Dhaka ০৪:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
৫০০ টাকায় ১০ এমবিপিএস ইন্টারনেটের ঘোষণা আগামী নির্বাচন হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোত্তম নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা নতুন বাংলাদেশের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে : আলী রীয়াজ ট্রাম্প-জিনপিং তৈরি করবে না, মোদিও ধাক্কা দিয়ে কিছু করতে পারবে না রোববার সারা দেশে মহাসমাবেশের ঘোষণা কারিগরি শিক্ষার্থীদের জুলাই গণঅভ্যুত্থান যাতে ব্যর্থ না হয় : নাহিদ ইসলাম আ.লীগের মিছিল ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশ ইন্টারপোলে শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারির আবেদন বিচার-সংস্কার-গণপরিষদ নির্বাচনের দাবিতে মাঠে নামছে এনসিপি তিন দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন হুনানের গভর্নর

নতুন জীবন : হাবিবুর রহমান

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৪:৩৮:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২০
  • ২৫১ Time View
গল্পঃ নতুন জীবন
কবি হাবিবুর রহমান
বৃষ্টির দিন। মিতালী রনির অপেক্ষায়। ঘর থেকে বাহিরে এসেছে প্রেমের টানে। এখন সন্ধ্যা। বৃষ্টি থামেনি। মিতালী রাস্তার দিকে তাকিয়ে। ভয় হচ্ছে যদি তার বাবা মা এসে যায়। রনির ফোন বন্ধ। মিতালী চিন্তিত। রাত দশটা। অপেক্ষার প্রহর শেষ। রনি আসেনি। মিতালী আর বাড়িতে ফিরতে পারবে না। চারদিকে জানাজানি হয়ে গেছে মিতালী পালিয়েছে। মিতালী এতো রাতে কোথায় যাবে। হঠাৎ তার মাথায় এলো খালার বাড়ি যাবে। সে বাসে উঠল গন্তব্য নন্দীগ্রামের উদ্দেশ্যে। মিতালী জিতু খালার বাসায় পৌছে গেল। গ্রাম্য পরিবেশ। তখন রাত ১১ঃ৩০ মিনিট। তার খালা গেইট খুলে দিল। তারপর মিতালী খেয়ে নিল। জিতু বলল,”কি রে মা এতো রাতে?”
মিতালী বলল,”খালা রাস্তায় বাস নষ্ট হয়ে গেছে। “
জিতু বলল,” সমস্যা নেই,তুই এসেছিস কয়েক মাস এখানেই থাকবি,যেতে দিচ্ছিনা। “
মিতালী রনির কথা আর মনে রাখবেনা। যার জন্য বাড়ি ছাড়া সে তার ডাকে সাড়া দেয়নি। তার কথা মনে করা মানে বোকামী।
মিতালী অনেক সুন্দরী। যে কেউ তার রূপে পাগল হতে পারে।
কাশেম মিতালীর খালাত ভাই। কাশেম তার দিকে তাকিয়ে আছে। অনেক রাত। মিতালী খালার সাথে ঘুমাতে গেল। একটি সুন্দর সকাল। কাশেম হাটছে বাগানে। মিতালী বাহিরে এলো।
কাশেম বলল,”তুমি খুব সুন্দর। “
মিতালী বলল,”তুমি স্বপ্নে দেখেছ বুঝি। “
কাশেম বলল,”সুন্দরীকে স্বপ্নে দেখা মানা নাকি। “
মিতালী বলল,”না,ভালো করে দেখ। “
তারপর দুজন ঘাটে গেল। বিশাল বড় পুকুর। ঘাটে নৌকা বাঁধা।
তারা নৌকায় উঠল। নৌকা ভেসে চলল। কাশেম বলল,”তোমার কি বিয়ে হয়েছে। “
মিতালী বলল,”আমাকে দেখে কি তোমার বিবাহিতা মনে হচ্ছে। “
কাশেম বলল,”তাহলে তোমাকে আমি বিয়ে করব। “
মিতালী বলল,”প্রথম দেখাতেই বিয়ে,তোমার মাথা ঠিক আছে। “
কাশেম বলল,”দেখ আমি কিন্তু পাগল নই। “
মিতালী বলল,”ও তুমি ভালো মানুষ। “
কাশেম বলল,”তুমি বউ হওয়ার যোগ্য,তাই বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছি। “
মিতালী বলল,”জিতু খালা জানলে তোমায় ফাঁসি দিয়ে দিবে। “
কাশেম বলল,”তুমি রাজি হও,মা কিছুই বলবেনা। “
তারপর তারা চুপ করে রইল। মিতালী মনে মনে বলল,”আমি নতুন জীবন শুরু করব, ব্যর্থ প্রেমিকা হয়ে বেঁচে থাকার চাইতে কাশেমের হাত ধরে বেঁচে থাকা অনেক ভালো,আমি কাশেমের হাত ধরে বাঁচতে চাই। “
কাশেম বলল,”মিতালী কথা বল সোনা। “
মিতালী বলল,”তোমার মা রাজি হবে না। “
কাশেম বলল,”মাকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার। “
মিতালীর মুখে হাসি। কাশেমও হাসে। তারা বাড়ি ফিরে। মিতালীর এখানে ভালোই কাটছে। কাশেম তাকে নতুন জীবন দিয়েছে। পুরাতন স্মৃতির কথা মিতালী মনে করেনা। মিতালীর ব্যাংক একাউন্টে পাঁচ লাখের মত টাকা আছে। আর কাছে ছ’ভড়ি সোনার জিনিস।
কয়েকদিন আগেই তার খালার কাছে ভ্যানিটি ব্যাগ রাখতে দিয়েছে, সে ব্যাগেই সোনা। তার জিতু খালা জানেনা।
একদিন সকালে জিতু ও মিতালী চা খাচ্ছে। জিতু বলল,”তোর মায়ের সাথে আমার তো কথা হয়না,তোরা বড় লোক, তাই তোর মা পরিচয় দেয়না,আমাকে বোন বলে স্বীকার করেনা। “
মিতালী বলল,”ওরা না মানলে আমি তো তোমায় খালামনি বল ডাকি,আমি তোমায় ভালোবাসি। “
জিতুর মিতালীকে খুব পছন্দ। মনে মনে পুত্রবধূ মিতালীকেই করবে,জিতু ভেবে রেখেছে।
মিতালী বলল,”তোমার ছেলে খুব দুষ্ট। “
জিতু বলল,”একটু ভালোবাসলেই তো পারিস। “
মিতালী বলল,”তোমার ছেলে অনেক সুন্দর তার জন্য রাজকুমারী অপেক্ষা করছে। “
জিতু বলল,”তুই আমার রাজকুমারী মা। “
মিতালীকে বুকে জড়িয়ে নিল। মিতালী কাশেমের নতুন প্রেম শুরু। ঘরের পাখি ঘরেই রবে। দু মাস পর। মিতালী খবরের কাগজ পড়ছে। রনি মাদক সহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার,মিতালী মনে মনে বলল,”আল্লাহ্ আমাকে নিজ হাতে বাঁচিয়ে দিয়েছে। “
অন্যদিকে মিতালীর পরিবারও মিতালীর কোনো খবর রাখেনি। তার খালা জিতু কিন্তু এক কথার মেয়ে। সে তার ছেলে কাশেমের সাথেই মিতালীর বিয়ে দিতে রাজি। রাত। মিতালী ও কাশেম বসে।
মিতালী বলল,”তাহলে বিয়ে করছো তুমি। “
কাশেম বলল,”মিতালী তুমিই আমার বউ। “
একটু পরে জিতু এলো। জিতু বলল,”ঘরের মেয়ে পরের ঘরে কেন দিব। “
মিতালী বলল,”আমিও পরের ঘরে যেতে চাইনা। “
তারা হেসে উঠল। কয়েক দিন পর তাদের ধূমধামে বিয়ে হয়ে গেল। এখন মিতালী জিতুর পুত্রবধূ। জিতুকে মা বলে ডাকে। ছ’ভড়ি সোনা নিয়ে এসেছিল মিতালী। সোনার কথা জেনে গেল জিতু কেননা মিতালী নিজেই বলেছে। সোনা বিক্রি করে দিল। কাশেমের ব্যবসাতে লাগবে। কাশেম বছর দেড়েকের মধ্যে বড় ব্যবসায়ী হয়ে গেল। মিতালী ও কাশেমের সুন্দর সংসার। জিতু তাদের মুরব্বী, বট বৃক্ষ। এভাবেই তারা হাসি খুশিতে দিন কাটাতে লাগলো।
মিতালির পরিবার হয়তো আর কখনও মিতালীর খোঁজ নিবেনা। মিতালী তার বর্তমান পরিবার নিয়ে সুখি। আর এ সুখ থেকে সে বঞ্চিত হতে চায়না।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

৫০০ টাকায় ১০ এমবিপিএস ইন্টারনেটের ঘোষণা

নতুন জীবন : হাবিবুর রহমান

Update Time : ০৪:৩৮:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২০
গল্পঃ নতুন জীবন
কবি হাবিবুর রহমান
বৃষ্টির দিন। মিতালী রনির অপেক্ষায়। ঘর থেকে বাহিরে এসেছে প্রেমের টানে। এখন সন্ধ্যা। বৃষ্টি থামেনি। মিতালী রাস্তার দিকে তাকিয়ে। ভয় হচ্ছে যদি তার বাবা মা এসে যায়। রনির ফোন বন্ধ। মিতালী চিন্তিত। রাত দশটা। অপেক্ষার প্রহর শেষ। রনি আসেনি। মিতালী আর বাড়িতে ফিরতে পারবে না। চারদিকে জানাজানি হয়ে গেছে মিতালী পালিয়েছে। মিতালী এতো রাতে কোথায় যাবে। হঠাৎ তার মাথায় এলো খালার বাড়ি যাবে। সে বাসে উঠল গন্তব্য নন্দীগ্রামের উদ্দেশ্যে। মিতালী জিতু খালার বাসায় পৌছে গেল। গ্রাম্য পরিবেশ। তখন রাত ১১ঃ৩০ মিনিট। তার খালা গেইট খুলে দিল। তারপর মিতালী খেয়ে নিল। জিতু বলল,”কি রে মা এতো রাতে?”
মিতালী বলল,”খালা রাস্তায় বাস নষ্ট হয়ে গেছে। “
জিতু বলল,” সমস্যা নেই,তুই এসেছিস কয়েক মাস এখানেই থাকবি,যেতে দিচ্ছিনা। “
মিতালী রনির কথা আর মনে রাখবেনা। যার জন্য বাড়ি ছাড়া সে তার ডাকে সাড়া দেয়নি। তার কথা মনে করা মানে বোকামী।
মিতালী অনেক সুন্দরী। যে কেউ তার রূপে পাগল হতে পারে।
কাশেম মিতালীর খালাত ভাই। কাশেম তার দিকে তাকিয়ে আছে। অনেক রাত। মিতালী খালার সাথে ঘুমাতে গেল। একটি সুন্দর সকাল। কাশেম হাটছে বাগানে। মিতালী বাহিরে এলো।
কাশেম বলল,”তুমি খুব সুন্দর। “
মিতালী বলল,”তুমি স্বপ্নে দেখেছ বুঝি। “
কাশেম বলল,”সুন্দরীকে স্বপ্নে দেখা মানা নাকি। “
মিতালী বলল,”না,ভালো করে দেখ। “
তারপর দুজন ঘাটে গেল। বিশাল বড় পুকুর। ঘাটে নৌকা বাঁধা।
তারা নৌকায় উঠল। নৌকা ভেসে চলল। কাশেম বলল,”তোমার কি বিয়ে হয়েছে। “
মিতালী বলল,”আমাকে দেখে কি তোমার বিবাহিতা মনে হচ্ছে। “
কাশেম বলল,”তাহলে তোমাকে আমি বিয়ে করব। “
মিতালী বলল,”প্রথম দেখাতেই বিয়ে,তোমার মাথা ঠিক আছে। “
কাশেম বলল,”দেখ আমি কিন্তু পাগল নই। “
মিতালী বলল,”ও তুমি ভালো মানুষ। “
কাশেম বলল,”তুমি বউ হওয়ার যোগ্য,তাই বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছি। “
মিতালী বলল,”জিতু খালা জানলে তোমায় ফাঁসি দিয়ে দিবে। “
কাশেম বলল,”তুমি রাজি হও,মা কিছুই বলবেনা। “
তারপর তারা চুপ করে রইল। মিতালী মনে মনে বলল,”আমি নতুন জীবন শুরু করব, ব্যর্থ প্রেমিকা হয়ে বেঁচে থাকার চাইতে কাশেমের হাত ধরে বেঁচে থাকা অনেক ভালো,আমি কাশেমের হাত ধরে বাঁচতে চাই। “
কাশেম বলল,”মিতালী কথা বল সোনা। “
মিতালী বলল,”তোমার মা রাজি হবে না। “
কাশেম বলল,”মাকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার। “
মিতালীর মুখে হাসি। কাশেমও হাসে। তারা বাড়ি ফিরে। মিতালীর এখানে ভালোই কাটছে। কাশেম তাকে নতুন জীবন দিয়েছে। পুরাতন স্মৃতির কথা মিতালী মনে করেনা। মিতালীর ব্যাংক একাউন্টে পাঁচ লাখের মত টাকা আছে। আর কাছে ছ’ভড়ি সোনার জিনিস।
কয়েকদিন আগেই তার খালার কাছে ভ্যানিটি ব্যাগ রাখতে দিয়েছে, সে ব্যাগেই সোনা। তার জিতু খালা জানেনা।
একদিন সকালে জিতু ও মিতালী চা খাচ্ছে। জিতু বলল,”তোর মায়ের সাথে আমার তো কথা হয়না,তোরা বড় লোক, তাই তোর মা পরিচয় দেয়না,আমাকে বোন বলে স্বীকার করেনা। “
মিতালী বলল,”ওরা না মানলে আমি তো তোমায় খালামনি বল ডাকি,আমি তোমায় ভালোবাসি। “
জিতুর মিতালীকে খুব পছন্দ। মনে মনে পুত্রবধূ মিতালীকেই করবে,জিতু ভেবে রেখেছে।
মিতালী বলল,”তোমার ছেলে খুব দুষ্ট। “
জিতু বলল,”একটু ভালোবাসলেই তো পারিস। “
মিতালী বলল,”তোমার ছেলে অনেক সুন্দর তার জন্য রাজকুমারী অপেক্ষা করছে। “
জিতু বলল,”তুই আমার রাজকুমারী মা। “
মিতালীকে বুকে জড়িয়ে নিল। মিতালী কাশেমের নতুন প্রেম শুরু। ঘরের পাখি ঘরেই রবে। দু মাস পর। মিতালী খবরের কাগজ পড়ছে। রনি মাদক সহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার,মিতালী মনে মনে বলল,”আল্লাহ্ আমাকে নিজ হাতে বাঁচিয়ে দিয়েছে। “
অন্যদিকে মিতালীর পরিবারও মিতালীর কোনো খবর রাখেনি। তার খালা জিতু কিন্তু এক কথার মেয়ে। সে তার ছেলে কাশেমের সাথেই মিতালীর বিয়ে দিতে রাজি। রাত। মিতালী ও কাশেম বসে।
মিতালী বলল,”তাহলে বিয়ে করছো তুমি। “
কাশেম বলল,”মিতালী তুমিই আমার বউ। “
একটু পরে জিতু এলো। জিতু বলল,”ঘরের মেয়ে পরের ঘরে কেন দিব। “
মিতালী বলল,”আমিও পরের ঘরে যেতে চাইনা। “
তারা হেসে উঠল। কয়েক দিন পর তাদের ধূমধামে বিয়ে হয়ে গেল। এখন মিতালী জিতুর পুত্রবধূ। জিতুকে মা বলে ডাকে। ছ’ভড়ি সোনা নিয়ে এসেছিল মিতালী। সোনার কথা জেনে গেল জিতু কেননা মিতালী নিজেই বলেছে। সোনা বিক্রি করে দিল। কাশেমের ব্যবসাতে লাগবে। কাশেম বছর দেড়েকের মধ্যে বড় ব্যবসায়ী হয়ে গেল। মিতালী ও কাশেমের সুন্দর সংসার। জিতু তাদের মুরব্বী, বট বৃক্ষ। এভাবেই তারা হাসি খুশিতে দিন কাটাতে লাগলো।
মিতালির পরিবার হয়তো আর কখনও মিতালীর খোঁজ নিবেনা। মিতালী তার বর্তমান পরিবার নিয়ে সুখি। আর এ সুখ থেকে সে বঞ্চিত হতে চায়না।