সুবীর মণ্ডল, বাঁকুড়ার জেলার প্রতিনিধি:
শক্তির আরাধনায় সেজে উঠেছে খাতড়া মহকুমা শহর। অত্যন্ত সুখের-আনন্দের কথা ,করোনার তৃতীয় ঢেউ সে ভাবে বাঁকুড়ার জনজীবনে প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। বিগত বছরের সমস্ত ধরনের দুঃসময় কাটিয়ে স্বাস্থ্য বিধি মেনে বাঁকুুুড়া জেলার খাতড়া মহকুমা শহরের আপামর জনসাধারণ দীপাবলি উৎসবের জোয়ারে মেতে উঠেছে । এই বর্ণময় দীপাবলির উৎসব জুড়ে উন্মাদনা সৃষ্টি হয়েছে ।
বর্ণিল আলোয় ভাসছে গ্রাম থেকে শহর। লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটেছে। জীবনের সমস্ত দুঃখ- কষ্ট কাটিয়ে সমগ্র দক্ষিণ বাঁকুুুড়া তথা জঙ্গলমহলের মানুষের স্বপ্নপূরণের ঠিকানা এখন আলোর উৎসব ।জেলা শহর ও মহাকুমা শহর ছাড়িয়ে সমস্ত ব্লকের বারোয়ারি পুজো গুলোর প্যাণ্ডেল আলোকিত হয়ে উঠেছে। নানান আলোর মালায় সেজে উঠেছে শহরতলির বিভিন্ন জায়গা । নানা থিমের পুজো সাধারণ মানুষকে আকর্ষণ করেছে । একটা বর্ণময় উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা মহকুমা শহরে। পুলিশ প্রশাসন দক্ষতার সঙ্গে ভিড় সামলাতে ব্যস্ত।
দীর্ঘ দুই বছরের বন্দি জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার আনন্দে আত্মহারা আপামর জনসাধারণ।
খাতড়ার শ্মশান কালীর পুজো জেলার মধ্যে সেরা । বাঁকুড়ার খাতড়া মহকুমা শহরের এই কালীর পুজো বাঁকুড়া জেলার অন্যতম বিখ্যাত পুজো। প্রথা মেনে প্রতিদিনই হয় পুজো । কালীপুজোর সময় পাঁচদিন ধরে পুজো চলে আড়ম্বরের সঙ্গে। এক সময়ের ব্যক্তিগত উদ্যোগের পুজো শুরু হলেও এই পুজো আজ সকলের। পুজো উপলক্ষে আয়োজিত হয় নারায়ণ সেবা। লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটে। খাতড়া জলডোবরা ষোলোআনা শ্রী শ্রী কালী_পূজার শুভ উদ্বোধন করলেন বিশিষ্ট সমাজসেবক মাননীয় জয়ন্ত_মিত্র মহাশয়।
এলাকার বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা দের কিছু শীতবস্ত্র বিতরণের মাধ্যমে শুভসূচনা অনুষ্ঠিত হলো।ব্যবস্থাপনায় -জয়দূত ক্লাব।
সবুজ প্রকৃৃতি দিয়ে মোড়া আধুনিক শহর বাঁকুড়ার খাতড়া মহকুমা শহর । এক দশক ধরে এখানে কালী পুজোর রমরমা। তাই জেলার মানুষ বর্তমানে কালীর শহর নামেই একডাকে চেনে এই ছোট্ট অসাধারণ নির্মল প্রকৃতির ছোঁয়ায় গড়ে ওঠা শহরকে । কার্তিক পুজোয় সোনামুখী শহর যেমন মেতে ওঠে আট থেকে আশির মানুষেরা,তেমনি খাতড়া মহকুমা শহরের মানুষ মেতে ওঠে কালীপুজো নিয়ে। বাঁকুড়া জেলার মানচিত্রে খাতড়া মহকুমা শহর কালীপুজোয় নজির সৃষ্টি করে চলেছে এক দশক ধরে। মহকুমা প্রশাসনের অনুমোদনপ্রাপ্ত বেশ কয়েক টি বড় পুজো হলেও ভিন্নভিন্ন নামে প্রায় হাজার দেড়েক পুজো হয় সমগ্র মহকুমা জুড়ে। আটটি ব্লক শহরের বিভিন্ন জায়গায় বহু বড় পুজো অনুষ্ঠিত হয়। প্রাচীনত্বে দিক থেকে খাতড়া শ্মশান কালী ও পাঁপড়ার কালীপুজো এক কথায় অসাধারণ ও অতুলনীয় । বেশ কয়েক বছর ধরে থিমের পুজো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সাবেকিয়ানা বনাম আধুনিকতা ছোঁয়া রয়েছে বিভিন্ন মণ্ডপে। এ বছরে থিমের ছড়াছড়ি। বরফের দেশ থেকে শোলে সিনেমার বর্ণময় দৃশ্য। পুজো মণ্ডপে অভিনবত্ব রয়েছে। খাতড়া শহরের কালীপুজোর মণ্ডপ সেজে উঠেছে নানান ধরনের থিমের আঙ্গিকে। বেশ কয়েক বছর ধরে থিমের পুজো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সুস্থ পরিবেশ বান্ধব পুজোর আয়োজনে খামতি নেই পুুজো উদ্যোক্তাদের। খাতড়া রবীন্দ্র সরণির পুুজো এবার ৩২ বছরে পড়ল। টেরাকোটার মন্দিরের আদলে কালীপুজোর সুদৃশ্য মণ্ডপ সেজে উঠেছে। পুজো কমিটির সম্পাদক শিক্ষক কৌশিক মল্লিক জানালেন–” এবারের পুজোর বাজেট আনুমানিক দেড়লক্ষ টাকা “। খাতড়া গোল্ডেন সূর্য ক্লাব এবার শোলে সিনেমার এক বর্ণময় দৃশ্য ফুুুটিয়ে তুলেছে পুুজো মণ্ডপে। আট থেকে আশির মানুষজনের স্বপ্নপূরণের ঠিকানা হয়ে উঠতে পারে এই মণ্ডপ। পুজো কমিটির তরুণ সম্পাদক রিজু সরকার জানান, এ- বছর পুজোর বাজেট আনুমানিক তিন লক্ষ টাকা।
খাতড়া উত্তর পল্লী সর্বজনীনের পুজো ৩২ বছরে পা দিল। তারা বুদ্ধমূর্তির আদলে মণ্ডপ তৈরি করেছে। পুজোর মূল আকর্ষণ প্রতিমা। খাতড়া দ্য লেজেন্ড ক্লাবের পুুজোর থিম বরফের দেশ।বহু দর্শকদের মন জয় করতে পারে। মণ্ডপ সজ্জায় অভিনবত্ব রয়েছে। মেধাবী সংঘের পুজোর এ-বছরের থিম, করোনা বধে মহাকালী।বেশ অভিনবত্বের ছোঁয়া আছে মণ্ডপ সজ্জায়। খাতড়া নাইন স্টার এ-বছর নিজস্ব মন্দিরে ভক্তি-নিষ্ঠার সঙ্গে পুজোর আয়োজন করেছে। খাতড়া আমরা ক’জন ক্লাবের থিম বাঁকুুুড়ার লণ্ঠন শিল্প। এই পুজো ১১ বছরে পড়েছে। ক্লাবের সম্পাদক মহাশয় জানালেন, বাঁকুড়ার জেলার লোকায়ত শিল্পকে মানুষের কাছে নতুন করে তুলে ধরাই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য।
এছাড়া খাতড়া মহকুমা শহরের শ্রী পল্লীর কালী পুজো বহু পুরোনো। শিল্পী কার্তিক দাসের অসাধারণ শিল্পকর্ম দেখার জন্য মানুষের ভিড় বাড়তে শুরু করে। বহু বছর ধরে থিমের পুজো করে চলেছে মহকুমা শহরের বিভিন্ন পুজোর উদ্যোক্তাগণ । খাতড়া যুব শক্তি এবার প্রথম শক্তি মায়ের আরাধনায় আত্ম প্রকাশ করল।পুজো কমিটির তরুণ সম্পাদক অতনু দত্ত জানালেন, তাদের পুজোর অভিনবত্ব হলো, প্রতিমার আটটি হাত থাকবে। এছাড়া পাঁপড়া ও খাতড়া শ্মশান কালীর পুজো নিয়ে রয়েছে মানুষের উন্মাদনা।গত বছর করোনার আবহে দীপাবলি ও শ্যামাপূজা উপলক্ষে সাধারণ মানুষের মধ্যে কোন উন্মাদনা ছিল না। এ- বছর দীপাবলির উৎসবে মেতে উঠেছে খাতড়া মহকুমা শহর সহ গোটা মহকুমা। আলোর দ্যুতিতে মোহময় রূপ সৃষ্টি হয়েছে গোটা শহরে, সমস্ত মানুষ মুগ্ধ, এ-এক অন্যভুবন ।আলোর উৎসব মানে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে আপোসহীন শুভ শক্তির লড়াই ।ঘুচে যাক মনের তামসিক অন্ধকার ।জয় হোক শুভ শক্তির। সম্প্রীতির অমল বন্ধন সুদৃঢ় হোক।