Dhaka ০৪:৪১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ

  • Reporter Name
  • Update Time : ১০:০৩:৪২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫
  • 28

মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের চিরশত্রু ইরানের ওপর নজিরবিহীন হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। শুক্রবার (১৩ জুন) রাজধানী তেহরানসহ দেশটির শতাধিক লক্ষ্যবস্তুতে এই হামলা হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি করা এ অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে অপারেশন রাইজিং লায়ন বা জেগে ওঠা সিংহ। হামলার মূল কারণই ছিল পশ্চিমাদের ভাষায় ইরানের বিতর্কিত পারমাণবিক কর্মসূচির সক্ষমতা পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া।

হামলার পাল্টা প্রতিক্রিয়া মধ্যপ্রাচ্যকে একটি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। এদিকে, ইরানও ইসরায়েলের হামলার জবাবে ‘ট্রু প্রমিস ৩’ নামের অভিযান শুরু করেছে।

শুক্রবার (১৩ জুন) ইরানের প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র নাতানজ, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা, শীর্ষ কমান্ডার ও পরমাণু বিজ্ঞানীরা হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। এই হামলায় অন্তত ২০০টি যুদ্ধবিমান অংশ নেয় বলে জানায় ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল।

এদিন ভোররাত থেকে একের পর এক বিমান হামলায় প্রথমে ইরানের সামরিক নেতৃত্ব ও গোয়েন্দা কাঠামোতে আঘাত করে। এরপর ধারাবাহিক হামলায় ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র এবং শেষে দেশটির বৃহত্তম ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র নাতানজে হামলা চালানো হয়।

নাতানজের আংশিক ভূ-উপরিভাগে হওয়ায় সরাসরি আঘাত করতে সক্ষম হয়েছে ইসরায়েল।

গভীর কৌশলগত আঘাত বলছেন বিশ্লেষকরা

হামলায় ইরানের শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীদের লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়। এতে, দেশটির প্রধান তিন সামরিক কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজন সামরিক ব্যক্তিত্ব নিহত হয়েছেন।
ইরানের অভিজাত বাহিনী ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) প্রধান হোসেইন সালামি, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, জরুরি কমান্ড ইউনিটের প্রধান জেনারেল গোলাম আলি রশিদ ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন।

এ ছাড়া, ইরানের পরমাণু জ্বালানি সংস্থার (এইওআই) সাবেক প্রধান ফিরেদুন আব্বাসি ও তেহরানের ইসলামি আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মোহাম্মদ মেহদি তেরাঞ্চিসহ হামলায় দেশটির ৬ জন পরমাণু বিজ্ঞানী প্রাণ হারিয়েছেন। এই ধরনের নেতৃত্বহীনতা ইরানকে কৌশলগতভাবে দুর্বল করে তুলবে বলে শঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

হামলার বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা সংস্থা রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের গবেষক বারকু ওজচেলিক বলেন, ‘তেহরানের গভীরে গিয়ে এমন নির্ভুল হামলা ইসরায়েলি গোয়েন্দা শক্তি ও সামরিক সক্ষমতার নিদর্শন। এটি ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতাকে স্পষ্ট করেছে। এ হামলাটি কেবল একটি কৌশলগত ক্ষতি নয়, বরং ইরানের জন্য এক ভীষণ অপমান।’

পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোর বর্তমান অবস্থা

ইরানের প্রধান সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র নাতানজে কংক্রিট ও পাথরের সুরক্ষায় মাটির ৮ মিটার গভীরে অবস্থিত। হামলার পর সেখান থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠে এলেও ভেতরের প্রকৃত অবস্থা নির্ণয় করতে পারেনি আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)। তবে, ইসরায়েলের দাবি— তারা সেই ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় গুরুতর ক্ষতি করেছে।

ইসরায়েল এখনও ইরানের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ফরদোতে হামলা চালায়নি। এটি প্রায় ৯০ মিটার মাটির নিচে অবস্থিত। কেবল যুক্তরাষ্ট্রের জিবিউ-৫৭/বি ‘বাংকার বাস্টার’ বোমার দিয়েই এটি ধ্বংস করা সম্ভব।

এদিকে, ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ দাবি করেছে, তারা কমান্ডো অভিযান ও ড্রোন ব্যবহার করে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা—যেমন এসফেজাবাদ এয়ারবেস- এ হামলা চালিয়েছে।

আকাশে ইসরায়েলের আধিপত্য

ইরান পাল্টা ১০০টির বেশি ড্রোন ছুড়েছে। ড্রোনগুলো অত্যন্ত ধীরগতির। সবগুলো ড্রোনই মাঝপথে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েল-ইরানের মধ্যবর্তী প্রায় ৭০০ মাইল অতিক্রম করতে তাদের সাত ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগে ড্রোনগুলোর।

তাই, ইসরায়েলে উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি ঘটাতে হলে আরও বড় পরিসরে ড্রোন হামলা চালানো প্রয়োজন হতো। এই মুহূর্তে ইসরায়েলের আকাশ নিয়ন্ত্রণে একচেটিয়া আধিপত্য দেখা যাচ্ছে।

প্রতিশোধের উপায় কী?

ইরানের হাতে এখনও প্রায় তিন হাজার উচ্চগতিসম্পন্ন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। তবে কেরমানশাহ অঞ্চলে অবস্থিত ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিগুলোর ওপর হামলা হওয়ায় এসব অস্ত্রের কার্যক্ষমতা আছে কি-না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, ইরান পরবর্তী প্রতিক্রিয়া— সাইবার হামলা, সন্ত্রাসী হামলা বা আন্তর্জাতিকভাবে রাজনৈতিক চাপে রূপ নিতে পারে।

বিকল্প প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে ইরান সাইবার হামলা বা ভিন্ন কোনো হামলার পথ বেছে নিতে পারে, যদিও সেগুলো সফল হলেও রাজনৈতিকভাবে হয়তো সমপর্যায়ের জবাব হিসেবে বিবেচিত হবে না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো তেহরানের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হবে, কারণ এতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার শঙ্কা তৈরি হতে পারে।

আঞ্চলিক মিত্রদের ভূমিকা কম

লেবাননের হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইসরায়েলের ওপর কোনো হামলা শুরু করবে না। ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা হাজার মাইল দূরে থাকায় তাদের ভূমিকা সীমিত।

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ

ইসরায়েল এখনও ইরানের দ্বিতীয় বৃহৎ সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ফরদোতে হামলা চালায়নি। এটি ৮০-৯০ মিটার গভীরে এবং এটি ধ্বংস করতে যুক্তরাষ্ট্রের ১৪টন ওজনের বাংকার বাস্টার বোমা প্রয়োজন। এ বোমা কেবল মার্কিন বি-২ স্টিলথ বোমারু থেকেই ছোঁড়া সম্ভব।

নাতানজে সফল হামলা মানেই যুদ্ধের সমাপ্তি নয়। ফরদোর মত ‘অপ্রবেশযোগ্য’ লক্ষ্য, ইরানের সম্ভাব্য পাল্টা হামলা এবং আন্তর্জাতিক চাপ—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি একটি দীর্ঘ, অনিশ্চিত ও বিস্তৃত যুদ্ধের ইঙ্গিত দিচ্ছে, যার কোনো তাৎক্ষণিক নিষ্পত্তি দেখা যাচ্ছে না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ

Update Time : ১০:০৩:৪২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫

মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের চিরশত্রু ইরানের ওপর নজিরবিহীন হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। শুক্রবার (১৩ জুন) রাজধানী তেহরানসহ দেশটির শতাধিক লক্ষ্যবস্তুতে এই হামলা হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি করা এ অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে অপারেশন রাইজিং লায়ন বা জেগে ওঠা সিংহ। হামলার মূল কারণই ছিল পশ্চিমাদের ভাষায় ইরানের বিতর্কিত পারমাণবিক কর্মসূচির সক্ষমতা পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া।

হামলার পাল্টা প্রতিক্রিয়া মধ্যপ্রাচ্যকে একটি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। এদিকে, ইরানও ইসরায়েলের হামলার জবাবে ‘ট্রু প্রমিস ৩’ নামের অভিযান শুরু করেছে।

শুক্রবার (১৩ জুন) ইরানের প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র নাতানজ, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা, শীর্ষ কমান্ডার ও পরমাণু বিজ্ঞানীরা হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। এই হামলায় অন্তত ২০০টি যুদ্ধবিমান অংশ নেয় বলে জানায় ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল।

এদিন ভোররাত থেকে একের পর এক বিমান হামলায় প্রথমে ইরানের সামরিক নেতৃত্ব ও গোয়েন্দা কাঠামোতে আঘাত করে। এরপর ধারাবাহিক হামলায় ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র এবং শেষে দেশটির বৃহত্তম ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র নাতানজে হামলা চালানো হয়।

নাতানজের আংশিক ভূ-উপরিভাগে হওয়ায় সরাসরি আঘাত করতে সক্ষম হয়েছে ইসরায়েল।

গভীর কৌশলগত আঘাত বলছেন বিশ্লেষকরা

হামলায় ইরানের শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীদের লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়। এতে, দেশটির প্রধান তিন সামরিক কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজন সামরিক ব্যক্তিত্ব নিহত হয়েছেন।
ইরানের অভিজাত বাহিনী ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) প্রধান হোসেইন সালামি, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, জরুরি কমান্ড ইউনিটের প্রধান জেনারেল গোলাম আলি রশিদ ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন।

এ ছাড়া, ইরানের পরমাণু জ্বালানি সংস্থার (এইওআই) সাবেক প্রধান ফিরেদুন আব্বাসি ও তেহরানের ইসলামি আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মোহাম্মদ মেহদি তেরাঞ্চিসহ হামলায় দেশটির ৬ জন পরমাণু বিজ্ঞানী প্রাণ হারিয়েছেন। এই ধরনের নেতৃত্বহীনতা ইরানকে কৌশলগতভাবে দুর্বল করে তুলবে বলে শঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

হামলার বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা সংস্থা রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের গবেষক বারকু ওজচেলিক বলেন, ‘তেহরানের গভীরে গিয়ে এমন নির্ভুল হামলা ইসরায়েলি গোয়েন্দা শক্তি ও সামরিক সক্ষমতার নিদর্শন। এটি ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতাকে স্পষ্ট করেছে। এ হামলাটি কেবল একটি কৌশলগত ক্ষতি নয়, বরং ইরানের জন্য এক ভীষণ অপমান।’

পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোর বর্তমান অবস্থা

ইরানের প্রধান সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র নাতানজে কংক্রিট ও পাথরের সুরক্ষায় মাটির ৮ মিটার গভীরে অবস্থিত। হামলার পর সেখান থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠে এলেও ভেতরের প্রকৃত অবস্থা নির্ণয় করতে পারেনি আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)। তবে, ইসরায়েলের দাবি— তারা সেই ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় গুরুতর ক্ষতি করেছে।

ইসরায়েল এখনও ইরানের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ফরদোতে হামলা চালায়নি। এটি প্রায় ৯০ মিটার মাটির নিচে অবস্থিত। কেবল যুক্তরাষ্ট্রের জিবিউ-৫৭/বি ‘বাংকার বাস্টার’ বোমার দিয়েই এটি ধ্বংস করা সম্ভব।

এদিকে, ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ দাবি করেছে, তারা কমান্ডো অভিযান ও ড্রোন ব্যবহার করে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা—যেমন এসফেজাবাদ এয়ারবেস- এ হামলা চালিয়েছে।

আকাশে ইসরায়েলের আধিপত্য

ইরান পাল্টা ১০০টির বেশি ড্রোন ছুড়েছে। ড্রোনগুলো অত্যন্ত ধীরগতির। সবগুলো ড্রোনই মাঝপথে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েল-ইরানের মধ্যবর্তী প্রায় ৭০০ মাইল অতিক্রম করতে তাদের সাত ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগে ড্রোনগুলোর।

তাই, ইসরায়েলে উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি ঘটাতে হলে আরও বড় পরিসরে ড্রোন হামলা চালানো প্রয়োজন হতো। এই মুহূর্তে ইসরায়েলের আকাশ নিয়ন্ত্রণে একচেটিয়া আধিপত্য দেখা যাচ্ছে।

প্রতিশোধের উপায় কী?

ইরানের হাতে এখনও প্রায় তিন হাজার উচ্চগতিসম্পন্ন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। তবে কেরমানশাহ অঞ্চলে অবস্থিত ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিগুলোর ওপর হামলা হওয়ায় এসব অস্ত্রের কার্যক্ষমতা আছে কি-না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, ইরান পরবর্তী প্রতিক্রিয়া— সাইবার হামলা, সন্ত্রাসী হামলা বা আন্তর্জাতিকভাবে রাজনৈতিক চাপে রূপ নিতে পারে।

বিকল্প প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে ইরান সাইবার হামলা বা ভিন্ন কোনো হামলার পথ বেছে নিতে পারে, যদিও সেগুলো সফল হলেও রাজনৈতিকভাবে হয়তো সমপর্যায়ের জবাব হিসেবে বিবেচিত হবে না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো তেহরানের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হবে, কারণ এতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার শঙ্কা তৈরি হতে পারে।

আঞ্চলিক মিত্রদের ভূমিকা কম

লেবাননের হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইসরায়েলের ওপর কোনো হামলা শুরু করবে না। ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা হাজার মাইল দূরে থাকায় তাদের ভূমিকা সীমিত।

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ

ইসরায়েল এখনও ইরানের দ্বিতীয় বৃহৎ সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ফরদোতে হামলা চালায়নি। এটি ৮০-৯০ মিটার গভীরে এবং এটি ধ্বংস করতে যুক্তরাষ্ট্রের ১৪টন ওজনের বাংকার বাস্টার বোমা প্রয়োজন। এ বোমা কেবল মার্কিন বি-২ স্টিলথ বোমারু থেকেই ছোঁড়া সম্ভব।

নাতানজে সফল হামলা মানেই যুদ্ধের সমাপ্তি নয়। ফরদোর মত ‘অপ্রবেশযোগ্য’ লক্ষ্য, ইরানের সম্ভাব্য পাল্টা হামলা এবং আন্তর্জাতিক চাপ—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি একটি দীর্ঘ, অনিশ্চিত ও বিস্তৃত যুদ্ধের ইঙ্গিত দিচ্ছে, যার কোনো তাৎক্ষণিক নিষ্পত্তি দেখা যাচ্ছে না।