মহীতোষ গায়েন,মফস্বল সম্পাদক পশ্চিমবঙ্গ:

করোনা সংক্রমণ দাবানলের মত বেড়ে চলেছে
তাতে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ নয় সারাদেশের জনজীবন দিশেহারা। এই পরিস্থিতিতে জনজীবনকে সুরক্ষিত রাখতে আজ পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাদের নির্দেশিকা ১৫ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে।

পশ্চিমবঙ্গের সরকার আজ এবিষয়ে যে ঘোষণা
করেছেন তাতে মানুষ আরো কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে এবং সংক্ষমণ প্রতিরোধের মাত্রা অনেকখানি নিয়ন্ত্রণে আসবে বল আমজনতা মনে করছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন ” এই নির্দেশিকাকে কেউ লকডাউন না বলে সবাই বিধিনিষেধ বলে মনে করবেন এবং তা নিষ্ঠা সহকারে পালন করবেন সাথে সাথে তিনি বলেন, বাংলায় করোনা কিছুটা কমেছে এবং সে কারণেই বিধিনিষেধের মেয়াদ ফের বাড়ানো হল।”

*এখন দেখা যাক কি কি বিধিনিষেধ থাকছে দ্বিতীয় নির্দেশিকা বা আদেশনামায় :
১.রাজ‍্যের সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, পলিটেকনিক, অঙ্গওয়ারি, আই আই টি সহ সমস্ত সেন্টার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আগামীকাল থেকে ৩০ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

২. স্বাস্থ্য পরিষেবা,ভেটেনারি,ল এন্ড অর্ডার,কোর্ট সহ সমস্ত জরুরী পরিষেবা ব‍্যতীত সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে।
৩.শপিং কমপ্লেক্স, মল,মার্কেট কমপ্লেক্স,বিউটি পার্লার, স্পা, সিনেমা হল, বার, রেষ্টুরেন্ট, জিম, স্পোর্টস কমপ্লেক্স, সুইমিং পুল সব বন্ধ থাকবে।

৪. পাইকারী দোকান, পণ্য সরবরাহকারী, হাট ,বাজার কেন্দ্রিক সব্জি, ফল, দুধ, দুগ্ধজাত দ্রব‍্য, রুটি, মাংস, ডিমের দোকান শুধুমাত্র সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে।

৫.মিষ্টি ও মাংসের দোকান শুধুমাত্র খোলা রাখা যাবে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

৬.জুয়েলারি ও কাপড়ের দোকান দুপুর ১২টা বিকেল ৩ টে পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে।

৭.ওষুধের দোকান খোলা রাখা যাবে ওয়ারকিং আওয়ারস্ এর মধ্যে।
৮.পার্ক, চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকবে।

৯.লোকাল ট্রেন, মেট্রো রেল,স্টেট বাস ,বেসরকারি, সরকারি বাস বন্ধ থাকবে,তবে জরুরি
পরিষেবার প্রয়োজনে বাস সার্ভিস দিতে হবে।
১০.হসপিটাল,নার্সিং হোম,স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া ছাড়া সাধারণ পরিবহনের ক্ষেত্রে ট‍্যাক্সি, অটো সব বন্ধ থাকবে।
১১.জরুরি পরিষেবা ছাড়া ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকবে।
১২.প্রশাসনিক, শিক্ষা, রাজনৈতিক, আনন্দ অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত হওয়া যাবে না।
১৩.কোভিড ও স্বাস্থ্য পরিষেবা ছাড়া শিল্প কারখানা ও উৎপাদন সংস্থা বন্ধ রাখতে হবে।
১৪.চা বাগানের শ্রমে ৫০% এর বেশী প্রতি শিফ্টে উপস্থিতি রাখা যাবে না।
১৫.জুট মিলে ৩০%এর বেশি প্রতি শিফটে উপস্থিতি রাখা যাবে না।
১৬. ই-কমার্স ও হোম ডেলিভারি চালু রাখায় কোন
বিধিনিষেধ থাকছে না।
১৭.ব‍্যাঙ্ক,এটিএম ও আর্থিক সংস্থা খোলা থাকবে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত।
১৮.পেট্রোল পাম্প,গ‍্যাস সার্ভিস সংস্থা,অটো রিপেয়ার এর দোকান খোলা রাখা যাবে।
১৯.প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, সোস‍্যাল মিডিয়া, এম এস ও ও কেবল পরিষেবা চালু রাখতে হবে।
২০. সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড এর অধীন আন্ডার টেকিং সংস্থা খোলা থাকবে
২১.বিবাহ অনুষ্ঠানে একসাথে ৫০ এর বেশী উপস্থিত হওয়া যাবে না।তবে ফিজিক্যাল ডিসট‍্যান্স সেক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক
২২. শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে ২০জনের বেশী জমায়েতে হতে পারবে না,সেক্ষেত্রেও ফিজিক্যাল ডিসট‍্যান্স বাধ্যতামূলক।
২৩.সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত জরুরি পরিষেবা ছাড়া বাইরের কাজে মানুষের চলাচল,যানবাহন চলাচল কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ।
এছাড়া রাত ৯ টে থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত নৈশ কারফিউ কঠোরভাবে বলবৎ থাকবে। নির্দেশিকার প্রতিটি ক্ষেত্রে ফিজিক্যাল ডিসট‍্যান্স ও কোভিড বিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে না মানলে ২০০৫ এর মহামারী প্রতিরোধ আইনে আইনভঙ্গকারীদের গ্রেফতার করা সহ কঠিন শাস্তি প্রদান করা হবে।

ভয়ংকর এই করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে আগামীকাল থেকে চালু হয়ে ৩০মে পর্যন্ত বলবৎ রাখার জন‍্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই আদেশনামা যদি কঠোরভাবে রূপায়িত করতে প্রশাসন তৎপর হয় তবে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকবে ও করোনা সংক্রমনের বিস্তারের ক্ষেত্রে মানুষ অনেকখানি নিষ্কৃতি পাবে এবং সাধারণ মানুষের সাময়িক কিছুটা আর্থিক কষ্ট হলেও মৃত্যু মিছিল ও বুকফাটা হাহাকার ও কান্না কিছুটা কমবে বলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার থেকে শুরু করে দলমত নির্বিশেষে শিক্ষক, অধ্যাপক, বুদ্ধিজীবী সহ আমজনতা মনে করছে।

সাথে সাথে সরকার এই কোভিড আবহের মধ্যেই এবছর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার দিনক্ষণ ঘোষণা করে দিল। এ বছরে ১৫ জুন থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। গত বছর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের অধিকাংশ পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পর লকডাউন শুরু হয়েছিল। করোনা পরিস্থিতিতে উচ্চমাধ্যমিকের তিনটি পরীক্ষা গতবছর বাতিল করা হয়েছিল। ১ জুন থেকে চলতি বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হয়ে ১০ জুন ঐচ্ছিক বিষয় হয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল। করোনা ও ভোটের কারণে চলতি বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষা বেশ খানিকটা পিছিয়ে ১ জুন শুরুর কথা গত বছরের ২৬ ডিসেম্বরই পর্ষদ সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে একথা জানিয়েছিলেন। ‘পড়ুয়াদের জীবনের থেকে পরীক্ষা বড় নয়’, একথা আগেই জানিয়েছিলেন উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি মহুয়া দাশ।কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে কোভিড বিধিনিষেধ বাড়লো ১৫জুন পর্যন্ত, ঘোষিত হলো মাধ‍্যমিক ও উচ্চ মাধ‍্যমিকের দিনক্ষণ‌। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হবে জুলাইয়ের শেষে এবং মাধ্যমিক পরীক্ষা হবে আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে হবে বলে জানা গেছে। পরীক্ষার এই ঘোষণায় শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞ মহলে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।তারা মনে করেন শিক্ষক ও ছাত্রদের টিকাকরণ সম্পন্ন না করে কিভাবে এই হটকারী সিদ্ধান্ত ঘোষণা হতে পারে।এত ছাত্র ও শিক্ষকদের মধ্যে সংক্রমণ ভয়ংকর ভাবে বাড়তে পারে বলে বেশকিছু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, শিক্ষক ও শিক্ষাবিদ মনে করছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে