ক্রীড়া প্রতিবেদক:

শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টি- টোয়েন্টি ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ৪ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ । স্বাগতিকদের ১৪২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৩৭ রান সংগ্রহ করতে পারে কিউইরা।

এই ম্যাচটি ক্যান্সারে আক্রান্তদের প্রতি উৎসর্গ করেছে বিসিবি।

টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৪১ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৩৭ রান করে নিউজিল্যান্ড। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এ ম্যাচেও টস ভাগ্যে জয় পেয়ে আগে ব্যাটিং করার  সিদ্ধান্ত নেন  বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমদুুল্লাহ রিয়াদ।

অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে প্রথমে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশকে শুভ সূচনা এনে দেন দলের দুই ওপেনার মোহাম্মদ নাইম ও লিটন দাস। দেখেশুনে খেলে পাওয়া প্লেতে অবিচ্ছিন্ন থেকে ৩৬ তোলেন এ জুটি।

তাড়াহুড়ার না করে উইকেট বাঁচিয়ে খেলাতেই বেশি মনোযোগী ছিলেন নাইম-লিটন। তাই ৯ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান রেটও খুব বেশি ছিলো না। বিনা উইকেটে ৫৩। নিউজিল্যান্ডের স্পিনার রাচিন রবীন্দ্রর করা দশম ওভারের প্রথম বলে ইনিংসের প্রথম ছক্কা মারেন লিটন।

একই ওভারের তৃতীয় বলে ইনসাইড-এজ হয়ে লিটন বোল্ড হলে দলীয় ৫৯ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ২৯ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৩ রান করেন লিটন। লিটনের বিদায়ে তিন নম্বরে ব্যাট হাতে নামেন মুশফিকুর রহিম। রবীন্দ্র রাচিনের প্রথম ডেলিভারিতেই স্টাম্প আউট হন মুশফিক।  ১ বল খেলে খালি হাতে ফিরেন মুশফিক।

মুশফিক ব্যাটিংয়ে তিন নম্বরে নামায়, চার নম্বরে ক্রিজে আসেন সাকিব আল হাসান। দ্রুত রান তোলার পরিকল্পনা ছিলো সাকিবের। ১১তম ওভারে নিউজিল্যান্ডের পেসার স্পিনার কোল ম্যাকোঞ্চিকে দু’টি বাউন্ডারি মারেন সাকিব। কিন্তু একই  ওভারের শেষ বলে আবারো বাউন্ডারি মারতে গিয়ে মিড-অফে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার আগে ৭ বলে ২টি চারে ১২ রান করেন সাকিব।

দলীয় ৭২ রানে সাকিব ফিরলে, নাইমের সাথে জুটি বাঁধেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। রানের চাকা সচল রেখেছিলেন তারা। এতে ১৫তম ওভারে শতরানে পৌঁছায় বাংলাদেশের ইনিংস।

১৬তম ওভারে নাইম-মাহমুদুল্লাহর জুটি ভাঙ্গেন রবীন্দ্র। বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান করতে থাকা নাইম, ব্যক্তিগত ৩৯ রানে আউট হন। ৩৯ বলের ইনিংসে ৩টি চার মারেন তিনি। চতুর্থ উইকেটে মাহমুদুল্লাহর সাথে ২৯ বলে ৩৪ রান যোগ করেন নাইম। এরপর উইকেটে এসে মাত্র ৩ রানে থামেন আফিফ হোসেন। নিউজিল্যান্ডের স্পিনার আজাজ প্যাটেলের প্রথম শিকার হন তিনি। ফলে ১০৯ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

আফিফ যখন ফিরেন তখন ইনিংসের ২২ বল বাকী ছিলো। ১৯তম ওভারে মাহমুদুল্লাহর ২টি চারে ১৩ রান পায় বাংলাদেশ। শেষ ওভারে ১১ রান তোলেন  মাহমুদুল্লাহ ও নুরুল। ইনিংসের শেষ বলে ডিপ মিড-উইকেটে ক্যাচ দিয়ে থামেন নুরুল।

৯ বলে ১টি চারে ১৩ রান করেন নুরুল। ৩২ বলে ৫টি চারে অপরাজিত ৩৭ রান করেন মাহমুদুল্লাহ। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৪১ রান করে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের রবীন্দ্র ২২ রানে ৩ উইকেট নেন। ১টি করে শিকার করেন প্যাটেল-ম্যাককঞ্চি ও বেনেট।

জয়ের জন্য ১৪২ রানের  লক্ষ্যে খেলতে বেশ সতর্কতার সঙ্গেশুরু করে  নিউজিল্যান্ড। তবে তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলে বাংলাদেশকে প্রথমবারের মত উইকেট শিকারের আনন্দে মাতান স্পিনার সাকিব। দ্বিতীয় বলেই ১০ রান করা  রবীন্দ্রকে বোল্ড করেন তিনি। পরের ওভারে নিউজিল্যান্ডের আরেক ওপেনার ৮ বলে ৬ রান করা টম ব্লান্ডেলের বিদায় নিশ্চিত করেন মাহেদি। ১৮ রানে দুই ওপেনারকে হারায় নিউজিল্যান্ড।

এরপর দলকে খেলায় ফেরানোর লড়াই করেন অধিনায়ক টম লাথাম ও উইল ইয়ং। বাংলাদেশ বোলারদের সমীহ করে খেলেন তারা। কোন রকম ঝুঁিক না নিয়ে ১০ ওভার পর্যন্ত অবিচ্ছিন্নই ছিলেন লাথাম ও ইয়ং। তখন কিউইদের দলীয় রান ৫৭।

তবে ১১তম ওভারে জমে যাওয়া লাথাম-ইয়ং জুটি ভাঙ্গেন সাকিব। থার্ড ম্যানে দারুন ক্যাচ নেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। ৩টি চারে ২৮ বলে ২২ রান করেন ইয়ং। আউট হওয়ার আগে লাথামের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে ৪৭ বলে ৪৩ রান যোগ করেন  লাথ ইয়ং।

এরপর নিউজিল্যান্ডের মিডল-অর্ডারে জোড়া আঘাত হানেন দুই স্পিনার নাসুম আহমেদ ও মাহেদি। কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে ৮ রানে নাসুম ও হেনরি নিকোলসকে ৬ রানের বেশি করতে দেননি মাহেদি। এই দু’টি উইকেটের পেছনে অবদান রাখেন মুশফিক। ফিল্ডার হিসেবে এই দুই ব্যাটসম্যানের ক্যাচই নেন তিনি।

এমন অবস্থায় ১৬ ওভার শেষে কিউইদের আস্কিং রেট গিয়ে দাঁড়ায় ১২তে। অর্থাৎ শেষ ২৪ বলে ৫ উইকেট হাতে নিয়ে ৪৮ রানের প্রয়োজন পড়ে নিউজিল্যান্ডের।

এ অবস্থায় ১৭তম ওভারে ১টি চারে ১১ রান তুলেন লাথাম। অন্যপ্রান্তে তার সঙ্গী ছিলেন ম্যাককঞ্চি। ১৮তম ওভারেও লাথামের ব্যাট থেকে আসে ১টি বাউন্ডারি।  ওভার থেকে ৯ রান পায় নিউজিল্যান্ড। একই  ওভারে হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন লাথাম। এ জন্য তিনি বল খেলেছেন ৩৯টি।

শেষ ২ ওভারে সমীকরণ দাঁড়ায় ২৮ রানে। ঐ ওভারে মাত্র ৮ রান তুলেন লাথাম ও ম্যাককঞ্চি। ফলে শেষ ওভারে জিততে ২০ রান দরকার পড়ে নিউজিল্যান্ডের।

মুস্তাফিজের করা শেষ ওভারের প্রথম চার বল থেকে ৭ রান নেন লাথাম-ম্যাককঞ্চি। সেখানেই ম্যাচ জয়ের পথ দেখতে পায় বাংলাদেশ। কারণ শেষ দুই বলে ১৩ রান দরকার পড়ে কিউইদের। কিন্তু পঞ্চম বলটি নোসহ বাউন্ডারির দেন ফিজ। এতে ম্যাচে টান টান  উত্তেজনা তৈরি হয়। শেষ দুই বলে জয়ের জন্য ৮ রানের সমীকরনে পড়ে নিউজিল্যান্ড। কিন্তু শেষ দুই বলে ৩ রানের বেশি দেননি ফিজ।

২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৩৭ রান তুলে ম্যাচ হারে নিউজিল্যান্ড। ৪৯ বলে ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ৬৫ রানে অপরাজিত থাকেন লাথাম। ম্যাককঞ্চি অপরাজিত থাকেন ১৫রানে । বাংলাদেশের সাকিব-মাহেদি ২টি করে ও নাসুম ১টি উইকেট নেন।

আগামী ৫ সেপ্টেম্বর একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ।
টস : বাংলাদেশ
বাংলাদেশ ইনিংস :
মোহাম্মদ নাইম ক ব্লান্ডেল ব রবীন্দ্র ৩৯
লিটন দাস বোল্ড ব রবীন্দ্র ৩৩
মুশফিকুর রহিম স্টাম্প লাথাম ব রবীন্দ্র ০
সাকিব আল হাসান ক সিয়ার্স ব ম্যাককঞ্চি ১২
মাহমুদুল্লাহ অপরাজিত ১৪
আফিফ হোসেন ক গ্র্যান্ডহোম ব প্যাটেল
নুরুল হাসান ক ইয়ং ব বেনেট ১৩
অতিরিক্ত (লে বা-২, ও-২) ৪
মোট (২০ ওভার, ৬ উইকেট) ১৪১
উইকেট পতন : ১/৫৯ (লিটন), ২/৫৯ (মুশফিক), ৩/৭২ (সাকিব), ৪/১০৬ (নাইম), ৫/১০৯ (আফিফ), ৬/১৪১ (নুরুল)।
নিউজিল্যান্ড বোলিং :
আজাজ প্যাটেল : ৪-০-২০-১ (ও-১),
ম্যাককঞ্চি : ৪-০-২৪-১,
বেনেট : ৪-০-৩২-১,
ব্রেসওয়েল : ৩-০-৩০-০ (ও-১),
রবীন্দ্র : ৪-০-২২-৩,
সিয়ার্স : ১-০-১১-০।
নিউজিল্যান্ড ইনিংস :
টম ব্লান্ডেল স্টাম্প নুরুল ব মাহেদি ৬
রাচিন রবীন্দ্র বোল্ড ব সাকিব ১০
টম লাথাম অপরাজিত ৬৫
উইল ইয়ং ক সাইফুদ্দিন ব সাকিব ২২
কলিন ডি গ্রান্ডহোম ক মুশফিক ব নাসুম ৮
হেনরি নিকোলস ক মুশফিকুর ব মাহেদি ৬
কোল ম্যাককঞ্চি অপরাজিত ১৫
অতিরিক্ত (লে বা-২, নো-১, ও-২) ৫
মোট (২০ ওভার, ৫ উইকেট) ১৩৭
উইকেট পতন : ১/১৬ (রবীন্দ্র), ২/১৮ (ব্লানডেল), ৩/৬১ (ইয়ং), ৪/৮৫ (গ্র্যান্ডহোম), ৫/৯২ (নিকোলস)।
বাংলাদেশ বোলিং :
মাহেদি : ৪-০-১১-২,
নাসুম : ৩-০-১৭-১ (ও-১),
সাকিব : ৪-০-২৯-২,
মুস্তাফিজ : ৪-০-৩৪-০ (ও-১),
মাহমুদুল্লাহ : ১-০-৭-০,
সাইফুদ্দিন : ৪-০-৩৬-০ ।
ফল : বাংলাদেশ ৪ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ(বাংলাদেশ)।
সিরিজ : পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে