দুর্গাপুর উপজেলা প্রতিনিধি :
রাজশাহীর দূর্গাপুর উপজেলার আলীপুর গ্রামে এক গৃহবধুকে (১৯) ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় স্থানীয় মাতবররা সালিশী বৈঠকে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে চাইলেও তাতে রাজি না হওয়ায় ওই গৃহবধুর স্বামীকে মারপিট করে ঘরে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। গত সোমবার সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটার পর থেকে পলাতক রয়েছে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলম। বুধবার রাতে এ প্রতিবেদন লেখার পর্যন্ত থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছিলো।
ভুক্তভোগী গৃহবধুর স্বামী বিপুল হোসেন জানান, তার নিজ গ্রাম উপজেলার ধরমপুর গ্রামে হলেও বাবা-মায়ের সাথে ঝগড়া হওয়ায় বাড়ি ছেড়ে স্ত্রীকে নিয়ে আলীপুর গ্রামের বালি ব্যাবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে ভাড়া থাকা শুরু করেন। গত আড়াই মাস ধরে সেখানে ভাড়া আছেন তারা। কৃষি কাজ করে সংসার চলে তার। এ কারনে স্ত্রীকে বাসায় একা রেখেই বাইরে কাজে যেতে হয় তাকে।
বিপুল হোসেন অভিযোগ করেন, গত সোমবার ভোরে পানবরজে কাজের জন্য বাসা থেকে বেরিয়ে যান তিনি। বাসায় তার স্ত্রী একাই ছিলেন। বাসার মালিক জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রীও সন্তানদের নিয়ে দাওয়াত খেতে যান। এ কারনে বাসা আরো ফাঁকা হয়ে পড়ে। সকাল ১১টার দিকে জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রীকে বাসায় একা পেয়ে কৌশলে ফুসলিয়ে ঘরে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে নানা রকম প্রলোভন দেখায়।
এমনকি ঘটনার কথা কেউ জানবেনা বলেও আশ্বাস দিয়ে ভিতর থেকে ঘরের ছিটকানি লাগিয়ে দেয়। এক সময় তার স্ত্রী ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রীকে জাপটে ধরে বিছানায় শুইয়ে দেয় ও ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এরপর তার স্ত্রী চিৎকার দিয়ে জাহাঙ্গীরকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এবং ঘরের ছিটকানি খুলে বাইরে গিয়ে প্রতিবেশী হজরত আলীর বাড়িতে আশ্রয় নেয়। এ সময় হজরত আলী সহ পরিবারের লোকজনকে ঘটনাটি খুলে বলে তার স্ত্রী।
বিপুল বলেন, ঘটনার এক ঘন্টা পর জাহাঙ্গীর তার কাছে গিয়ে কান্নাকাটি করতে থাকে এবং তাকে ক্ষমা করতে অনুরোধ জানায়। এমনকি হাতে ৫০ হাজার টাকা গুজে দিয়ে কাউকে না জানানোর অনুরোধ জানায়। এরপর বিপুল বাড়ি ফিরে তার স্ত্রীর কাছে সব ঘটনা শুনে নিজ গ্রাম ধরমপুরে বাবা-মায়ের কাছে ফিরতে চাইলে আলীপুর গ্রামের মাতব্বর সাইদুর রহমান ও মনসুর কসাই বিপুলকে বিষয়টি মিমাংসা করে দিবে বলে আশ্বাস দেয়।
এক পর্যায়ে তাদের কথায় গুরুত্ব না দিয়ে ধরমপুর গ্রামে ফিরতে চাইলে সাইদুর ও মনসুর কসাই মিলে তাকে মারপিট করে স্ত্রীসহ তাকে আবারও হজরত আলীর বাড়িতে আটকে রাখে। পরে হজরত আলীর ছেলের কাছ থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে বাড়িতে খবর দিয়ে তাকে উদ্ধার করার জন্য জানায় বিপুল। পরে বিকেল ৫টার দিকে ধরমপুর গ্রামের ইউপি সদস্য আজাদ আলী ও আলীপুর গ্রামের ইউপি সদস্য মানিক আলীর সহায়তায় নিজ গ্রামে ফিরেন বিপুল ও তার স্ত্রী।
এদিকে, ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলম। তবে জানতে চাইলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন ইউপি সদস্য মানিক আলী, ইউপি সদস্য আজাদ আলী, স্থানীয় মাতব্বর সাইদুর ও মনসুর কসাই। এমনকি জাহাঙ্গীর নিজেও গ্রামের এক মাতব্বরের কাছে ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন। দুর্গাপুর থানার ওসি হাশমত আলী জানান, ভুক্তভোগী গৃহবধু ও তার স্বামী থানায় এসে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।