স্পোর্টস ডেস্ক :
আম্বাতি রায়ডু যদি বিপক্ষকে উড়িয়ে দেয়ার মানসিকতা নিয়ে বাইশ গজে নেমে থাকেন, তাহলে কায়রন পোলার্ড এসেছিলেন প্রতিপক্ষকে খুন করার মেজাজে।
হ্যাঁ খুনই বটে। কিন্তু ফ্যাফ ডু প্লেসিস কি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন! ১৭.৫ ওভারে তাঁকে আউট করার সুযোগ তৈরি করেছিলেন শার্দূল ঠাকুর। কিন্তু পোলার্ডের লোপ্পা ক্যাচ ছেড়ে দিলেন প্লেসিস। এরপর আর সুযোগ দেননি এই ক্যারিবিয়ান দানব।
প্রথমে বলেই দাপট দেখানোর পর কেবল একাই ব্যাট চালিয়ে যুদ্ধ জিতে নিলেন পোলার্ড। ২৫৫.৮৮ স্ট্রাইক রেট নিয়ে মাত্র ৩৪ বলে ৮৭ করে অপরাজিত রইলেন। মারলেন ৬টি চার ও ৮টি ছয়। তাই তো আইপিএল-এর মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে মহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাই সুপার কিংসকে ৪ উইকেটে হারিয়ে দিল শনিবার। নয়াদিল্লির প্রয়াত অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে সিএসকে-র ৪ উইকেটে ২১৮ রানে জবাবে মুম্বাই থামল ৬ উইকেটে ২১৯ রানে।
এই ম্যাচের আগে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ও রোহিত শর্মার সময়টা মোটেও ভাল যাচ্ছে না। প্রথম উইকেটে ভাল শুরু করেও ধোনির বিরুদ্ধে চাপ বজায় রাখতে পারলেন না রোহিত ও কুইন্টন ডি’কক। মুম্বাই অধিনায়ককে ফিরিয়ে চেন্নাইকে প্রথম সাফল্য এনে দেন শার্দূল ঠাকুর। মুম্বাই তখন ৭১ রানে ১ উইকেট। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ডাগ আউটে ফিরে গেলেন ডি কক ও সূর্য কুমার যাদব। ৮১ রানে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে ধোনির মুখে তখন হাজার ওয়াটের হাসি।
কিন্তু কায়রন পোলার্ড শুরু থেকেই ধারণ করলেন রুদ্রমূর্তি। চোখের নিমেশে ১৭ বলে করে ফেললেন চলতি আইপিএল-এর দ্রুততম অর্ধ শতরান। তবে ১৭তম ওভারে ক্রুণাল পান্ডিয়াকে আউট করে দলকে ফের স্বস্তি এনে দিলেন স্যাম কারান। পোলার্ড ও ক্রুণাল প্রায় জেট গতিতে চতুর্থ উইকেটে ৮৯ রান যোগ করেন। আর এই জুটির জন্যই ঘুরে গেল খেলা।
যদিও চেন্নাইয়ের ব্যাটিংও মন্দ হয়নি। শুরুটা করলেন ফ্যাফ ডু প্লেসিস ও মঈন আলি মিলে। আর শেষ করলেন অম্বাতি রায়ডু। চেন্নাইয়ের ব্যাটিংকে এভাবেই ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। রোহিত তাঁর বোলিং নিয়ে সব সময় গর্ববোধ করেন। কিন্তু শনিবার সেই গর্বের বোলিংকে তুলোধোনা করলেন সিএসকে-র তিন ব্যাটসম্যান।
ঋতুরাজ গায়কোয়াড় দ্রুত ফিরলেও মাথা নত করেননি ধোনির দুই বিদেশি ব্যাটসম্যান। মারমুখী মেজাজে দ্বিতীয় উইকেটে ১০৮ রান তুলে দিলেন ফ্যাফ ও মঈন। ৩৬ বলে ৫৮ রানে ফিরলেন মঈন যখন ফিরলেন তখন চেন্নাইয়ের স্কোর বোর্ডে ১ উইকেটে ১১২ রান।
প্রথম সাফল্য পাওয়ার পর রোহিতের বোলিং যেন গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে। ১২তম ওভারের শেষ দুই বলে প্লেসিস (২৮ বলে ৫০) ও সুরেশ রায়নাকে আউট করে মুম্বাইকে খেলায় ফেরান পোলার্ড। ১১৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চেন্নাই তখন বেশ চাপে। কিন্তু রায়ডু যেন বিপক্ষকে উড়িয়ে দেয়ার মানসিকতা নিয়ে বাইশ গজে নেমেছিলেন। বিপক্ষের দুই সেরা বোলার যশপ্রীত বুমরা ও ট্রেন্ট বোল্টকে করলেন টার্গেট।
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের বিরুদ্ধে গত ম্যাচে রবীন্দ্র জাদেজা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিলেন। এদিন তিনি শুধু রায়ডুকেই সঙ্গ দিয়ে গেলেন। একটা সময় মনে হচ্ছিল চেন্নাই বড় রান গড়তে পারবে না। কিন্তু শেষ ৫ ওভারে ৮২ রান তুলে স্কোর বোর্ডের ভোল বদলে দিলেন গত বিশ্বকাপে সুযোগ না পাওয়া রায়ডু।
অপরাজিত রইলেন মাত্র ২৭ বলে ৭২ রান তুলে। তার এই ঝোড়ো ইনিংসে মারলেন ৪টি চার ও ৭টি ছক্কা। জাদেজা ২২ বলে ২২ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। ফলে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ২১৮ রান তুলল চেন্নাই।
তবে এতেও যে শেষ রক্ষা হলো না চেন্নাইয়ের। ৭ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে এখনও শীর্ষে থাকলেও জোর ধাক্কা হজম করলেন ধোনি। অন্যদিকে ম্যাচসেরা পোলার্ডের কল্যাণে ৭ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে চার নম্বরে উঠে এলো মুম্বাই।