রাজশাহী প্রতিনিধিঃ
দুই বছর ধরে রাজশাহীতে নকল ঔষুধ তৈরী হত। গত শুক্রবার রাতে নগরীর ভদ্রা জামালপুর এলাকা থেকে নকল ঔষুধ কারখানায় অভিযান চালিয়ে একটি চক্রকে আটকের পর এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
ওই চক্রটি নকল দামি এন্টিবায়েটিক ও গ্যাসের ঔষুধও বিপুল পরিমাণে বাজারজাত করেছে। এতে করে অতিব প্রয়োজনীয় ঔষুধ হওয়ার পরেও নকল এন্টিবায়েটিক ও গ্যাসের ঔষুধে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। যাতে করে মানুষের উপকারের পরিবর্তে ক্ষতির আশঙ্কায় করা হচ্ছে।
গ্রেপ্তারকৃত চক্রের মূলহোতা শফিকুল ইসলাম আনিস পুলিশকে জানিয়েছে, বিপুল পরিমাণ দামি ঔষুধ বাজারজাত করেছে তারা গত দুই বছরে। এখনো অনেক ঔষুধ বাজারে রয়েছে রাজশাহীসহ বিভিন্ন বাজারে।
রাজশাহী মহনাগর পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, এসব ঔষুধ বাজার থেকে উত্তোলনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে আরও কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে নগরীর ভদ্রা জামালপুর এলাকার এই নকল ঔষুধ তৈরীর কারখানাটি থেকে নিয়মিত পুলিশসহ বিভিন্ন শ্রেণির লোকজন মাসোহারা আদায় করত বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে স্থানীয় পুলিশের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ বেশি শোনা যাচ্ছে। স্থানীয় ফাঁড়ির এক কর্মকর্তা ম্যানেজ করে নকল ঔষুধের কারখানাটি পরিচালিত হত বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ সুযােগে স্কয়ার কোম্পানীর মতো কোম্পানীর ঔষুধও নকল করে বাজারজাত করতো আনিছ চক্র।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মহানগরীর চন্দ্রিমা থানাধীন ছােটগ্রাম চন্দ্রিমা আবাসিক-১, বারিন্দ মেডিকেল কলেজের উত্তর পার্শ্বে জনৈক শফিকুল ইসলাম ওরফে আনিছের বসত বাড়ীতে বিভিন্ন প্রকার প্রতিষ্ঠিত ঔষুধ কোম্পানীর মােড়কে নকল ঔষুধ প্রক্রিয়াজাত করে রাজশাহী মহানগরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ডিলারদের মাধ্যমে বাজারজাত করছেন বলে জানতে পারে পুলিশ। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার রাতে শনিবার সকাল পর্যন্ত বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে নকল ঔষুধ কারখানাটির সন্ধান পায় পুলিশ। এসময় কারখানা হতে ঔষুধ তৈরির মেশিন ও সরঞ্জামাদীসহ নিম্নবর্ণিত বিপুল পরিমাণ ঔষুধ উদ্ধার করে।
যার মধ্যে রয়েছে ফয়ার কোম্পানির নকল সেকলাে ১৮৬৪ প্যাকেট, মূল্য অনুমান-১৩,৪২,০৮০/-, এস.বি-ল্যাবরেটরীজ কোম্পানির নকল Power-30 (মােড়কসহ) ৭৬৯ প্যাকেট, মূল্য অনুমান-২,৬৯,১৫০/-, এস.বি-ল্যাবরেটরীজ কোম্পানির নকল Power-30 (মােড়ছাড়া) ৫১৮৮ প্যাকেট, মূল্য অনুমান-১৮,১৫,৮০০/-, এস.বিল্যাবরেটরীজ কোম্পানির নকল Power-30 (সবুজ রং) ৬৫ পাতা, মূল্য অনুমান-২২,৭৫০/-, এস.বিল্যাবরেটরীজ কোম্পানির নকল Power-30 (খােলা) ১৬ কেজি, মূল্য অনুমান-১০,৬৪,০০০/-, নাভানা কোম্পানির নকল পিজোফেন ১৩৫৬ পাতা, মূল্য অনুমান-৯৪,৯২০/-, রিলায়েন্স কোম্পানির নকল ইলিক্সিম ১২৫ পাতা, মূল্য অনুমান-১৭,৫০০/-, রিলায়েন্স কোম্পানির নকল রিলাম ২২ পাতা, মূল্য অনুমান-১,১০০/-, স্কয়ার কোম্পানির নকল সেকলাের খালি মােড়ক ০৬ বন্ধ, মূল্য অনুমান-৩০,০০০/- ও ভেজাল ঔষুধ তৈরির মেশিন বিলিস্টার। মেশিনের মূল্য অনুমান-২২,০০,০০০/-, কমপ্রেশার মেশিন মূল্য-২,৪০,০০০/-, সর্বমােট মূল্য=৭০,৯৭,৩০০/- টাকা।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাতে রাজশাহী মহানগরীর ভদ্রা আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে নকল ঔষুধের কারখানার সন্ধান পায় মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এসময় বিপুল পরিমাণ নকল ঔষুধ, যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট ও ঔষুধ তৈরীর কাঁচামালসহ ঔষুধ তৈরীর একটি মেশিন জব্দ করা হয়। অভিযান চলাকালে দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নকল ঔষুধ তৈরির ওই কারখানায় (বাসায়) অভিযান চালানো হয়। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা।
আটককৃত ব্যক্তি হলেন- নগরীর ভদ্রা জামালপুর এলাকার মৃত আনসার আলীর ছেলে শফিকুল ইসলাম ওরফে আনিছ (৪২) ও তার সহেযাগী রবিউল ইসলাম (৩২)।