প্রাইম ব্যাংক। এ ঋণ বিতরণের পরিমাণের দিক থেকে অন্যতম অগ্রগামী ব্যাংক হিসেবে আছে প্রাইম ব্যাংক। প্রণোদনা বাস্তবায়নের ফলে ব্যবসায় প্রয়োজনীয় পুঁজি প্রদান করা গেছে এবং ব্যবসাকে করোনাভাইরাস পূর্ববর্তী স্বাভাবিক উৎপাদনশীলতায় ফিরিয়ে নিতে সাহায্য করছে।

পূর্বেই প্রস্তুতকৃত বিজনেস কন্টিনিউটি প্ল্যানের বিচক্ষণ বাস্তবায়ন ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করায় সংকটকালে কোভিড-১৯ এর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পেরেছে এবং গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদান করতে সক্ষম হয়েছে। প্রযুক্তিমুখী ব্যাংকটি, যা এবছর এশিয়ামানি থেকে “বাংলাদেশের সেরা ডিজিটাল ব্যাংক” হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, ইন্টারনেট ব্যাংকিং সার্ভিস অ্যালটিচুড এর সেলফ-রেজিস্ট্রেশন চালু, আইসিটি খাতে বাংলাদেশের প্রথম জামানতবিহীন ঋণ প্রদাণের জন্য এমএসএমই অ্যালায়েন্সের সূচনা করেছে, যা ব্যবসায়ী মহলে প্রশংসা অর্জন করেছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রেক্ষিতে গ্রাহক ও কর্মীবাহিনীর নিরাপত্তায় কার্যকর উদ্যোগের জন্য যুক্তরাজ্য ভিত্তিক বিশ্বখ্যাত ফাইন্যান্সিয়াল প্রকাশনা ইউরোমানি প্রাইম ব্যাংককে ‘এক্সিলেন্স ইন লিডারশিপ ইন এশিয়া ২০২০ পুরস্কার’রে ভূষিত করেছে। এটি প্রাইম ব্যাংকের জন্য এক অনন্য সম্মান কেননা দক্ষিণ এশিয়া থেকে একমাত্র ব্যাংক হিসেবে ব্যাংকটি এ পুরস্কার অর্জন করেছে।

করোনাভাইরাস দুর্যোগে অনলাইন লেনদেনের সময় গ্রাহকরা যাতে প্রতারকদের প্রতারণার শিকার না হয়, সেজন্য প্রাইম ব্যাংক সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত করার জন্য নজরদারি জোরদার করেছে। এর ফলে গ্রাহকরা সরাসরি শাখায় না গিয়ে ঘরে বসেই ডিজিটাল ব্যাংকিং সার্ভিস গ্রহণে উৎসাহিত হয়েছে।

রেগুলেটরি পদক্ষেপের অংশ হিসেবে লোনের ইএমআই ও ইন্টারেস্ট প্রদান স্থগিত করা, বিলম্ব মাশুল মওকুফ, ঋণ শ্রেণীকরণ ও প্রভিশনিংয়ের নতুন বিধি ও ইন্টারেস্ট রেট বেঁধে দেওয়ার ফলে আয় কমে যাওয়ায় প্রাইম ব্যাংক আন্তর্জাতিক রেমিটেন্সে জোর দেয়, ডিজিটাল বাংকিংয়ে সক্ষমতা বাড়ায় এবং কার্যকর ব্যয় ব্যবস্থাপনার মত পদক্ষেপ নেয়।

করোনাভাইরাসের সময় প্রাইম ব্যাংক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সেবায় বিদ্যানন্দ ও জাগো ফাউন্ডেশন এবং মিশন সেইভ বাংলাদেশ এর সাথে অর্থ সংগ্রহের জন্য পার্টনারশিপ শুরু করে, যার ফলে মহামারীকালে দরিদ্র জনগোষ্ঠী প্রয়োজনীয় সহায়তা পায়।

এই প্রতিকূল সময়ে প্রাইম ব্যাংক ২০২০ সালের জানুয়ারি-জুন সময়কালে সলো ভিত্তিতে ৬১.৮৮ কোটি টাকা নেট মুনাফা অর্জন করেছে, যা ২০১৯ সালের একই সময়ে ছিল ৯৯.২৭ কোটি টাকা। একই সময়ে ব্যাংকটি সলো ভিত্তিতে ২৪৮.১৬ কোটি টাকা পরিচালনাগত মুনাফা অর্জন করেছে, যা পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ে ছিল ৩৩২.৪৭ কোটি টাকা।

পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় ব্যাংকটির পরিচালনা মুনাফা ও কর পরবর্তী মুনাফা যথাক্রমে ২৫ শতাংশ ও ৩৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ইএমআই ও ইন্টারেস্ট প্রদান স্থগিত করা, ফি মওকুফ ও ইন্টারেস্ট রেট বেঁধে দেওয়ার ফলে আয় কমে গেছে।

৩০ জুন ২০২০ এ সলো ভিত্তিতে ব্যাংকের শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে ০.৫৫ টাকা, যা ২০১৯ সালের একই সময়ে ছিল ০.৮৮ টাকা। ২০২০ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ে সালে ভিত্তিতে শেয়ার প্রতি নিট অ্যাসেট ভ্যালু দাঁড়ায় ২৪.২১ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২২.৭৫ টাকা। ২০২০ এর অর্ধবার্ষিকীতে সলো ভিত্তিতে শেয়ার প্রতি নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো দাঁড়ায় ০.৭৫ টাকা, যা পূর্ববতী বছরের একই সময়ে ছিল ০.৮৪ টাকা।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত প্রাইম ব্যাংক ৩ আগস্ট, ২০২০ তারিখে ২০২০ সালের প্রথমঅর্ধবার্ষিকের আর্নিংস ডিসক্লোজার অনুষ্ঠান আয়োজন করে, যা ব্যাংকটির ফেইসবুক পেইজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। বর্তমানের করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার জন্য জুম ওয়েববিনার ওয়েবকাস্টের সাহায্যে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়।

ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও রাহেল আহমেদ ও সিনিয়র ম্যানেজমেন্টের কর্মকর্তাবৃন্দ ২০২০ সালে প্রথম ছয় মাসের আর্থিক ফলাফল উপস্থাপন করেন এবং অনলাইনে অংগ্রহণকারী দেশী- বিদেশী বিনিয়োগ বিশ্লেষক, পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পার্টনার ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

এ উপলক্ষে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও রাহেল আহমেদ বলেন, “করোনাভাইরাসের সংকটকালে কর্মীবাহিনী ও গ্রাহকদের নিরাপত্তায় আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছি। নিরাপত্তা বজায় রেখে গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন সার্ভিস প্রদান করাও ছিল অন্যতম অগ্রাধিকার। ভাইরাসটি সংক্রমণের শুরুর দিকেই আমরা সচেতনতা ও নিরাপত্তা পদক্ষেপ গ্রহণ করি। প্রথমদিকেই পদক্ষেপ গ্রহণ করায় গ্রাহকদের অতি জরুরি সেবা ও পরিবর্তনশীল চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়েছে। সংকটকালে গ্রাহকদের পাশে
দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে প্রাইম ব্যাংক এর আছে পূর্বের অনেক নজির।”

তিনি আরও বলেন, “এই ক্রান্তিকালে গ্রাহকদের অতি জরুরি সেবা প্রদান করায় আমি আমার সহকর্মীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলা, পরিবর্তিত কাজের পদ্ধতিতে অভ্যস্ত হওয়া, গ্রাহকদের স্বার্থ সবার্গ্রে রাখা, একে অপরকে সহায়তা করা এবং সমাজের মানুষদের পাশে দাঁড়ানোয় আমি তাঁদের ধন্যবাদ জানাই। ব্যাংকের কর্মকর্তাদের কর্মতৎপরতা ও গ্রাহকদের ঘুরে দাঁড়ানোর মানসিকতা আমাকে উৎসাহিত করেছে। আমরা দৃঢ় বিশ্বাস এর ওপর ভিত্তি করে আমরা এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠবোই।”

উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিএফও মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান চৌধুরী, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিআরও মোঃ তৌহিদুল আলম খান, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিও ফয়সাল রহমান, হেড অব কনজিউমার ব্যাংকিং এএনএম মাহফুজ, হেড অব এমএসএমই ব্যাংকিং সৈয়দ এম. ওমর তৈয়ব, হেড অব টিবি, এসএফডি ও আইডি শামস্ধসঢ়; আবদুল্লাহ মোহাইমিন, হেড অব ট্রেজারি এসকে. মতিউর রহমান, সিওও আবদুল হালিম, হেড অব আইসিসি মোহাম্মদ জসিম উদ্দীন এবং হেড অব ব্র্যান্ড ও কমিউনিকেশন্স নাজমুল করিম চৌধুরী অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে