Dhaka ০৭:৩০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫, ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাকিস্তানের টার্গেট ছিল ২০ ভারতীয় যুদ্ধবিমান, ভূপাতিত করে ৬

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৫:০১:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫
  • 38

সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে ইসলামাবাদের অবস্থান তুলে ধরতে বিশ্বশক্তিগুলোর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি।

লন্ডনে একাধিক কূটনৈতিক বৈঠকে অংশ নিয়ে তিনি দাবি করেন, পাকিস্তান কৌশলগতভাবে ভারতকে পেছনে ফেলেছিল এবং চাইলেই আরও বড় ক্ষয়ক্ষতি ঘটাতে পারত, কিন্তু বিশ্বশান্তির স্বার্থে সংযম দেখিয়েছে।

লন্ডনে পাকিস্তানি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিলাওয়াল বলেন, সংঘাতের সময় আমরা ২০টি ভারতীয় যুদ্ধবিমানকে টার্গেট করেছিলাম, কিন্তু গুলি করে ভূপাতিত করেছি মাত্র ছয়টি। বিশ্ব দেখেছে, পাকিস্তান কেবল প্রতিরোধেই নয়, শান্তির ক্ষেত্রেও একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র।

মঙ্গলবার (১০ জুন) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে জিও টিভি।

আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার আহ্বান

কাশ্মীরসহ ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সক্রিয় ভূমিকার আহ্বান জানিয়ে বিলাওয়াল বলেন, আমরা চাই আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান হোক—এর শুরু কাশ্মীর থেকে। সমস্যাগুলো আটকে আছে কারণ ভারত তা আলোচনায় আনতে রাজি নয়।

সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সাম্প্রতিক সংঘাতের সময় পাকিস্তান শান্তিপূর্ণ সমাধানের শর্তে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছিল। তিনি বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়েছিলাম—ভবিষ্যতে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে সব ইস্যুতে আলোচনা হবে, সেই শর্তেই আমরা যুদ্ধবিরতিতে গিয়েছিলাম।

ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি

বিলাওয়াল বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতার ভূমিকাকেও স্বীকৃতি দেন, যিনি দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি বলেন, তার প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়।

পানি নিয়ে সতর্ক বার্তা

লন্ডনের চ্যাথাম হাউস ও ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (আইআইএসএস)-এ বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিলাওয়াল ভারতের পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন বলে আখ্যা দেন। বিশেষভাবে ইন্দাস জলচুক্তি একতরফাভাবে স্থগিতের সিদ্ধান্তকে পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, পাকিস্তান একটি দায়িত্বশীল পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র। পানি বন্ধ করা হলে আমরা তা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল হিসেবে বিবেচনা করব।

তথ্য যুদ্ধে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ

পেহেলগামে একটি সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনায় ভারতের সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করার সমালোচনা করেন বিলাওয়াল। “ভারতের এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমরা বরং একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছিলাম,” বলেন তিনি।

তিনি অভিযোগ করেন, ভারতের সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য ও বাস্তবতা বিকৃত করছে এবং বিশ্বমঞ্চে পাকিস্তানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে বিভ্রান্তিকর প্রচার চালাচ্ছে।

কূটনৈতিক প্রচার অভিযান

বিলাওয়ালের নেতৃত্বে পাকিস্তানি প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে একযোগে কূটনৈতিক প্রচার চালাচ্ছে। গত সপ্তাহে তারা ওয়াশিংটন ও নিউইয়র্কে মার্কিন কংগ্রেস সদস্য ও সিনেটরদের সঙ্গে ৫০টিরও বেশি বৈঠক করে। এরপর লন্ডনে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর ও পার্লামেন্ট সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকেও পাকিস্তানের অবস্থান তুলে ধরা হয়।

প্রতিনিধি দলে রয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার, খুররম দস্তগীর, সিনেটর শেরি রেহমান, মুসাদিক মালিক, ফয়সাল সুবজারী ও বুশরা আনজুম বাট, এবং প্রবীণ কূটনীতিক জলিল আব্বাস জিলানি ও তেহমিনা জানজুয়া।

বিলাওয়াল বলেন, এই প্রচারাভিযানের মূল লক্ষ্য বিশ্বকে জানানো যে, পাকিস্তান সংঘাত চায় না—আমরা চাই ন্যায়ভিত্তিক, সম্মানজনক ও টেকসই শান্তি। তার শুরুটা হতে হবে কাশ্মীর ইস্যু সমাধানের মাধ্যমে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

পাকিস্তানের টার্গেট ছিল ২০ ভারতীয় যুদ্ধবিমান, ভূপাতিত করে ৬

Update Time : ০৫:০১:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫

সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে ইসলামাবাদের অবস্থান তুলে ধরতে বিশ্বশক্তিগুলোর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি।

লন্ডনে একাধিক কূটনৈতিক বৈঠকে অংশ নিয়ে তিনি দাবি করেন, পাকিস্তান কৌশলগতভাবে ভারতকে পেছনে ফেলেছিল এবং চাইলেই আরও বড় ক্ষয়ক্ষতি ঘটাতে পারত, কিন্তু বিশ্বশান্তির স্বার্থে সংযম দেখিয়েছে।

লন্ডনে পাকিস্তানি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিলাওয়াল বলেন, সংঘাতের সময় আমরা ২০টি ভারতীয় যুদ্ধবিমানকে টার্গেট করেছিলাম, কিন্তু গুলি করে ভূপাতিত করেছি মাত্র ছয়টি। বিশ্ব দেখেছে, পাকিস্তান কেবল প্রতিরোধেই নয়, শান্তির ক্ষেত্রেও একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র।

মঙ্গলবার (১০ জুন) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে জিও টিভি।

আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার আহ্বান

কাশ্মীরসহ ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সক্রিয় ভূমিকার আহ্বান জানিয়ে বিলাওয়াল বলেন, আমরা চাই আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান হোক—এর শুরু কাশ্মীর থেকে। সমস্যাগুলো আটকে আছে কারণ ভারত তা আলোচনায় আনতে রাজি নয়।

সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সাম্প্রতিক সংঘাতের সময় পাকিস্তান শান্তিপূর্ণ সমাধানের শর্তে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছিল। তিনি বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়েছিলাম—ভবিষ্যতে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে সব ইস্যুতে আলোচনা হবে, সেই শর্তেই আমরা যুদ্ধবিরতিতে গিয়েছিলাম।

ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি

বিলাওয়াল বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতার ভূমিকাকেও স্বীকৃতি দেন, যিনি দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি বলেন, তার প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়।

পানি নিয়ে সতর্ক বার্তা

লন্ডনের চ্যাথাম হাউস ও ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (আইআইএসএস)-এ বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিলাওয়াল ভারতের পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন বলে আখ্যা দেন। বিশেষভাবে ইন্দাস জলচুক্তি একতরফাভাবে স্থগিতের সিদ্ধান্তকে পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, পাকিস্তান একটি দায়িত্বশীল পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র। পানি বন্ধ করা হলে আমরা তা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল হিসেবে বিবেচনা করব।

তথ্য যুদ্ধে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ

পেহেলগামে একটি সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনায় ভারতের সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করার সমালোচনা করেন বিলাওয়াল। “ভারতের এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমরা বরং একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছিলাম,” বলেন তিনি।

তিনি অভিযোগ করেন, ভারতের সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য ও বাস্তবতা বিকৃত করছে এবং বিশ্বমঞ্চে পাকিস্তানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে বিভ্রান্তিকর প্রচার চালাচ্ছে।

কূটনৈতিক প্রচার অভিযান

বিলাওয়ালের নেতৃত্বে পাকিস্তানি প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে একযোগে কূটনৈতিক প্রচার চালাচ্ছে। গত সপ্তাহে তারা ওয়াশিংটন ও নিউইয়র্কে মার্কিন কংগ্রেস সদস্য ও সিনেটরদের সঙ্গে ৫০টিরও বেশি বৈঠক করে। এরপর লন্ডনে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর ও পার্লামেন্ট সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকেও পাকিস্তানের অবস্থান তুলে ধরা হয়।

প্রতিনিধি দলে রয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার, খুররম দস্তগীর, সিনেটর শেরি রেহমান, মুসাদিক মালিক, ফয়সাল সুবজারী ও বুশরা আনজুম বাট, এবং প্রবীণ কূটনীতিক জলিল আব্বাস জিলানি ও তেহমিনা জানজুয়া।

বিলাওয়াল বলেন, এই প্রচারাভিযানের মূল লক্ষ্য বিশ্বকে জানানো যে, পাকিস্তান সংঘাত চায় না—আমরা চাই ন্যায়ভিত্তিক, সম্মানজনক ও টেকসই শান্তি। তার শুরুটা হতে হবে কাশ্মীর ইস্যু সমাধানের মাধ্যমে।