কাশ্মিরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের ওপর জঙ্গি হামলার পর কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত। বুধবার (২৩ এপ্রিল) মধ্যরাতে নয়াদিল্লিতে পাকিস্তানের এক শীর্ষ কূটনীতিককে ডেকে তাকে দ্রুত দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই এই খবর নিশ্চিত করেছে। তবে সরকারের কোনো মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে সরাসরি এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।
এএনআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বুধবার মধ্যরাতে নয়াদিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয় ভারতে অবস্থান করা পাকিস্তানি কূটনীতিক সাদ আহমেদ ওয়ারাইচকে। একই দিনে ভারত নয়াদিল্লির পাকিস্তান হাইকমিশনের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা, নৌ উপদেষ্টা ও বায়ু উপদেষ্টাকে ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’ অর্থাৎ অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে এবং তাদের এক সপ্তাহের মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেয়। এএনআই সূত্রে জানা গেছে, ওই পাক কূটনীতিককে ডেকে এনে আনুষ্ঠানিকভাবে সেই ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণার সরকারি নির্দেশনামা হস্তান্তর করা হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে তাদের উপস্থিতি আর কাম্য নয়।
এর আগে, বুধবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটির (সিসিএস) একটি জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা এই বৈঠকের পর রাত ৯টা নাগাদ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সিসিএসের কর্মকর্তারা। সেখানে বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচটি কঠোর পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেন। যতক্ষণ না পাকিস্তান আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়া বন্ধ করে, ততক্ষণ সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত।
এছাড়াও, আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বৈধ কাগজপত্র নিয়ে যারা এই সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে এসেছেন, তাদের আগামী ১ মে-র মধ্যে পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ভারত আরও জানিয়েছে, ‘সার্ক ভিসা অব্যাহতি প্রকল্প’ (এসভিইএস)-এর অধীনে কোনো পাকিস্তানি নাগরিককে আর দেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। পূর্বে এই ভিসার আওতায় পাকিস্তানিদের যত অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তাও বাতিল করা হচ্ছে। বর্তমানে এই ভিসা নিয়ে যারা ভারতে অবস্থান করছেন, তাদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়তে বলা হয়েছে।
পাকিস্তানের সামরিক উপদেষ্টাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণার পাশাপাশি, নয়াদিল্লিতে অবস্থিত পাকিস্তান হাইকমিশনের সদস্য সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০-এ নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালি। অভিযোগ উঠেছে, ধর্মীয় পরিচয় দেখে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছিল। ভারতের পক্ষ থেকে তিন বাহিনীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।