ক্রীড়া ডেস্ক :
দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে দিল্লিকে হারিয়ে তৃতীয়বারের মতো ফাইনালের টিকিট পেয়েছে কলকাতা।
শেষ ওভারে ১ বল হাতে রেখে জয় পায় নাইটরা। শেষ ওভারের পঞ্চম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ৭ বছর পর কলকাতাকে ফাইনালে তোলেন রাহুল ত্রিপাঠী।
দাপটের সোথে খেলে পয়েন্ট টেবিলে সবার ওপরে ছিলো দিল্লি ক্যাপিট্যালস। তবে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ের দুইটি সুযোগের একটিও কাজে লাগাতে পারলো না তারা। প্রথমে ধোনির চেন্নাইর সাথে পরে মরগান বাহিনীর কাছে হেরে তৃতীয় হয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করলো গত আসরের রানার্সআপ দিল্লি।
চেন্নাই ও কলকাতার মধ্যে হবে এবারের শিরোপার লড়াই। দুই দল এর আগে ২০১২ সালেও ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিলো। সেই ম্যাচ জিতে নিজেদের প্রথম শিরোপা ঘরে তুলেছিলো কলকাতা।
বুধবার টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে আগে ব্যাট করে মাত্র ১৩৫ রানে থেমে যায় দিল্লির ইনিংস। জবাবে ৯৬ রানের উদ্বোধনী জুটির পরেও ম্যাচ জিততে শেষ ওভারে যেতে হয়েছে কলকাতাকে।
শেষ ৪ ওভারে অর্থাৎ ২৪ বলে তাদের প্রয়োজন ছিল মাত্র ১৩ রান। সেখান থেকে শুরু হয় নাটকীয়তা। সহজ ম্যাচকে কলকাতা টেনে নিয়ে যায় রুদ্ধশ্বাস পরিসমাপ্তির দিকে। মাত্র ৭ রানের ব্যবধানে ৬ উইকেট হারিয়ে সহজ জয় কঠিন করে ফেলে মরগান বাহিনী। দলীয় ১২৩ রানের মাথায় নিতিশ রানা, ১২৫ রানে গিল, ১২৬ রানে দিনেশ কার্তিক, ২২৯ রানে অধিনায়ক ইয়ন মরগান, ১৩০ রানে সাকিব আল হাসান এবং ১৩০ রানের মাথায় সুনীল নারিন আউট হন।
তবে নেমেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন কলকাতার দুই ওপেনার শুভমান গিল ও ভেঙ্কটেশ আইয়ার। মনে হচ্ছিলো, পুরো ১০ উইকেটেই জিতবে তারা। কিন্তু ইনিংসের ১৩তম ওভারে কাগিসো রাবাদার বলে দলীয় ৯৬ রানের মাথায় সাজঘরে ফিরে যান আইয়ার।
আউট হওয়ার আগে ৪ চার ও ৩ ছয়ের মারে ৪১ বলে ৫৫ রান করেন আইয়ার। পরে বেশিক্ষণ উইকেটে থাকতে পারেননি তিন নম্বরে নামা নিতিশ রানা। অ্যানরিখ নর্তজের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ১২ বলে ১৩ রান করেন এ বাঁহাতি ব্যাটার।
রানা ফিরে যাওয়ার পরের ওভারে একই পথ ধরেন আরেক ওপেনার শুভমান গিল। একপ্রান্ত ধরে রাখা ইনিংসে তিনি ৪৬ বল থেকে করেন ঠিক ৪৬ রান। কলকাতার সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৭ ওভারে ৩ উইকেটে ১২৫ রান। তখন জয়ের জন্য তাদের দরকার মাত্র ১১ রানের।
কিন্তু ১৮তম ওভারে মাত্র এক রান খরচ করে দীনেশ কার্তিককে বোল্ড করে দেন রাবাদা। ফলে কলকাতার জয়ের সমীকরণ হয় ১২ বলে ১০ রানের। ইনিংসের ১৯তম ওভারে নর্তজের বলে সাজঘরে ফিরে যান কলকাতার অধিনায়ক ইয়ন মরগ্যান, রানের খাতাই খুলতে পারেননি তিনি।
নর্তজের সেই ওভারে আসে মাত্র ৩ রান। ফলে শেষ ওভারে সমীকরণ দাঁড়ায় সাত রানের। উইকেটে তখন রাহুল ত্রিপাঠি ও সাকিব আল হাসান। প্রথম বলে সিঙ্গেল নেন ত্রিপাঠি কিন্তু পরের বল ডট খেলে বসেন সাকিব। অশ্বিনের ওভারের তৃতীয় বলটিও ব্যাটে লাগাতে পারেননি সাকিব। বল আঘাত হানে প্যাডে, সহজ সিদ্ধান্তে লেগ বিফোরের আঙুল তোলেন আম্পায়ার।
ঠিক পরের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লংঅফে ধরা পড়েন সুনিল নারিন। তখনই কলকাতার জন্য কঠিন হয় ম্যাচটি। শেষ দুই বলে জিততে প্রয়োজন ছয় রান। নারিন আউট হওয়ার সময় ব্যাটাররা নিজেদের ক্রস করায় স্ট্রাইক পান ত্রিপাঠি। তিনি অশ্বিনের শর্ট লেন্থের বলটি সোজা বোলারের মাথার ওপর দিয়ে হাঁকান ছক্কা। যার ফলে সহজ ম্যাচে শ্বাসরুদ্ধকর এক জয়ই পায় কলকাতা।
বল হাতে দিল্লির কাগিসু রাবাদা ৪ ওভারে ২৩ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন। এনরিখ নরকিয়া ৪ ওভারে ৩১ রানে নেন ২টি উইকেট। রবীচন্দ্রন অশ্বিন ৩.৫ ওভারে ২৭ রানের বিনিময়ে পান দুটি উইকেট। আবেশ খান ৪ ওভারে ২২ রান খরচায় একটি উইকেট দখল করেন।
এর আগে টস জিতে প্রথমে দিল্লিকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় কলকাতা নাইট রাইডার্স। পৃথ্বি শ ও শিখর ধাওয়ান ২৪ বলে ৩২ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন। ১২ বলে ১৮ করা পৃথ্বিকে এলবিডব্লিউ করে এই জুটিটি ভাঙেন বরুণ চক্রবর্তী। আর ২৩ বলে মাত্র ১৮ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন মার্কাস স্টয়নিস।
শিখর ধাওয়ান ৩৯ বল খেলে করেন ৩৬ রান। এরপর রিশাভ পান্তও (৬) ফিরে গেলে চাপে পড়ে দিল্লি। হেটমায়ার ১০ বলে ১৭ রান করেন। শেষ পর্যন্ত শ্রেয়াস আয়ারের ২৭ বলে ৩০ রানের হার না মানা ইনিংসে দিল্লির সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৩৫।
৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে ২টি উইকেট নেন বরুন চক্রবর্তী। সমান ওভারে ২৮ রান দিয়ে সাকিব ছিলেন উইকেটশূন্য।
শুক্রবার ফাইনালে কলকাতার প্রতিপক্ষ চেন্নাই সুপার কিংস।