আশরাফুল ইসলাম সুমন, সিংড়া,নাটোর:
নিজ পেশার বাইরে অন্য পেশায় যেতে খুব কম মানুষকেই এদেশে দেখা যায়। তেমনই একজন মানুষ মাধব চন্দ্র দাস।
পেশায় একজন নরসুন্দর তবে তার নেশা হলো ইউটিউব। ইউটিউবে ‘দাস মিডিয়া (Das Media) https://bit.ly/2T2UUFg নামে চ্যানেলে বিভিন্ন বাংলা ফানি ভিডিও ও শর্টফিল্ম করে থাকেন তিনি।
ইউটিউবার মানেই মজা করে কোনো একটি টপিক নিয়ে কথা বলে মানুষকে হাসানোর চেষ্টা করা বা অন্যদের সমালোচনা করার চেষ্টা করা। এই হিউমার ইউটিউবার ছাড়াও আরো কিছু ভিন্নধর্মী ইউটিউবারদের মধ্যে অন্যতম একজন মাধব চন্দ্র দাসের ইউটিউব চ্যানেল ‘দাস মিডিয়া’ বর্তমানে দাস মিডিয়ার সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। প্রতি মাসে দুই লাখের ও বেশি ভিউ হয় মাধব চন্দ্র দাসের চ্যানেলে। ইতিমধ্যে এই ইউটিউব তারকাকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ পরিবেশন করেছে।
প্রত্যন্ত গ্রামের এক সাধারণ ছেলে যখন ইউটিউব প্ল্যাটফর্মে খ্যাতি পান আর ১০০ টির মতো শর্টফিল্ম তৈরি ও অভিনয়ও করে ফেলেন তখন অবাক হতেই হয় ! বলছি নাটোরের সিংড়া উপজেলার বিদলহর গ্রামের মাধব চন্দ্র দাসের কথা। তিন ভাইয়ের মধ্যে মাধব সবার ছোট। বর্তমানে বসবাস করেন সিংড়া পৌরশহরে সরকারপাড়া ছোট্ট একটি মহল্লায়। মাধব চন্দ্র এখন ‘দাস মিডিয়া’ (Das Media) ইউটিউব চ্যানেলের তারকা। এরই মধ্যে চ্যানেলটির সাবস্ক্রাইবার দুই লাখ ছাড়িয়েছে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দিন দিন বাড়ছে সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা।
মাধব চন্দ্র দাস তিনি পেশায় একজন নরসুন্দর। ২০১৭ সালে গ্রামের বিভিন্ন দৃশ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরার জন্য তিনি ‘দাস মিডিয়া’ ইউটিউব চ্যানেলটি খোলেন। ২০১৭ সালে ‘দেহ’ নামে শর্টফিল্মে একটি পর্বে অতিথিশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন সেই ভিডিও দেখে লাখ লাখ মানুষ। জনপ্রিয়তা পেতে থাকেন এই মাধব চন্দ্র দাস। তবে মাধব চন্দ্র দাস শুধু ইউটিউবেই জনপ্রিয় নন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা প্রায় বিশ হাজার। এ ছাড়া সম্প্রতি ছোট পর্দায়ও অভিনয় শুরু করেছেন।
২০০৭ সালে নাটোর জেলা শিল্পকলা একাডেমীর মাধ্যমে বিটিভি চ্যানেলে পাঁচু ঘটক নাটিকাতে বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেন। ২০০৫ সালে এটিএন তারকা তারকাদের তারকা শিরোনামে প্রতিযোগিতা অংশ নিয়ে চল্লিশ হাজার প্রতিযোগিতার মাঝে প্রথম রাউন্ড উত্তীর্ণ হন। ২০১২ সালে সুপার হিরো সুপার হিরোইন শিরোনামে এনটিভির প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে অংশ নেন মাধব চন্দ্র দাস। সেখানেও অভিনয় দক্ষতা দেখিয়ে সুনাম অর্জন করেন প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলামের কাছে । এমনিভাবে দেশের অনেক বরেণ্য মানুষেরই সান্নিধ্য পেয়েছেন মাধব চন্দ্র দাস।
দুই দিন আগেও যে মাধব চন্দ্র দাস তাঁর গ্রামের বাহিরে যাননি, তিনি এখন হয়ে উঠেছেন দেশখ্যাত তারকা। অথচ ইউটিউব চ্যানেলে কাজ করার আগে ইউটিউব কী সে সম্পর্কে নিজের কোনো ধারণাই ছিল না মাধবের। পড়ালেখায় প্রাথমিকের গণ্ডিই পেরোতে পারেননি। বড় ভাই রামপ্রসাদ জানান, আমার ছোট ভাই মাধব চন্দ্র দারুণ অভিনয় করেন। ক্যামেরার সামনে তাঁর কোনো ভয়ডর কাজ করে না। তাঁর অভিনয় দেখলে মনে হয় এটি যেন তাঁর বাস্তবজীবনেরই কোনো দৃশ্য। তবে তিনি পড়াশোনা অল্প জানলেও নিজেই চিত্রনাট্যে লিখতে পারেন এবং তা সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারেন ক্যামেরার সামনে।
নিজের এলাকায় ঘুরতে আসা পর্যটক ও ভক্তদের সঙ্গে ছবি তুলে বেশ আনন্দ পান মাধব চন্দ্র দাস। বিজ্ঞাপন থেকে চ্যানেলটির যে আয় হয় এই অর্থ দিয়ে নিজের কিছু ঋণ শোধ করছেন।
তাঁর স্বপ্ন একদিন ইউটিউব থেকে পাওয়া অর্থ দিয়েই নিজ গ্রামের বাড়িতে একটি মন্দির নির্মানসহ এলাকার দরিদ্র অসহায় মানুষের জন্য কিছু করতে চায়।