নকল মাস্ক সরবরাহের অভিযোগে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার ও সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী শারমিন জাহানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার (২৪ জুলাই) দুপুরে বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জুলফিকার আহমেদ আমিন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে শাহবাগ থানায় অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী শারমিন জাহানের বিরুদ্ধে মাস্ক জালিয়াতির ঘটনায় বিএসএমএমইউর প্রক্টর অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ বাদী হয়ে দণ্ডবিধির ৪২০ ও ৪০৬ ধারায় মামলাটি করেন।
জুলফিকার আহমেদ বলেন, ‘শর্ত অনুযায়ী তাদের যে মাস্ক ও গ্লাভস সরবরাহের কথা ছিল সেগুলো তারা দেয়নি বলে মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।’
মামলার অভিযোগে বলা হয়, কোনও কোনও ফেইস মাস্কের বন্ধনী ছিঁড়ে গেছে, কোনো মাস্কের ছাপানো ইংরেজিতে লেখা ‘ত্রুটিপূর্ণ’ পাওয়া গেছে। এ ধরনের ত্রুটিতে কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারে, মাস্ক নিম্নমানের ছিল। এর ফলে কোভিড-১৯ সম্মুখযোদ্ধাদের জীবন মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারতো।
তাদের সাথে বিএসএমএমইউ’র চুক্তি অটোমেটিক বাতিল হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ ঘটনায় বিএসএমএমইউ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই প্রতিষ্ঠানকে প্রথমে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার তার উত্তর দিয়েছেন অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার শারমিন জাহান। তিনি বিষয়টিকে অনাকাঙ্ক্ষিত বলে উল্লেখ করেছেন।
জবাবে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নকল মাস্ক সরবরাহ করার কোনো ইচ্ছে তাদের ছিল না। তাদের কাছে যেভাবে প্যাকেটজাত অবস্থায় মাস্কগুলো এসেছে, সেভাবেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছিল। তবে অভিযোগ পাওয়ার পর পরই তারা সেসব মাস্ক প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
অন্যদিকে, শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান জানান, তারা অভিযোগ পেয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন-১ শাখায় সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত শারমিনের মালিকানাধীন অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল ২৭ জুন ১১ হাজার মাস্ক সরবরাহের কার্যাদেশ পায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজে স্নাতকোত্তর শারমিন ২০০২ সালে ছাত্রলীগের বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের গত কমিটিতে তিনি মহিলা ও শিশুবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক ছিলেন। বর্তমান কমিটিতে কোনো পদ না পেলেও দলের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত।
শারমিন ২০১৬ সালের ৩০ জুন স্কলারশিপ নিয়ে চীনের উহানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। গত ২৩ জানুয়ারি থেকে উহানে লকডাউন শুরু হলে তিনি দেশে ফিরে আসেন। তার শিক্ষা ছুটির মেয়াদ এখনও শেষ হয়নি। এর মধ্যে চীনে থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালের মার্চে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল নামে মাস্ক সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়ে ব্যবসা শুরু করেন তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শারমিন জাহান বলেন, ‘আমরা নকল মাস্ক সরবরাহ করিনি। এসব প্রোডাক্ট চীন থেকে ইম্পোর্টেড। এগুলোতো আমরা তৈরি করিনি। আমরা শুধু সাপ্লাই দিচ্ছি। প্রডাক্ট খারাপ হলে, বিএসএমএমইউ প্রথমবারই আমাদের বলতে পারত। আমরা সেটা যাচাই করে দেখতে পারতাম।’
মামলা দায়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মামলা যেকেউ করতে পারে। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’