আহমেদাবাদ টেস্টের প্রথম ইনিংসই জানান দিচ্ছিল স্পিন বিষের নীল হচ্ছে উভয় দল। হলোও তাই। দুই দলের স্পিনারদের মায়াবী জাদুর খেলায় মাত্র দুই দিনেই শেষ হয়েছে দিবারাত্রির এই টেস্ট।
যাতে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরেছে সফরকারী ইংল্যান্ড। ব্যাটিংয়ের জন্য দুরূহ এই পিচে ছড়ি ঘুরিয়েছেন বোলাররা। এই ম্যাচের পরাজয়ে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হল ইংলিশদের।
বুধবার প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ভারতীয় স্পিন বিষে বিধ্বস্ত ইংলিশরা অলআউট হয় মাত্র ১১২ রানে। জবাবে ইংলিশ স্পিনে বেশিদূর যেতে পারেনি ভারতও। আনকোরা রুট ও লিচের ছোবলে পড়ে ১৪৫ রানের শেষ হয় কোহলিরা।
৩৩ রানের লিড পেয়েই যেন তেঁতে ওঠে অক্সার-অশ্বিনরা। এই দুজনের স্পিন বিষে দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৮১ রানেই গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড। আর এতেই নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ভারতের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪৯ রানের। যে লক্ষ্যে ডিনারের পর হেসে খেলেই পৌঁছে যায় রোহিত-শুভমনরা।
তরুণ স্পিনার আক্সার প্যাটেল দুই ইনিংস মিলিয়ে (৬+৫) ১১টি উইকেট লাভ করেন, যা তাঁর দুই টেস্টের ক্যারিয়ারে এটাই প্রথম দশ বা ততোধিক উইকেট শিকারের রেকর্ড। তাইতো ম্যাচ সেরার পুরস্কারটাও ওঠে তারই হাতে। এছাড়া রবিচন্দন অশ্বিন নেন ৭টি (৩+৪) উইকেট।
এর আগে ৩৩ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে ইংলিশরা। তাতে শুরুতেই ধাক্কা খেতে হয় ইংল্যান্ডকে। ব্যাট করতে নেমেই ইনিংসের প্রথম ওভারে জ্যাক ক্রোলি বিদায় নেন প্যাটেলের বলে বোল্ড হয়ে।
দুই নম্বরে ব্যাট করতে নেমে জনি বেয়ারস্টো প্রথম বল খেলতে গিয়ে পড়েন এলবিডব্লুর ফাঁদে। প্যাটেলের জোরালো আবেদনে আম্পায়ার সাড়া দিলে রিভিউ নিয়ে বেঁচে গেলেও পরের বলে আর রক্ষা হয়নি বেয়ারস্টোর। বোল্ড হয়ে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে তাকে।
দলীয় শূন্য রানে ২ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়া ইংল্যান্ডকে টেনে তোলার চেষ্টায় ব্যর্থ হন ডম সিবলিও। সেই প্যাটেলের বলেই ক্যাচ তুলে দিয়েছেন ৭ রান করে। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে ইংল্যান্ড। গুটিয়ে যায় মাত্র ৮১ রানেই। জো রুটের ব্যাট থেকে আসে ১৯, বেন স্টোকসের ২৫ রান, আর ওলে পপের ১২ রানই উল্লেখযোগ্য।
আক্সার প্যাটেল দ্বিতীয় ইনিংসেও তুলে নেন ৫টি উইকেট। এই টেস্টে মোট ১১ উইকেট তুলে নিয়েছেন তিনি। সঙ্গে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ৪ উইকেট আর ওয়াশুংটন সুন্দরের ১ উইকেটে মাত্র ৮১ রানে অল-আউট হয়েছে ইংলিশরা। যা কী না ভারতের বিপক্ষে ইংলিশদের সর্বনিম্ন রান।
এদিকে, আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মাত্র দেড় দিনেই দিবারাত্রির টেস্টে ইংল্যান্ডকে পরাজিত করেছে স্বাগতিক ভারত। এই জয়ে চার ম্যাচ সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বিরাট কোহলির দল। এর আগে ইতিহাসে ২ দিনে টেস্টের ফল নির্ধারণের নজির আছে ২১টি।
তবে এ দিনের খেলাতেই তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে মোতেরার নরেন্দ্র মোদি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পিচ। দিবারাত্রির এই ম্যাচের পিচ যেন ধুধু বালুর আস্তানা। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাটসম্যানদের অসহায়ত্ব পরিস্কারভাবে ফুটে উঠছে। এতে অনেক নামীদামী তারকাসহ ক্রিকেট সমর্থকরা মোতেরা স্টেডিয়ামের পিচ নিয়ে তীব্র সমালোচনা করছেন। কেউ কেউ দেখছেন জরিমানার ভয়ও।