সুবীর মণ্ডল, বাঁকুড়া জেলা প্রতিনিধি :
কোভিডে স্ত্রীকে হারিয়েও মহামারী চিকিৎসায় অবিচল ৯১ বছর বয়সী নৈহাটির “অগ্নিশ্বর”।
বাড়িটা নৈহাটির তালপুকুরে রাস্তার ধারে। আর চেম্বার গ্রিলের গেট দিয়ে ঢুকেই ডানদিকে। শুধু কাগজের প্রেসক্রিপশন কিংবা গলায় ঝোলানো স্টেথোস্কোপ নয়। তাঁর কাছে এর বাইরেও চিকিৎসক-রোগীর মধ্যে একটা ‘অদৃশ্য আত্মীয়তা’ রয়েছে। তাই প্রতিদিন তাঁর কাছেই ছুটে যাচ্ছেন সকলে—‘ডাক্তারবাবু, জ্বর কমছে না, করোনা রিপোর্ট পজিটিভ’! কেউ কেউ অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়েই সোজা বাড়িতে এসে হাজির… ‘আমাকে বাঁচান ডাক্তারবাবু’! করোনা জেনেও তিনি ফেরাচ্ছেন না কাউকে। উল্টে পরমযত্নে রোগীদের দেখছেন। করোনা পরিস্থিতিতে যখন বহু চিকিৎসকের চেম্বার বন্ধ, শ্বাসকষ্টের রোগীকে পর্যন্ত ফিরিয়ে দিচ্ছে হাসপাতাল… তখন মহামারীর চিকিৎসায় অবিচল নৈহাটির ডাঃ শ্যামলচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। বয়স? ৯১ বছর। করোনা কেড়ে নিয়েছে স্ত্রীকেও। তাও তিনি থামেননি। মানুষের জন্য। তিনি যেন সিনেমার উত্তম কুমার। বনফুলের ‘অগ্নীশ্বর’।
কলকাতার ইউনিভার্সিটি কলেজ অব মেডিসিনের অধ্যাপক ছিলেন। কানাডা, চীন, সোভিয়েত ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া সহ একাধিক দেশের কনফারেন্সে ভারতের হয়ে তিনি প্রতিনিধিত্ব করেছেন। একাধিক গবেষণাপত্র রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের দায়িত্বেও তিনি। নৈহাটি শহরে ডাক্তারবাবুকে একডাকে সকলে চেনেন। কারণ, জীবনের ব্রত তাঁর একটাই—চিকিৎসা। এই কোভিডকালেও। গত বছর করোনা শুরুর সময় এলাকার অনেকেই চেম্বার বন্ধ করে দিয়েছিলেন। পরিবারও তাঁকে বলেছিল, ‘বয়স হয়েছে। বুকে পেসমেকার। এখন আর ঝুঁকি নিও না’। ডাক্তারবাবু শোনেননি। জানিয়ে দিয়েছিলেন, আমৃত্যু তিনি রোগী দেখবেন। করোনা পর্বের দেড় বছর… তাও ডাঃ শ্যামলচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির চেম্বার খোলা প্রতিদিন। বলছিলেন, ‘ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় কলকাতায় হো চি মিনকে নিয়ে এলেন। আমাদের সঙ্গেও দেখা করেছিলেন উনি। একটা অন্য অনুভূতি হয়েছিল। ভেবেছিলাম, ভিয়েতনামের যুদ্ধে চলে যাব। কিন্তু পেশাটা ছাড়তে পারলাম না। ওটা আর পেশা নেই… নেশা হয়ে গিয়েছে।’
তাই তিনি ‘অগ্নীশ্বর’।