বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে ডাকসুর সদ্য সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরসহ কোটা সংস্কার আন্দোলনের ৬ নেতাকে। রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) লালবাগ থানায় তাদের নামে দায়ের করা মামলার নম্বর-২৮।
মামলাসূত্রে জানা যায়, গত ৩ জানুয়ারি এই ধর্ষণ সংঘঠিত হয়। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে ঢাবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী হাসান আল মামুনকে। আর ধর্ষণে সহযোগী হিসাবে ভিপি নূরকে করা হয়েছে ৩ নম্বর আসামি।
সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আশরাফ উদ্দিন। তিনি বলেন, অভিযোগকারী ও অভিযুক্তদের সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় ছয়জনকে আসামি করে রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির এক ছাত্রী বাদী হয়ে লালবাগ থানায় মামলা করেন। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই ছাত্রীকে একই বিভাগের শিক্ষার্থী হাসান আল মামুন ধর্ষণ করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
ওসি আরও জানান, মামলার প্রধান আসামি হাসান আল মামুন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক। তার সঙ্গে আরও পাঁচজনকে ধর্ষণে সহযোগী হিসেবে আসামি করা হয়েছে। যাদের মধ্যে নুরুল হক নূরের নামও রয়েছে। মামলায় ঘটনাস্থল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে লালবাগের নবাবগঞ্জ এলাকাকে।
আসামিদের তালিকায় সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নূরের সঙ্গে রয়েছেন একই সংগঠনে যুক্ত নাজমুল হাসান সোহাগ, সাইফুল ইসলাম, নাজমুল হুদা ও আবদুল্লাহ হিল বাকির নাম।
এদিকে এমন অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত হাসান আল মামুন বলেন, মামলার বিষয়ে কিছুই জানি না। এমন কিছুই হয়নি। এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে কথা বলব।
তবে মামলার খবর গণমাধ্যমে আসার পর পরই ফেসবুক লাইভে আসেন ডাকসু ভিপি নূর। মামলাটি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ বলে দাবি করেন তিনি। ভিপি নুর বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা তো নতুন কিছু নয়। এসব মামলা-হামলা ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশ। আমার বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক মামলা হয়েছে। চুরির মামলা, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মামলাও হয়েছে।
সদ্য সাবেক এই ভিপি বলেন, আমি মনে করি মামলাটি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে করা। আর মেয়েটির বাড়ি ময়মনসিংহে। আমি যতটুকু জানতে পেরেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একজন নেতা মেয়েটিকে টাকা পয়সা দিয়ে মামলা করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন।
তবে যিনি মামলাটি দায়ের করেছেন তার সঙ্গে কোনদিন দেখা হয়নি দাবি করে নুরুল হক নুর বলেন, মেয়েটি দুই মাস আগে আমাকে ফোন দিয়ে এই বলে সহযোগিতা চেয়েছেন যে, কোন এক ছেলের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল, যেটি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। সে জন্য আমাকে ভূমিকা রাখতে বলা হয়। এরপর ফোন দেবে বলে আর কোন যোগাযোগ করেনি।
নূর বলেন, মামলার বাদী এক সময়ে ওই ছেলেটির পরিচয় দেয় আমাকে এবং বলে আমরা যেন ছেলেটিকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করি। কিন্তু আমি খোঁজ নিয়ে জানি ছেলেটির নাম নাজমুল, সে আমাদের সংগঠনের কোন দায়িত্বে নেই। তবে সে আমাদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকতো। তাই আমি অভিযোগকারীকে বলেছি, সেতো আমাদের সংগঠনের কেউ না, পদেও নেই।
এরপর মেয়েটি বলে নজমুলসহ আরো একজনকে বহিষ্কার করতে হবে। সে হচ্ছে- আমাদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন। কিন্তু আমি তাকে বলি, সে তো আমাদের আহ্বায়ক। আমি আহ্বায়ককে কিভাবে বহিষ্কার করবো। আপনার সমস্যা মনে হলে আমি আইনগত সহযোগিতা করবো। বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলে অভিযোগ করে সহযোগিতা করবো। কিন্তু শেষে তিনি আর যোগাযোগ রাখেননি।