ড. মহীতোষ গায়েন, কলকাতা ব্যুরো প্রধান, দৈনিক সুপ্রভাত উত্তরবঙ্গ ,১বৈশাখ,১৪২৮
———————-
নববর্ষে কলকাতা সহ সমস্ত পশ্চিমবঙ্গের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা ও মাঙ্গলিক দিশাকে রক্তচক্ষু দেখিয়ে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ওয়েব জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। সারা ভারতবর্ষে ১দিনেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সর্বকালীন রেকর্ড করে ১লক্ষ ৮৪ হাজার অতিক্রম করেছে। পশ্চিমবঙ্গেও গত ২৪ ঘন্টায় করনো আক্রান্তের সংখ্যা ৫৮৯২ যা সর্বকালীন রেকর্ড।শুধুমাত্র কলকাতাতেই ১ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ১৬০১জন,উত্তর ২৪পরগনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১২৭৭জন। গত ২৪ ঘন্টায় সারা দেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১১২৭ জন, এই রাজ্যে মৃত্যু
হয়েছে ২৪ জন যা পরবর্তীতে মহামারির আকার ধারণ করতে পারে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। যা রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোভিড মোকাবিলার জন্য তাই তৎপর রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর।এজন্য তারা ৪টি জোন বা বিভাগে চিকিৎসক দলকে বিভক্ত করে করোনা মোকাবিলার জন্য বিশেষ সেল গঠন করেছে, যেগুলো হলো – সাগর দত্ত মেডিকেল কলেজ, এম আর বাঙুর, কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও বেলেঘাটা আই ডি হসপিটাল। যেখানে শুধুমাত্র করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করা হবে বলে জানা যায়।
এরই মধ্যে পঞ্চম দফার ভোট আগামী ১৭এপ্রিল। এই ভোট প্রচারকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক পারদ চড় চড় করে বাড়ছে রাজ্যে। তৃণমূল বিজেপি, বামফ্রন্ট, কংগ্রেস, সেকুলার ফ্রন্ট সহ সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতা, কর্মী, সমর্থক করোনা বিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নির্লজ্জ্বভাবে নির্বাচনী প্রচারে লিপ্ত হয়ে করোনা সংক্রমণকে বাড়িয়ে তুলে জনজীবনকে আতঙ্কের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে বলে আমজনতা মনে করছে। সাধারণ মানুষ মনে করছে যে এই ভয়ংকর করোনা আবহে রাজনীতি ও ভোটকে বড় করে না দেখে সমস্ত রাজনৈতিক দল ও দলমত, গোষ্ঠী নির্বিশেষে মানুষের উচিত আগে করোনা থেকে মানুষের জীবনকে নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখা।
ইতোমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্ট করোনার এই ভয়াবহতার কথা মাথায় রেখে নিষেধাজ্ঞা জারি করে জানিয়েছে- কোন প্রার্থী ডোর টু ডোর প্রচারে ৫ জনের বেশী প্রচারে নিয়ে যেতে পারবেন না এবং ৫টির বেশী গাড়ি রোড শোতে ও মিছিলে নিয়ে যাওয়া যাবেনা।
রাজনৈতিক সন্ত্রাস, মারামারি, দাঙ্গা, ভাঙচুর এবং প্রচারের মাঝে মহিলাদের মারধরের অভিযোগ শাসক ও বিরোধী দলের মধ্যে তীব্র আকার ধারণ করেছে বলে তৃণমূল, বিজেপি উভয় দলের নেতৃত্বরা অভিযোগ করেছেন।
আজ ছিল পঞ্চম দফার প্রচারের শেষ দিন। এই শেষ দিনে উত্তর২৪পরগনার বরানগর কেন্দ্রে বিজেপির তারকা প্রার্থী পার্ণো মিত্রের অভিযোগ থেকে জানা যায় তাদের রোড শো চলাকালীন বেশ কিছু তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী বাঁশ, লাঠি, রড নিয়ে তাদের বেধড়ক মেরেছে।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা এবিষয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানা গেছে।
বরানগর থানার আধিকারিকদের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এনেছেন বিজেপির মহিলা প্রার্থী পার্ণো মিত্র।
এ বিষয়ে তৃণমূল সাংসদ অধ্যাপক সৌগত রায় বলেন, এই সময়ে আমাদের প্রগতি মাঠে মিটিং ছিল। এই অভিযোগ অমূলক, বেআইনি বাইক বাহিনীর দাপটে এই ঘটনা, এক্ষেত্রে তাদের কোন দায় নেই।
এদিকে চতুর্থ দফার ভোটে কোচবিহারের শীতলকুচির পাটকিতে গ্রামবাসীদের সঙ্গে লড়াইয়ে সি.এ.পি.এফ-এর গুলিতে ৪ জনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনার দায় নির্বাচন কমিশনের উপর বর্তানোর অভিযোগ এনে এবং তার প্রচারের উপর ২৪ঘন্টা নিষেধাজ্ঞা জারি করার বিরুদ্ধে গতকাল কলকাতার প্রেসক্লাবের নিকটবর্তী গান্ধী মূর্তির পাদদেশে সকাল ১১.৩০ থেকে বিকেল ৩টে পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতিত্ব ও কালা-নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে ধর্ণায় সামিল হন, শাসকদল অনুগামী বুদ্ধিজীবীদের একটা আংশ, অধ্যাপক সমিতি ওয়েবকুপা ও অসংখ্য সাধারণ মানুষ তাতে সামিল হয়।অপরদিকে মাথাভাঙায় চতুর্থ দফার নির্বাচনে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের আক্রমণে রাজবংশী সম্প্রদায়ভুক্ত আনন্দ বর্মণের মৃত্যুতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সমবেদনা জানিয়ে দোষীদের শাস্তির দাবী তো করেননি বরং এ বিষয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি বলে আজ সংবিধানের জনক আম্বেদকরের ১৩০ জন্ম জয়ন্তী পালন অনুষ্ঠানে জে পি নাড্ডা বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে দলিত বিরোধী বলে বিষোদগার করেছেন।
অজ ভয়াবহ এই করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরাল সি.বি.এস ই দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন কমিশনের সিইও রাজ্যে করোনা মোকাবিলাকল্পে আগামী শুক্রবার সর্বদলীয় বৈঠক আহ্বান করেছেন।
রাজনৈতিক সন্ত্রাস মুক্ত নির্বাচন, করোনা মুক্ত আবহ, রুটি রুজির সংস্থান বিভোর এক সুন্দর নববর্ষ পালনের যে স্বপ্ন আমজনতা দেখেছিল তা আর পূরণ হলো কোথায় ? এই আকুতি সমস্ত বঙ্গ তথা ভারতবর্ষের আকাশে বাতাসে প্রবাহিত।