আজ তার সন্তানের জন্মদিন, দেখতে দেখতে আজ সে ৫ম বছরে পদার্পণ করেছে। হ্যাঁ, ছোট্ট কোন বালক বা বালিকা নয়, কথা হচ্ছে উদ্যোক্তা রিশান মাহমুদের ব্যবসা নিয়ে। যাকে সন্তান বলে আখ্যা দিলে খুব একটা ভুল হয়না, কেননা তিনি তার উদ্যোগ পাঞ্জাবীওয়ালাকে সন্তান বলেই পরিচয় দেন। সন্তানকে যেমন পরম মমতায় বড় করতে হয়, তার উদ্যোগের ক্ষেত্রেও সেটির ব্যতিক্রম ঘটেনি। 

২০১৫ সালের ২১ জুন যাত্রা শুরু করে  পাঞ্জাবীওয়ালা। শুরুর দিকে নিজেই কাস্টমারের কাছে গিয়ে স্যাম্পল এনে ঐ স্যাম্পল অনুযায়ী পাঞ্জাবী বানিয়ে ডেলিভারি দিয়েছেন। ব্যস্ততায় এখন ডেলিভারি দেয়া হয় না ঠিক। তবে সুযোগ পেলেই ছুটে যান ক্রেতার দরজায় এবং নিশ্চিত করেন ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য হাতে পেলেন কিনা।

পাঞ্জাবীওয়ালার জন্মদিন নিয়ে মুঠোফোনে উদ্যোক্তা রিশান মাহমুদের সাথে কথা হলে শুরুতে নিজে এই ডেলিভারি দেয়া নিয়ে হাসতে হাসতে কথা শুরু করে বলেন, ‘শুরুতে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হলেও কথাগুলো গায়ে লাগতো না, আসলে ওই সময়টাকে মিস করি খুব। আমি পৌঁছে দেই বলেই আজ ক্রেতাদের সাথে আমার প্রত্যক্ষ যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। যা আমার ব্যবসার সফলতার প্রধান কারণ। কাপড় কেনা থেকে শুরু করে ডিজাইন, কালার কম্বিনেশন প্রায় সবইতো আমাকে করতে হয়, তাহলে অর্ডার পৌঁছানো কেন নয়। যখন দেখি ক্রেতাদের থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি, তখন মনে হয় পুরো কাজটা আমি একা করতে পারলে ভালো হতো।’

রিশান বলেন, ‘আজকের এই ৫ বছরের জার্নিতে আমার প্রধান শক্তি ক্রেতা। তারা আমার পণ্য এত পছন্দ না করলে কখনই আমি এতদিন টিকে থাকতে পারতাম না। আমার কাস্টমাররা এতো লক্ষী যে তারা নিজেরাই আমার ব্রান্ডের মার্কেটিং করে দেয়। সর্বপরি আমি আমার ক্রেতাদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ। আমি স্বপ্ন দেখি আমার ক্রেতাদের হাত ধরে একদিন একটি ব্রান্ডের নাম হবে পাঞ্জাবীওয়ালা।’

রিশানের ডিজাইনগুলো হয় অনন্য, তিনি সারা বছর পোশাক সরবরাহ করেন তবে বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুন, ভ্যালেন্টাইন, একুশে ফেব্রুয়ারি, ঈদ, পুঁজোর বিশেষ পাঞ্জাবী তৈরি করেন। পরিবারের সকলের জন্য ম্যাচ করে তৈরি পাঞ্জাবীগুলোর সাড়া পান খুব বেশি। ৪ জন সহযোগীসহ, ৪টি মেশিনের ছোট্ট কারখানায় তৈরি হচ্ছে ব্লক, বাটিকের কাজ করা এই পাঞ্জাবীগুলো।

শুরুটা হয়েছিল বৈশাখের বিশেষ দিনে ২০১৫ সালে পহেলা বৈশাখে রিশান ও তার বন্ধুরা মিলে একই ডিজাইনে করা ৭ জন ৭ রঙের পাঞ্জাবী পড়েন, যা তৈরি করেন রিশান নিজেই। ঘুরে বেড়ানোর ছবিগুলো ফেসবুকে আপলোড করলে হঠাৎ ১০০টিরও বেশি পাঞ্জাবির অর্ডার পেয়ে যান রিশান। স্বপ্ন ডানা মেলতে থাকে। একটি অর্ডার বদলে দেয় তার জীবনের হিসেব-নিকেশ। যা তাকে আজকের অবস্থানে এনে দিয়েছে।

বর্তমানে করোনা মহামারিতে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং এখনও সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন। ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন ব্যাক্তিগত ত্রাণ সাহায্য। তৈরি করেছেন মাস্ক, পিপিইসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। মানব কল্যাণে নিবেদিত এই তরুণ প্রাণের ব্যক্তিগত জীবনে দানশীলতার অনেক উদাহরণ আছে।

স্বপ্নবাজ এ তরুণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার ও পারফরমেন্স বিভাগ থেকে পড়াশোনা করা অবস্থাতেই একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সংবাদ পাঠক হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং এখনও সেখানেই কর্মরত আছেন।

উদ্যোক্তা জীবনকে ভালোবেসে সংবাদ পাঠক রিশান মাহমুদ থেকে পাঞ্জাবীওয়ালা রিশান মাহমুদ নামেই পরিচিতি পেতে পছন্দ করেন সফল এই উদ্যোক্তা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে