মোঃ মাসুদ রানা দুপচাঁচিয়া, বগুড়া :
দুপচাঁচিয়া থানা পুলিশের অভিযানে নকল স্বর্ণমূর্তি প্রতারক চক্রের ৩ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।
দুপচাঁচিয়া থানার ইজাহার সুত্রে জানা যায়,
মোঃ গাজী শেখ(৪৬), পিতা-মৃত আবুল শেখ, সাং-খালিশপুর আলমনগর চরেরহাট, থানা-খালিশপুর, খুলনা মহানগর, খুলনা দুপচাঁচিয়া থানা পুলিশের সহায়তায় ধৃত আসামী ১। মোছাঃ নাজুয়ারা(৫২), পিতা-মৃত অজেল, ২। মোঃ মাসুদ(৩৫), পিতা-মোঃ সন্টু শাহ, ৩। মোছাঃ রুমি খাতুন(২৮),স্বামী-মোঃ মাসুদ, সর্ব সাং-ঝাঝিরা পশ্চিমপাড়া, থানা-দুপচাঁচিয়া, জেলা-বগুড়াদের সহ থানায় হাজির হইয়া উল্লেখিত আসামীসহ পলাতক আসামী ৪। মোঃ আব্দুল মজিদ(৩৬), পিতা-মৃত আব্দুর রহমান লিলো, সাং-ঝাঝিরা পশ্চিমপাড়া, ৫। মোঃ বেলাল হোসেন(৪২), পিতা-মৃত আব্দুর রশিদ, সাং-চৌধুরী পুকুর গুচ্ছগ্রাম, ৬। মোছাঃ পিয়ারা বেগম(৫০), স্বামী-মৃত আংগুর ফকির, সাং-ঝাঝিরা ফকিরপাড়া, সর্ব থানা-দুপচাঁচিয়া, জেলা-বগুড়া ও অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জনের বিরুদ্ধে এই মর্মে এজাহার দায়ের করিতেছি যে, আমি পেশায় একজন রংমিস্ত্রী। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জেলায় ফাইভ রিংস সিমেন্ট কোম্পানীর বিজ্ঞাপন লেখার জায়গায় রংয়ের কাজ করিয়া থাকি। বর্তমানে নাটোর জেলায় অবস্থান করে রংয়ের কাজ করিতেছি। গত প্রায় ১ মাস পূর্বে নাটোর হইতে ট্রেনযোগে খুলনা যাওয়ার পথে আমার পাশের ছিটে বসা ০১ জন মহিলার সাথে পরিচয় হয়। তার সাথে কথা বার্তার একপর্যায়ে সে আমাকে ভাই বলিয়া সম্বোধন করিয়া আমার মোবাইল নাম্বার নেয়। জিজ্ঞাসায় তার নাম মোছাঃ নাজুয়ারা(৫২), পিতা-মৃত অজেল, সাং-ঝাঝিরা পশ্চিমপাড়া, থানা-দুপচাঁচিয়া, জেলা-বগুড়া বলে জানায় এবং তার মোবাইল নাম্বার ০১৭৬৭-২২৪৯২৫ আমাকে দেয়। উক্ত নাজুয়ারা মাঝে-মধ্যেই আমার সাথে মোবাইলে কথাবার্তা বলিতো। গত প্রায় ১৫ দিন পূর্বে আমি ১ নং আসামী নাজুয়ারার অনুরোধে তার বাড়িতে বেড়াতে আসি। সে আমাকে আদর সহকারে খাওয়া-দাওয়া করায় এবং তার প্রতি আমার বিশ্বাস স্থাপন হয়। আমি নাটোরে গিয়ে কাজ কর্ম করিতে থাকি। গত অনুমান ১০/১১ দিন পূর্বে উক্ত নাজুয়ারা মোবাইল ফোনে ভাইয়ের দোহাই দিয়ে গোপন রাখার শর্তে আমাকে জানায় যে, তার পাশের বাসার একজন খালা একটি স্বর্নের মূর্তি পেয়েছে। মূর্তিটি বিক্রি করে দিতে হবে। সে মূর্তিটি নিয়ে খালিশপুর আমার বাসায় যেতে চায়। পরবর্তীতে নাজুয়ারা জানায় যে, ২০০০০/-(বিশ হাজার) টাকা খালাকে দিয়ে স্বর্নের মূর্তিটি নিয়ে যেতে হবে। তাই আমাকে ২০০০০/-(বিশ হাজার) টাকা জোগাড় করে দিতে বলে। আমি ধর্মবোন হিসেবে সরল মনে তাকে বিশ্বাস করিয়া ২০০০০/-(বিশ হাজার) টাকা দেওয়ার কথা স্বীকার করি। ১৯/০৩/২০২২ তারিখ সকাল অনুমান ০৭.৩০ ঘটিকার সময় ২০০০০/-(বিশ হাজার) টাকা নিয়ে ১ নং আসামী মোছাঃ নাজুয়ারা(৫২), পিতা-মৃত অজেল, সাং-ঝাঝিরা পশ্চিমপাড়া, থানা-দুপচাঁচিয়া, জেলা-বগুড়া এর বসত বাড়িতে আসি। আমি নাজুয়ারার সাথে কথা বলার একপর্যায়ে পাগল বেশে ৩৫/৩৬ বৎসর বয়সের একজন লোক সোনালী রংয়ের একটি রাধাকৃষ্ণের মূর্তি নিয়ে আসে। আমি মূর্তিটি নাড়াচাড়া করে দেখি। ঐ সময় ২০০০০/-(বিশ হাজার) টাকা দিলে মূর্তিটি কেটে অর্ধেক অংশ নিয়ে আমার ধর্মবোন নাজুয়ারা আমার সাথে খালিশপুর যাবে মর্মে জানায়। আমি আমার বোনের প্রতি সরল মনে বিশ্বাস করিয়া ২০,০০০/-(বিশ হাজার টাকা- যাহার মধ্যে ৮ টি ১০০০ টাকার নোট, ২৪ টি ৫০০ টাকার নোট) টাকা তাকে প্রদান করি। পরে নাজুয়ারা ও পাগলবেশি লোকটি আমাকে ঘরে বসিয়ে রেখে মূর্তিটি কেটে আনার জন্য ঘর থেকে বের হয়ে যায়। একই তারিখ সকাল অনুমান ০৮.১৫ ঘটিকার সময় নাজুয়ারা বেগমসহ ৯/১০ জন লোক হাতে লোহার কামলিসহ নাজুয়ারার বসত বাড়িতে আসিয়া আমাকে ঘিরে এলোপাথারি ভাবে কিল ঘুষি ও মারপিট শুরু করে। ০২ জন ব্যক্তি আমার গলা ও অন্ডকোষ চেপে ধরে শ্বাসরোধ করিয়া হত্যার চেষ্টা করে। সেই সুযোগে আসামীগণ আমার প্যান্টের ডান পকেটে থাকা নগদ ১২,০০০/-(বার হাজার টাকা, যাহার মধ্যে ২০ টি ৫০০ টাকার নোট, ১৫ টি একশত টাকার নোট, ১০ টি পঞ্চাশ টাকার নোট) ও একটি ঠগঅঢ বাটন মোবাইল ফোন যাহার মূল্য অনুমান ১,৬০০/-(এক হাজার ছয়শত) টাকা অসৎ উদ্দেশ্যে বাহির করিয়া নেয়। একপর্যায়ে তারা বিষয়টি কাউকে জানালে আমাকে মেরে লাশ গুম করে ফেলার হুমকি দিয়ে আমাকে ঐ বাড়ি থেকে জোর পূর্বক বাহির করিয়া দেয়। আমি প্রানে বেচে উক্ত বাড়ি থেকে কিছু দুর যাইয়া তাৎক্ষনিক ভাবে ৯৯৯ এর মাধ্যমে দুপচাঁচিয়া থানা পুলিশকে অবহিত করি। দুপচাঁচিয়া থানা পুলিশ দুপচাঁচিয়া থানাধীন ঝাজিরা পশ্চিমপাড়া সাকিনে উপস্থিত হয়ে আমার সনাক্ত মতে ১ নং হতে ৩ নং আসামীদেরকে আটক করেন এবং ১ন আসামী মোছাঃ নজুয়ারার নিকট থেকে প্রতারণা করে নেওয়া ১২,৫০০/-(বার হাজার পাঁচশত) টাকা উদ্ধার করেন। আমি স্থানীয়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ ও খোজখবর নিয়ে জানিতে পারি পাগলবেশি ব্যক্তির নাম আসামী ৪। মোঃ আব্দুল মজিদ(৩৬), পিতা-মৃত আব্দুর রহমান লিলো, সাং-ঝাঝিরা পশ্চিমপাড়া, থানা-দুপচাঁচিয়া, জেলা-বগুড়া এবং উক্ত আব্দুল মজিদসহ আসামী ৫। মোঃ বেলাল হোসেন(৪২), পিতা-মৃত আব্দুর রশিদ, সাং-চৌধুরী পুকুর গুচ্ছগ্রাম, থানা-দুপচাঁচিয়া, জেলা-বগুড়াদ্বয় আমার অন্ডকোষ ও গলা চাপিয়া ধরেছিল। তাদের সাথে আসামী ৬। মোছাঃ পিয়ারা বেগম(৫০), স্বামী-মৃত আংগুর ফকির, সাং-ঝাঝিরা ফকিরপাড়া, থানা-দুপচাঁচিয়া, জেলা-বগুড়াগণসহ আরো অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন ছিল। তাদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করিতে পারি নাই। তবে তাদেরকে দেখিলে চিনতে পারিবো। আসামীরা প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। আসামী নাজুয়ারা প্রতারনা মূলক ভাবে আমার সাথে ভাই বোনের সম্পর্ক স্থাপন করে তার প্রতি বিশ্বাস সৃষ্টি করাইয়া কৌশলে পুতুল বিক্রির নামে আমাকে তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে আসে এবং বিশ্বাস ভঙ্গ করিয়া সকল আসামীগণ পরিকল্পিত ভাবে প্রতারণার মাধ্যমে আমার নিকট থেকে সর্বমোট ৩২,০০০০/-(বত্রিশ হাজার) টাকা ও একটি মোবাইল ফোন নিয়ে আমাকে শ্বাসরোধ করিয়া হত্যার চেষ্টাসহ মারপিট করিয়া জখম করতঃ ভয়ভীতি ও প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে নাজুয়ারার বাড়ি হতে জোর পূর্বক বের করে দেয়।
উল্লেখিত ঘটনায় জনৈক মোঃ গাজী শেখ বাদী হয়ে একখানা এজাহার দায়ে করলে উপরোক্ত আসামীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু হয়।
উক্ত আসামীদের’কে আজ বগুড়া জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে মর্মে নিশ্চিৎ করেন দুপচাঁচিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল কালাম আজাদ।