প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের চলমান উন্নয়ন ও অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করার যে কোন ধরনের অপচেষ্টা সম্পর্কে সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ প্রদান করেছেন।
টানা তৃতীয় মেয়াদে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে তিনি আজ এই ভাষণ প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের যে মহাসড়ক বেয়ে দুর্বার গতিতে ধাবিত হচ্ছে তা যেন কোনভাবেই বাধাগ্রস্ত হতে না পারে সেদিকে আপনাদের সকলের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। উন্নয়নের পথে সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আমরা বদ্ধপরিকর।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর গত ১২ বছরে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। ‘আর্থ-সামাজিক এবং অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশের বিস্ময়কর উন্নয়ন সাধিত হয়েছে,’ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দ্য ইকোনমিস্ট’-এর ২০২০ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী ৬৬টি উদীয়মান সবল অর্থনীতির দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৯ম এবং ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম’র পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।
তিনি বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই বাংলাদেশকে একটি আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। তবে, মাঝে ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বিএনপি-জামাত এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সে প্রচেষ্টায় ছেদ পড়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ আজ একটি সমীহের নাম। জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনসহ আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব আজ চোখে পড়ার মত। তিনি বলেন, ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উচ্চ মধ্যম-আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের সমৃদ্ধশালী-মর্যাদাশীল দেশ। আমরা ২০২১ সালের পূর্বেই উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছি। প্রত্যাশিত লক্ষে পৌঁছতে আমরা পথ-নকশা তৈরি করেছি। রূপকল্প ২০৪১-এর কৌশলগত দলিল হিসেবে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ প্রণয়ন করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আজ অনেক দূর এগিয়েছি সত্য। আমাদের আরও বহুদূর যেতে হবে। হতে পারে সে গন্তব্য পথ মসৃণ, হতে পারে বন্ধুর। বাঙালি বীরের জাতি। পথ যত কঠিনই হোক, আমাদের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে হবে। আমরা যদি পরিশ্রম করি, সততা-দেশপ্রেম নিয়ে দায়িত্ব পালন করি, তাহলে আমরা সফলকাম হবোই, ইনশাআল্লাহ,বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় তাঁর সরকারের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-মাদক এবং দুর্নীতি বিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার প্রত্যয় পুণর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছি। দুর্নীতিবাজ যে দলেরই হোক আর যত শক্তিশালীই হোক, তাদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে না এবং হবে না। এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আইনের শাসন সমুন্নত রেখে মানুষের নাগরিক এবং গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে যা যা করা প্রয়োজন আমরা তা করবো।
তিনি আরো বলেন, আমরা কঠোর হস্তে জঙ্গিবাদের উত্থানকে প্রতিহত করেছি। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ পারস্পরিক সহনশীলতা বজায় রেখে বসবাস করে আসছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে কোভিড-১৯ বিষয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় জনগণের প্রতি তাঁর আহ্বান পুণর্ব্যক্ত করে কোভিড-১৯ চলাকালে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সরকারি উদ্যোগ, ভ্যাকসিন প্রাপ্যতা নিশ্চিতে সরকারের প্রচেষ্টা, রোহিঙ্গা সমস্যা, দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের চিত্র, মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গেরও উল্লেখ করেন। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আরও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।
বৈশ্বিক মহামারির অস্বাভাবিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বর্তমান সময়কে প্রধানমন্ত্রী ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রার এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং তৃতীয় মেয়াদে সরকার পরিচালনার প্রাপ্ত দায়িত্বকে ‘পবিত্র আমানত’ উল্লেখ করে এর তৃতীয় বর্ষে পদার্পণকালে দেশ ও দেশের বাইরে অবস্থানরত বাংলাদেশের সকল নাগরিককে অভিনন্দন এবং ইংরেজী নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের সরকার হিসেবে মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করা আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য বলেই আমি মনে করি। গত একযুগে আমরা জনগণের জন্য কী করেছি, তা মূল্যায়নের ভার আপনাদের।
তিনি বলেন, আমার পরম সৌভাগ্য যে, আপনাদের সকলের সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করতে পারছি এবং মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছি।
তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং আদর্শকে ধারণ করে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্য-নিরক্ষরতামুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক কল্যাণকামী বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার ও পুণর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার সহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং রেডিওতে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।
শেখ হাসিনা চতুর্থবার এবং টানা তৃতীয় বারের মত ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এরআগে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তাঁর দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরংকুশ বিজয় অর্জন করে।- বাসস