মনজু হোসেন,ব্যুরো প্রধান পঞ্চগড়:
সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে চলছে পরিবেশ বিধ্বংসী ড্রেজার ব্যবহার করে বালু উত্তোলন।
বালু মহালের নামে একশ্রেনীর অসৎ ব্যবসায়ী যুক্ত হয়েছে এ অবৈধ কাজে। প্রশাসনের নজরদারীর অভাবে তারা ড্রেজার ব্যবহার করে চলছে। স্থানীয়দের অভিযোগ পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ না করলে কোনভাবেই ড্রেজার ব্যবহার সম্ভব নয়। অথচ বালুমহাল ইজারা নীতিমালায় স্পষ্ট করেই ড্রেজার ব্যাবহার করে ভূগর্ভস্ত বালু উত্তোল নিষিদ্ধের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, দেবীগঞ্জের করতোয়া সেতু থেকে দক্ষিণে ময়নামতি পর্যন্ত তিনটি পয়েন্টে, সোনাপোতা এলাকার কাউয়াখালী ঘাট, দেবীডুবা এলাকার তেলিপাড়া ঘাটে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
সেতুর এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ হলেও দেবীগঞ্জে দেখা মিলছে ভিন্ন দৃশ্যের। করতোয়া সেতুর দক্ষিণ দিকে এক কিলোমিটারের মধ্যে অবৈধ ড্রেজারে চলছে বালু উত্তোলন। সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নাকের ডগায় ড্রেজার ব্যবহার করে চলছে এই অবৈধ কার্যক্রম।
অপরদিকে অবৈধ ট্রাক্টরের মাধ্যমে চলছে বালু পরিবহন। অতিরিক্ত চাপের কারণে পাকা সড়কের অনেক জায়গায় দেখা দিয়েছে ফাটল। আর এতে গ্রামীণ রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। করতোয়া সেতুর পশ্চিম দিকের পার্শ্ব সড়কটি দিয়ে দেবীডুবার একাংশ, সুন্দরদীঘি, চেংঠি হাজরাডাঙ্গা ও দন্ডপাল ইউনিয়নের সাথে দেবীগঞ্জের যোগাযোগের একমাত্র সড়কটির এখন বেহাল দশা। ট্রাক্টরের মাধ্যমে বালু ও ইট পরিবহনে সড়কটি খানাখন্দে ভরে গেছে। বর্তমানে এপথে সব যানবাহনই ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে। সেতু সংলগ্ন সড়কের এই অংশে প্রায়শই ঘটছে দুর্ঘটনা।
এছাড়া ড্রেজারে বালু উত্তোলনের কারণে দেবীগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধটিও হুমকির মুখে পড়েছে। বিরূপ প্রভাব পড়ছে ময়নামতি চরেও। ইতিমধ্যে ময়নামতির উল্লেখযোগ্য অংশ নদী ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে।
তেলিপাড়া ঘাটের ইজারাদার আশরাফুল আলম এমু বলেন, আমি তিন কিলোমিটার নদী খননের দায়িত্ব পেয়েছি। এরমধ্যে তেলিপাড়া ঘাটও পড়েছে।
দেবীগঞ্জ ঘাটের ঠিকাদার রফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি। দেবীডুবা ঘাটের ঠিকাদার মতিয়ার রহমানের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রত্যয় হাসানকে মুঠোফোনে কল করলে তিনি মিটিংয়ে আছে জানান এবং পরে কল করতে বলেন।
ড্রেজার বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থা না নেয়ার কারণ জানতে চাইলে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, আপনি ইউএনওকে লিখিত অভিযোগ দিন। এর পর ব্যবস্থা না নিলে আমি বিষয়টি দেখব।
পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, নদী ইজারার দায়িত্বে রয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসন চাইলে আমার দফতর থেকে পুরোপুরি সহযোগিতা করা হবে। তারপরও আমি খোঁজ খবর নিব।
রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আবদুল ওয়াহাব ভূঞা বলেন, ড্রেজার বন্ধের বিষয়টি ইউএনও ও ডিসির অধীনে। আপনি তাদের সাথে যোগাযোগ করুন। স্থানীয় প্রশাসন জেনেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলার পর তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোছান্না গালিবের মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) পঞ্চগড় জেলা কমিটির সভাপতি এ কে এম আনোয়ারুল খায়ের বলেন, পরিবেশের ক্ষতি করে এমন যে কোন কাজ বন্ধ হওয়া উচিত। ড্রেজার দিয়ে বালু ও পাথর উত্তোলনে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ যেমন ঠিক থাকছে না তেমনি ভূমি ধসের আশাঙ্কাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রশাসন শক্ত হাতে দমন করলে ড্রেজার অবশ্যই বন্ধ হবে।