ক্রীড়া ডেস্ক :
ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ রাঙানোর স্বপ্ন ছিল তার। সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল। শেষ ষোলোর নক আউটে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেল জার্মানরা।
আর তাতেই ইতি ঘটলো ১৫ বছরের এক অধ্যায়ের। নির্বাসনে চলে যাচ্ছেন জার্মানদের বিশ্বকাপ জয়ী কোচ জোয়াকিম লো।
চুক্তির মেয়াদ ছিল আগামী বছরের বিশ্বকাপ পর্যন্ত। কিন্তু ওই পর্যন্ত যেতে আর ইচ্ছে হলো না। গত মার্চেই সরে দাঁড়ানোর অগ্রিম ঘোষণা দেন জার্মানির প্রধান কোচ জোয়াকিম লো। তবে বিদায়টা সুখকর হলো না। ইংল্যান্ডের কাছে ২-০ গোলে পরাজয়ের লজ্জা নিয়েই চলে যেতে হলো তাঁকে!
বিষাদময় বিদায়ে লো’র জায়গায় আসছেন বায়ার্ন মিউনিখকে ‘ত্রিমুকুট’ জেতানো প্রাক্তন কোচ হ্যান্সি ফ্লিক। নতুন কোচের অধীনে জার্মানরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কিনা, জবাবটা মিলবে ভবিষ্যতে।
তবে জোয়াকিম লো’র দেড় দশকের জার্মান অধ্যায় ছিল উত্থান-পতনে ঠাসা। তার অধীনেই ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিতেছে জার্মানি। স্বপ্নের সোনালী ট্রফি জয়ের পর অবসরে চলে যান ফিলিপ লাম, বাস্তেইন শোয়েনস্টাইগার, মিরোস্লাভ ক্লোসার মতো তারকারা। তাদের শূন্যস্থান পূরণে গেল কয়েক বছর নিজেদের হারিয়ে খুঁজেছে জার্মানরা। যার দরুন পরের বিশ্বকাপেই বিদায় নিতে হয়েছে গ্রুপপর্ব থেকেই।
এর আগে-পরে দুটি ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপেও ব্যর্থ হয়েছে জার্মানি। কিছু করতে পারেনি ইউরোপের নতুন টুর্নামেন্ট উয়েফা নেশনস লিগেও। এ সময়ে সবচেয়ে বিব্রতকর হার সঙ্গী হয়েছে তাদের। গত নভেম্বরে স্পেনের কাছে হারতে হয়েছে ৬-০ গোলে। দুঃসময় চলাকালীন জার্মানরা হেরেছে উত্তর মেসিডোনিয়ার মতো দলের কাছেও। সবমিলিয়ে প্রধান কোচের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছিলেন অনেকেই।
সবকিছুর জবাব হতে পারতো ইউরোর ট্রফি। কিন্তু এখানেও বিধি বাম! নক আউট পর্বের শুরুতেই ছিটকে গেল জার্মানি। ডেথগ্রুপ খ্যাত ‘এফ’ গ্রুপের বাধা ডিঙাতেও যথেষ্ঠ বেগ পেতে হয়েছে। ঢিলেঢালা রক্ষণই তাদের ব্যর্থতার মূল কারণ। খুব স্বাভাবিকভাবেই লো’কে নিয়ে সমালোচনা তার অতিমাত্রিক রক্ষণাত্মক কৌশলের কারণেই।
গত কয়েক বছর ধরে নিজেদের হারিয়ে খুঁজতে থাকা জার্মান দলে অভিজ্ঞ কয়েকজন খেলোয়াড়কে ইউরোর জন্য ডেকে পাঠান কোচ। সঙ্গে ছিল উঠতি প্রতিভা জিন্যাব্রি, মুসিয়ালা, হাভার্টজ, ওয়ার্নাররা। মধ্য মাঠে ছিল টনি ক্রুসের মতো বিশ্বমানের প্লে-মেকার। কিন্তু কোনোকিছুতেই উঠে দাঁড়াতে পারল না জার্মানরা। গত বিশ্বকাপের গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নেওয়া দলটা ইউরোতে থামল শেষ ষোলোতেই।
এতো দ্রুত টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাওয়ায় ভক্তদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন লো। একইসঙ্গে দলের পুরো ব্যর্থতার দায় নিলেন এককভাবে। গত বুধবার জার্মানির কোচ হিসেবে সম্ভাব্য শেষ সংবাদ সম্মেলনে লো বলেছেন, ‘কোন পরিকল্পনাটি কাজে লেগেছে, কোনটি লাগেনি- এসব নিয়ে কথা বলার সময় আসেনি। তবে এই চার সপ্তাহ আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।’
লো আরও বলেন, ‘কোথায় আমাদের ভুল ছিল, কী করলে আরও ভালো হতো- এসব নিয়ে বিশ্লেষণ করার কোনো মানে এখন আমার কাছে নেই। মঙ্গলবারের হার এবং টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে দলের বিদায় নেওয়া- সব দায় আমি নিচ্ছি। ভক্তদের কাছে ক্ষমা চাইছি। তাদের সন্তুষ্ট করতে পারিনি। আমি চলে যাচ্ছি। জার্মানি ফুটবল ও ফ্লিকের (হ্যান্সি ফ্লিক) জন্য শুভকামনা রইল।’