করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নীতি গ্রহণ করেছে রাজধানীর বিভিন্ন সুপারশপ। বাংলাদেশ সুপারশপ ওনার্স এসোসিয়েশন (বিএসওএ) এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নীতি গ্রহণ করেছে সরকার। সুতরাং, দেশের কোন সুপার শপে মাস্ক ছাড়া কোন ক্রেতা সেবা পাবেন না। জনসাধারণকে মাস্ক ব্যবহারের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই বলেও উল্লেখ করেন তারা।
সুপার চেইনশপ ইউনিমার্টের অ্যাসিসটেন্ট জেনারেল ম্যানেজার আতাউল্লাহ রিপণ বলেন, ‘আমাদের শপিংমলে দেশী-বিদেশী ক্রেতারা আসেন বেশি। আমাদের এখানে যারা আসছে তাদেরকে মুখে মাস্ক পড়া নিশ্চিত করছি। শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করছি এবং কাষ্টমার যে ট্রলি ব্যবহার করবেন সেই ট্রলিগুলোর হ্যান্ডেলে ডিভাইস দিয়ে দিয়েছি। তা থেকেই তার হাত জীবানুমুক্ত হয়ে যাচ্ছে। তাই স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে যেন কোন ক্রেতা না পড়েন সেজন্য কঠোরভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে।’
এছাড়াও, আমেরিকার সার্টিফাইড কোম্পানীর সনদপ্রাপ্ত ‘অর্কিড’ নামের একটি কোম্পানীর মাধ্যমে একদিন পর পর পুরো ইউনিমার্টকে জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ আটকাতে এই সপ্তাহে অভ্যন্তরীণ একটি সভার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রতিদিন এইসব আউটলেটগলো জীবানুমুক্ত করা হবে। এছাড়া, ক্রেতার স্বার্থে কোন আইডিয়া এলে তাও বাস্তবায়ন করা হবে।’
আতাউল্লাহ বলেন, ‘করোনার এই সময়ে কাস্টমার সার্ভিসের অংশ হিসেবে সেবার মান বাড়াতে তাদেরকে কোন সময়ে তারা এলে আরো নিবিড়ভাবে কেনাকাটা করতে পারবেন পরামর্শ দিয়ে থাকি। কখনো কখনো আগত কাস্টমারদেরকে হ্যান্ডস্যানিটাইজ করার জন্য অনুরোধ করি এবং নিশ্চিত হতে চাই। এছাড়া, কাউন্টারের সামনের পয়েন্টে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বোতলও রাখা হয়েছে তাদের সুবিধার্থে।’
সুপার চেইনশপ স্বপ্নে’র অপারেশন্স ডিরেক্টার আবু নাসের বলেন, ‘এই সময়ে মানুষের আতঙ্কিত না হয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। গ্রাহককে সুস্থ রাখতে স্বপ্ন যেভাবে নিরাপদ খাদ্যপণ্য সরবরাহ করছে, একইভাবে ক্রেতাদের জীবাণুমুক্ত রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি আমরা। আমাদের আউটলেটগুলোকে জীবাণুমুক্ত রাখতে পরিচ্ছন্নতার ওপর ব্যাপক গুরুত্ব দিচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘একজন ক্রেতার প্রবেশের মুখে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করাসহ হ্যান্ড স্যানিটাইজ করা, শরীরের তাপমাত্রা যাচাই করা, একে অপরের থেকে তিন ফুট দূরত্বে থাকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এবং সুপারশপের ভেতরে তা মার্কিং করেও দেয়া হয়েছে। এমনকি বিল দেওয়ার সময়েও যেন দূরত্ব মানা হয়, সেজন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। কর্মীরাও নিজেকে জীবানুমুক্ত রাখতে শুরু থেকেই পরিচ্ছন্নতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।’
স্বপ্নে’র গুলশান-২ শাখার ম্যানেজার মো. সায়মন সরকার বলেন, ‘সারাদেশে প্রায় দেড় শতাধিক স্বপ্নের আউটলেট রয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীতে রয়েছে ১২০টি। এর প্রত্যেকটিতে সরকার থেকে যে ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা যথাযথভাবে মেনে চলা হচ্ছে। প্রতিটি আউটলেটের প্রবেশপথে দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য করোনাভাইরাসের সচেতনতায় ছবি সংবলিত পোস্টার টানানো হয়েছে। লেখা রয়েছে ‘ওয়্যার মাস্ক, গেট সার্ভিস’।’
সুপারশপ ‘লিটল ইন্ডিয়া’র অ্যাসিসটেন্ট ম্যানেজার তানজীদ রহমান বলেন, ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস, নো মাস্ক, নো এন্ট্রি এই শ্লোগানকে সামনে রেখেই আমরা এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ছি। এই মহামারির প্রকোপ ঠেকাতে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। শুধু ক্রেতারাই নয়, এই আউটলেটের প্রত্যেক কর্মীকেও এটা নিশ্চিত করতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের আতংকের কারণে আগের চেয়ে ক্রেতা সমাগম কমেছে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ আসেন না। অনেকে সরাসরি এসে পণ্য ক্রয় করতে পছন্দও করেন না। তারা হোম ডেলিভারি ও ই-কমার্সের মাধ্যমেই কেনাকাটা সারছেন।’
তিনি বলেন, ‘লক ডাউনের সময়ে প্রায় ৭৫ শতাংশ ক্রেতা তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এবং ই-কমার্সের মাধ্যমে প্রায় ১৫ শতাংশ ক্রেতা প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করেছেন। করোনাভাইরাস সংক্রামণের আগে আড়াই’শ থেকে তিনশ’ জন ক্রেতা আসতেন। এই ভাইরাসের কারণে বর্তমানে ১২০ থেকে ১৩০ জন ক্রেতা আসেন।’
শপিংমল আগোরা’তে কেনাকাটা করতে এসেছেন গুলশানের বাসিন্দা শম্পা। তিনি বলেন, এখন জনগণ অনেক সচেতন। তারা বাইরে মুখে মাস্ক না পরলেও শপিংমলের সামনে এসে বাঁধার মুখে দাঁড়ান। কেউ অসচেতন হলেও তাকে এখানে এসে মাস্ক পরতে হয় এবং হাত স্যানিটাইজ করতে হয়। এতে ওই ক্রেতার মধ্যেও করোনা ভাইরাস সংক্রামণ সম্পর্কেও সচেতনতা তৈরি হয়।
বাংলাদেশ সুপার শপ ওনার্স এসোসিয়েশনের (বিএসওএ) সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন জানান, করোনাভাইরাস প্রার্দুভাবে, সুপার মার্কেটগুলো কখনোই বন্ধ হয়নি। বরং খোলা থাকার কারণে ক্রেতা সাধারণ সুফল পেয়েছে। করোনাকালীন এই সময়ে ক্রেতাদের নিরাপত্তায় সেবার মান আরো বাড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য তো মজুদ করা সম্ভব না, কোভিডের প্রথম দিকে সুপারশপের মালিকরা ক্রেতার পণ্য পেতে যেন ভোগান্তি না হয় সে কারণে নিজ নিজ উদ্যোগে ভতুর্কী দিয়েও পণ্য সরবারহ অব্যাহত রেখেছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই মহামারির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবোই। বছরের শুরুতে মার্চ-এপ্রিল মাসে যেভাবে ক্রেতাদের সেবা দেয়া হয়েছে সেভাবেই এই সময়ের ঝুঁকি এড়াতে আরো স্বাস্থ্য নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাগুলো জোরদার করা হবে।’
সূত্র : বাসস