নকল মাস্ক সরবরাহের অভিযোগে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেছেন, যারা এই ঘৃণ্য কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।
বিএসএমএমইউয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার মজুমদার মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়ার নির্দেশে মামলা করা হয়েছে।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে শাহবাগ থানায় মামলাটি দায়ের করেন প্রক্টর মোজাফফর আহমেদ।
আবুল হাসান বলেন, মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠান বিএসএমএমইউ’র চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ১১ হাজার এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহের অনুমতি পায়। মাস্কগুলো সরবরাহের পর চিকিৎসকরা ব্যবহারের সময় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেন। চিকিৎসকরা জানান, মাস্কগুলো মান সম্মত নয়। স্থানীয় বাজারের তৈরি করা মানহীন মাস্ক দেওয়া হয়েছে। এগুলো পরিধান করে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব নয়। পরে বিএসএমইউ কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয় যে মাস্কগুলো মান সম্মত নয়।
বিএসএমএমইউয়ে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া শুরু হয় ৪ জুলাই। প্রথম ও দ্বিতীয় ব্যাচে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের দেওয়া এন-৯৫ মাস্ক নিয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে গত শনিবার তৃতীয় ব্যাচেই বাধে বিপত্তি। অভিযোগ ওঠে তাদের দেওয়া হয় নকল এন-৯৫ মাস্ক। নকল মাস্কগুলোতে লেখা ভুল, লট নম্বর নেই। আসল এন-৯৫ মাস্কের সঙ্গে নকল মাস্কও সরবরাহ করে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল। প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে প্রায় ৮০-৯৫ লাখ টাকার মাস্ক নিয়েছে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ।
এই ঘটনায় ‘অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল’কে কারণ দর্শানোর নোটিশও দিয়েছে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয় তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের কারণ দর্শানোর নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার তার উত্তর দিয়েছেন অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার শারমিন জাহান।
তারা বিষয়টিকে অনাকাঙ্ক্ষিত বলে উল্লেখ করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, নকল মাস্ক সরবরাহ করার কোনো ইচ্ছা তাদের ছিল না। তাদের কাছে যেখানে প্যাকেটজাত অবস্থায় মাস্কগুলো এসেছে সেভাবেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। তবে অভিযোগ পাওয়ার পরপরই তারা সেসব মাস্ক প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেছেন, ‘কারণ দর্শানো নোটিশে তারা যা বলছেন তা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। বিষয়টি তদন্তের জন্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তিন কর্মদিবসের মধ্যে তারা যাতে এই বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরই আমরা সিদ্ধান্ত নেব। করোনা মহামারিতে সম্মুখসারির যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ধরনের আপস নয়। যারা এই ঘৃণ্য কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’