নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশে চলতি বছর সাড়ে নয় মাসে বজ্রপাতে অন্তত ৩২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। সবগুলো মৃত্যুই হয়েছে খোলা স্থানে।
এজন্য সরকার বজ্রপাত আশ্রয়কেন্দ্র করার পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ববস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী এই কথা বলেন। আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস (বুধবার) উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, ‘২০১৫ সালে বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সে বছর বজ্রপাতে মারা গিয়েছিলেন ২২৬ জন। এরপর ২০১৬ সালে ৩৯১ জন এবং ২০১৮ সালে ৩৫৯ জনের মৃত্যু হয় বজ্রপাতে। ২০১৯ সালে সেই সংখ্যা কিছুটা কমে আসে, ১৯৮ জনের মৃত্যু হয় ওই বছর।’
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী জানান, বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের মতো করে বজ্রপাত আশ্রয়কেন্দ্র করবে সরকার। সেই আশ্রয়কেন্দ্রে বজ্রপাত প্রতিরোধক যন্ত্র লাইটনিং অ্যারেস্টার বসানো হবে। বজ্রপাতের সতর্কবার্তা শোনার পর কৃষকেরা এই আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে পারবেন।
যন্ত্রটি সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, মেশিনটি ৪০ মিনিট আগে বজ্রপাত শনাক্ত করতে পারে এবং কোথায় হবে তা বলতে পারে। আমরা এই সতর্কতা দেওয়ার মেশিন বসাব। প্রাথমিকভাবে বজ্রপাতপ্রবণ এলাকা বিশেষ করে হাওর এলাকায় বসাব। অ্যাপের মাধ্যমে যাতে মানুষের মোবাইলে সতর্কবার্তা যেতে পারে সে জন্য অ্যাপ তৈরি করব।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বজ্রপাত প্রবণ এলাকায় বজ্রপাতের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছি। এক ডেসিমেল জায়গায় একটি পাকা ঘর থাকবে। প্রতিটি ঘরে একটি করে লাইটিনিং অ্যারেস্টার দেওয়া হবে, যাতে সতর্কবাতা শোনার ২০-২৫ মিনিটের মধ্যে মানুষ সেই আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারে। বজ্রপাত না হওয়া পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করবেন।
আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবসের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও মুজিব শতবর্ষে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের প্রস্তুতি নিয়েছে। একই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির ৫০ বছর পূর্ত উদযাপনেরও আযোজন করা হয়েছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ঠিক হয়েছে- ‘দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে কাজ করি একসাথে’।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভৌগোলিক অবস্থান ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ দেশ। দুর্যোগের কারণে নিয়মিত ক্ষয়ক্ষতির পরও ষাটের দশক পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ধারণা ছিল মূলত ত্রাণ ও পুনর্বাসনকেন্দ্রিক।
এখন দুর্যোগে জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে দুর্যোগ সহনীয় টেকসই নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকার পরিকল্পিতভাবে কাঠামোগত ও অকাঠামোগত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৩ মে ১১০টি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, ৩০টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র, ৩০টি জেলা ত্রাণ গুদাম কাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্যকেন্দ্র এবং পাঁচটি মুজিব কিল্লার উদ্বোধন এবং ৫০টি মুজিব কিল্লার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন।
প্রতিমন্ত্রী জানান, উপকূলীয় এলাকায় বয়স্ক, গর্ভবতী, শিশু ও প্রতিবন্ধীবান্ধব ৩২০টি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় দুই লাখ ৫৬ হাজার মানুষ এবং ৪৪ হাজার গবাদিপশু আশ্রয় নিতে পারবে। বন্যা ও ভাঙ্গনপ্রবণ এলাকায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ২৩০টি দ্বিতল বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেছে সরকার, সেখানে প্রায় ৯২ হাজার মানুষ এবং ২৩ হাজার গবাদিপশুর আশ্রয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।
ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি রোধে ‘ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড’ প্রণয়ন করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সব দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা সফলতা অর্জন করেছি। কিন্তু সত্যি কথা বলতে গেলে ভূমিকম্পে আমরা এখনো সে রকম সফলতা পাইনি।’
এনামুর রহমান বলেন, ‘তবে বিল্ডিং কোড মেনে যদি আগামীতে ভবন তৈরি করা হয়, তাহলে সেগুলো ভূমিকম্প সহনীয় হবে। কারণ এগুলোকে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয় হিসেবে তৈরি করা হচ্ছে।’