নিজস্ব প্রতিবেদক :
টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে ক্যারিয়ারে কখনোই ব্যাটিং গড় ৫০ এর নিচে নামেনি এমন ব্যাটসম্যানের সংখ্যা ২ জন। একজন হলেন ইংল্যান্ডের সার্টক্লিফ। অন্যজন হলেন পাকিস্তানের জাভেদ মিয়াদাদ । ক্যারিয়ারে খেলেছেন ১২৪ টা টেস্ট। কিন্তু পাকিস্তানের এই ‘বড়ে মিয়া’র ব্যাটিং গড় কখনোই ৫০ এর নিচে নামেনি। শতাধিক টেস্ট খেলেছেন অথচ ক্যারিয়ারে একটি বারের জন্যও ৫০ এর নিচে গড় নামেনি, এটা নিশ্চিতভাবেই বিস্ময় জাগানিয়া।
পাকিস্তান তো বটেই বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানদের নাম নিতে গেলেও জাভেদ মিয়াদাদ থাকবেন উপরের দিকেই।
১৯৫৭ সালের আজকের এই দিনে (১২ জুন) জন্মেছিলেন পাকিস্তানের এই কিংবদন্তী ক্রিকেটার।
পাকিস্তানের ইতিহাসে সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যানের ক্যারিয়ারে একটি ছক্কা এখনো ইতিহাসখ্যাত হয়ে আছে। ম্যাচের শেষ বলে ছক্কা মেরে ১৯৮৬ সালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে দেশকে এনে দিয়েছিলেন অবিস্মরণীয় এক জয়। সে বছরের এপ্রিলে অস্ট্রেলেশিয়া কাপের ফাইনালের শেষ ওভার ছিল ওটা। ভারতীয় পেসার চেতন শর্মার শেষ বলটিতে পাকিস্তানের জয়ের জন্য দরকার ছিল ৪ রানের। মোটামুটি বল করা শর্মা শেষ বলটি ফুলটস দিয়েই সর্বনাশ করেন। উইকেটে জমে থাকা মিয়াঁদাদ ফুলটসটি লং অনের ওপর দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন। কমেন্ট্রি বক্স থেকে ভেসে আসলো, ‘This is six and Pakistan have won. unbelievable victory by Pakistan and Javed Miandad hero of the moment. This is unbelievable.’পাকিস্তান জিতল ইতিহাসের প্রথম অস্ট্রেলেশিয়া কাপ। ইতিহাসে জায়গা করে নিল মিয়াদাদের সেই ছক্কা। আধুনিক ক্রিকেটে শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে জয় অনেকটা সহজ ব্যাপার হলেও তিন দশক আগে মিয়াদাদই প্রথম এমন রোমাঞ্চকর অনুভূতির সাথে পরিচয় করান।
জাভেদ মিয়াদাদের টেস্ট অভিষেক ঘটে ১৯৭৬ সালে। লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টেই তুলে নেন সেঞ্চুরি (১৬৩)। মাত্র ১৯ বছর ১১৯ দিন বয়সে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে রেকর্ড গড়েন। বর্তমানে যে রেকর্ডটি বাংলাদেশের মোহাম্মদ আশরাফুলের। ২০০১ সালে কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৭ বছর ৬১ দিন বয়সে সেঞ্চুরি হাঁকান আশরাফুল।
সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ানের রেকর্ডটা পরবর্তীতে আশরাফুলের কাছে হাতছাড়া হলেও সর্বকনিষ্ঠ ডাবল সেঞ্চুরিয়ানের রেকর্ডটা অবশ্য এখনো জাভেদ মিয়াদাদের দখলে। নিজের তৃতীয় টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একই সিরিজে করাচি ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নেন মিয়াদাদ। ২০৬ রানের অসাধারণ ঐ ইনিংসের মাধ্যমে ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান জর্জ হেডলির ৪৭ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙ্গে সর্বকনিষ্ঠ ডাবল সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে নিজের নাম লিখিয়ে নেন এই পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান। ১৯ বছর ১৪০ দিন বয়সে গড়া তার রেকর্ডটি এখনো অক্ষুণ্ণ আছে।
জাভেদ মিয়াদাদ ক্যারিয়ার জুড়ে নানান কীর্তিতে সমৃদ্ধ ছিলেন। শুরুর মতো ক্যারিয়ারের সায়াহ্নেও রাঙিয়েছিলেন ভিন্ন এক রেকর্ডে। টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজের অভিষেক ও শততম টেস্টে সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েছিলেন জাভেদ মিয়াদাদ ।
টেস্টের মতো ওয়ানডেতেও জাভেদ মিয়াদাদ ধারাবাহিকতার অনন্য নজির গড়েছিলেন। ১৯৭৫ সালে প্রথম বিশ্বকাপ দিয়ে তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক। বার্মিংহামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচে পাকিস্তানের জার্সিতে ব্যাট হাতে নামেন পাকিস্তানের এই কিংবদন্তী ক্রিকেটার। ৬ টি বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া জাভেদ মিয়াদাদ সর্বোচ্চ সংখ্যক বিশ্বকাপ খেলা ক্রিকেটার হিসেবে এককভাবে রেকর্ডের মালিক ছিলেন দীর্ঘদিন। ২০১১ বিশ্বকাপে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে মিয়াদাদের রেকর্ডে ভাগ বসান ভারতীয় ব্যাটিং ঈশ্বর খ্যাত শচীন টেন্ডুলকার।
কাকতালীয়ভাবে মিয়াদাদ ওয়ানডে ক্যারিয়ার শুরু করেছেন বিশ্বকাপ দিয়ে, ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটিও খেলেছেন বিশ্বকাপেই। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে ব্যাঙ্গালোরে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটিই তার পাকিস্তানের জার্সিতে শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। ওয়ানডেতে ২৩৩ ম্যাচে ৪১.৭০ গড়ে ৮ সেঞ্চুরি ও ৫০ ফিফটিতে রান করেছেন ৭৩৮১। ওয়ানডেতে টানা ৯ ফিফটি করার রেকর্ড জাভেদ মিয়াদাদের দখলে।
বাইশ গজের ক্রিকেটে ব্যাটিং প্রদর্শনী ছাড়াও ক্যারিয়ারে অদ্ভুত কান্ডে জুড়ি ছিল না জাভেদ মিয়াদাদের। ১৯৯২ বিশ্বকাপে শিরোপা জয়ী টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের এই কিংবদন্তী ব্যাটসম্যান এক অদ্ভুত কান্ড ঘটিয়ে বসেন। যা এখনো ক্রিকেট অনুরাগীদের কাছে হাস্য রসের খোরাক জোগায়। শচীন টেন্ডুলকারের ওভারে ভারতীয় উইকেট রক্ষক কিরণ মোরের স্লেজিংয়ের জবাবে ব্যঙের মত লাফ দিতে থাকেন মিয়াদাদ।
বর্ণাঢ্য ক্রিকেট ক্যারিয়ারে অসংখ্য রেকর্ডের মালিক পাকিস্তানের এই ব্যাটিং গ্রেট আজ জীবনের ক্যালেন্ডারে ৬৫ পেরোলেন।
শুভ জন্মদিন জাভেদ মিয়াদাদ।