মনজু হোসেন, ব্যুরো প্রধান, পঞ্চগড়:
পুব আকাশে রক্তিম আভা ছড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পৃথিবী সূর্যের আলোয় আলোকিত হবে। চারদিক পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত। এমনই পরিবেশে আনজুয়ারা বাড়িতে ঢেঁকিতে ধান ছাঁটে জীবন যুদ্ধে। পাখির কিচিরমিচির ডাকের সঙ্গে ঢেঁকির ধুপধাপ শব্দ ভেসে বেড়ায় আনজুয়ারা আঙিনায়।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার ১নং অমরখানা ইউনিয়নের মধুপাড়া গ্রামের বাসিন্দা স্বামী সন্তান পরিত্যক্তা আনজুয়ারা, বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যে সুখের সংসারে আসে ১ ছেলে সন্তান। এরি মাঝে জন্ম নেয়া ৯ মাসের সেই নবজাতক শিশুসহ আনজুয়ারাকে ছেড়ে নতুন বিয়ে করে অন্যত্র পালিয়ে যায় স্বামী ইব্রাহিম। এর পর থেকে জীবন যুদ্ধে কামলা খেটে সংসারের হাল ধরেন আনজুয়ারা। থাকার জায়গা না থাকায় কামলায় খেটে প্রায় ১০-১৫ বছর আগে নিজে ৮ ডিসিমল জমি ক্রয় করে গড়ে তুলেন নিজের ছোট এক বাড়ি। তবে জমি ক্রয় করে কোন মতে বাড়ি তৈরি করলেও বসবাসে প্রায় অযোগ্য সে ঘর।অন্যদিকে একাকিত্ব জীবনে পেটের ক্ষুধা নিবারণে স্থায়ী কর্ম না পেয়ে গত ৩ বছর আগে সেই ছোট বাড়িতে গড়ে তুলেছেন ঐতিহ্যবাহী এক ঢেঁকি। এই ঢেঁকিতে আনজুয়ারার জীবন বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। তবে আনজুয়ারার অভিযোগ চেয়ারম্যান মেম্বারকে একাধীকবার বলার পরেও কোন সাহায্য পাননি তিনি সরেজমিনে মধুপাড়া গ্রামে আনজুয়ারার বাড়ি ঘুরে দেখা গেছে, জীবন যুদ্ধে তার বসবাস ও চলাচলের অবস্থা। অভাব হলেও স্বামী ও ছেলে হারা (ছেড়ে চলে যাওয়া) আনজুয়ারা ৮ ডিসিমল জমির উপর কোন মত এলোমেলো ভাবে পলিথিন, ছেড়া বস্তা, বাশের বেড়া ও কিছু টিন দিয়ে গড়ে তুলেছেন নিজ প্রাসাদ। জীবনের ঘানি টানতে বাড়ির পেছনে টিউবঅয়েল পাড়ের পাশে গড়ে তুলেছেন চালের গুড়ো করা ঐতিয্যবাহী এক ঢেঁকি। এর মাঝে কথা হয় আনজুয়ারার সাথে।
আনজুয়ারা বলেন, স্বামী- সন্তান অন্যত্র চলে যাওয়ার পর জীবন বাঁচাতে নেমে পড়ি কর্ম খুজতে। এর মাঝে একসময় পাথর ক্রাশিং মেশিনে কাজ করলেও এর পাশাপাশি স্থানীয় লোকজন সহ বিভিন্ন লোকের বাড়িতে কামলা দিছি। বর্তমানেও কামলা দিচ্ছি। তবে কামলার মাঝে স্থায়ী ভাবে ছোট একটি ঢেঁকি বসিয়ে একায় কাজ করি। চাল ক্রয় করে ঢেঁকিতে দিনে ৪-৫ কেজি করে গুড়ো করি। আর এর পর সেই গুড়োয় ভাকা (ভাপা পিঠা) তৈরি করে বিভিন্ন গ্রামে বিক্রি করে ২ থেকে ৩’শ টাকা আয় হয়। আর এ টাকায় নিজের চাহিদা মিটানো সহ বাড়ির কাজ করছি।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে কাজ করতে পারছি। যখন অসুস্থ্য হবো তখন আমার কি হবে। আমি সাহায্য পাওয়ার আশায় অনেকবার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কাছে গেছি। কিন্তু কেও আমার দিকে দেখছে না। প্রধানমন্ত্রী তো গরিবদের বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করছে, আমি প্রশাসনসহ প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি আমাক কিছুটা সহায়তা করেন।
এদিকে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় মানবেতর ভাবে জীবন যাপন করছেন আনজুয়ারা। কাজে না গেলে কোন দিন বাড়ির চুলাও জ্বালাতে পারে না সে। বর্তমানে তার একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে ঢেঁকি। এই ঢেঁকিতে গুড়ো করে তা পিঠা তৈরি করে বিক্রি করে জীবন অতিবাহীত করছে।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফ হোসেন জানান, আনজুয়ারার বাড়িতে গিয়ে তাকে কম্বল দিয়েছি। আগামী এক মাসের মধ্যে তাকে নতুন ঘর দেওয়া হবে। আশা কনরছি আগামী ৭ দিনের মধ্যে ঘরের কাজ শুরু হবে। ভাতার আওতায় যেটা আসে সেটা আমরা দিবো এবং সঙ্গে আমি নিজে আর্থিকভাবে সহায়তা করবো যাতে তিনি ভালোভাবে থাকতে পারেন।