মো.আবুল কালাম আজাদ:
মো.মঈনুল হক যার জন্ম ১৮-১২-১৯৫৮ (বৃহস্পতিবার) ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার রঘুনাথগঞ্জ থানার অন্তর্গত চাঁদপুর গ্রামে। বাবা-মো. একরামুল হক ও মা মোছা. বেগম এর তিন ছেলে ও দুই মেয়ে সন্তানের মধ্যে তিনিই সবার বড়। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন অত্যান্ত চঞ্চল প্রকৃতির।১৯৭৯ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় এম.এস.সি পাশ করেন। এম.এস.সি রেজাল্ট বের হ্ওয়ার আগেই তিনি কাঞ্চনতলা
হাই স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৮৫ সালে জঙ্গিপুর উচ্চবিদ্যালয়ে স্থায়ীভাবে পদার্থবিদ্যার শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। যোগদান করার কিছুদিনের মধ্যেই সকলের মন জয় করে প্রিয় শিক্ষকে পরিণত হন। মুর্শিদাবাদ জেলার বিজ্ঞান বিভাগের খুব কম  ছাত্র আছে যারা তার কাছে পদার্থ বিজ্ঞান পড়েনি। শিক্ষার্থীদের ভাষায় যারা মইনুল স্যারের কাছে পদার্থ বিজ্ঞান পড়েনি তারা পদার্থবিদ্যার মজাই বুঝেনি। আর যারা তার কাছ থেকে পদার্থ বিজ্ঞান বুঝতে পারেনি তাদের বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করার যোগ্যতাই নেই। তিনি ছিলেন খুবই দয়ালু উদার এবং রসিক প্রকৃতির তিনি যেখানে যেতেন সকলকেই আনন্দ দিয়ে রাখতেন। যে সকল শিক্ষার্থীদের আর্থিক অবস্থা খারাপ তাদের তিনি ফ্রী পড়াতেন। এমনও দেখা গেছে কোন স্টুডেন্ট খামে টাকা দেওয়ার সময় খুচরা টাকা দিয়েছেন, সেই শিক্ষার্থীকে ডেকে তার কারণ জানতে চেয়েছেন। এবং বলেছেন ‘তুমি আগামী মাস থেকে আমাকে খালি খাম দিও’।
তিনি আরও বলতেন, তুমি যদি অন্যান্য শিক্ষকের কাছে পড়তে চাও তবে আমাকে বলো, আমি তোমার টাকা পরিশোধ করে দেব। প্রতিবছর তিনি মেধাবী দু’একজন শিক্ষার্থীকে তার নিজের বাসায় রেখে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে পড়াশুনার ব্যবস্থা করতেন। এমনও দেখা গেছে কোন শিক্ষার্থী ফরম ফিলাপের শেষের দিন যোগাযোগ করে বলছে, স্যার আমার মনে হয় ফরম পূরণ করা হবেনা, তখন তার ফরম পূরণে দায়িত্ব স্যার নিজে নিতেন। এমনও দেখা গেছে কোন শিক্ষার্থী তার সাইকেল হারিয়ে কান্না করছে; তখন সে পিয়নকে দিয়ে টাকা পাঠিয়ে তার সাইকেল কিনিয়ে দিয়েছে।
এমনকি অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থীকে তিনি
প্রতিমাসে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠাতেন তার পড়াশুনার খরচ বহন করার জন্য। আজ তার শতশত শিক্ষার্থীরা ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারে পরিণত হয়েছে। ২০১৫ সালের এই দিনে, তারা তাদের প্রিয় শিক্ষককে হারিয়ে ভেঙ্গে পড়েছিলেন। তারা বলেন, তিনি আমাদের নিকট শুধু একজন শিক্ষকই ছিলেন না, ছিলেন আমাদের অভিভাবক। তিনি সর্বদা আমাদের সুপরামর্শ ও সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে পথ দেখাতেন। তারা আজও শ্রদ্ধাভরে তাদের স্যারকে স্মরণ করে ও স্যারের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। ২০১২ সালের মে মাসে তিনি হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কলকাতা মেডিকেলে নিয়ে গেলে তারই ছাত্র ডা. রানা তার পরিক্ষা-নিরিক্ষা করেন। এবং জানতে পারেন, তার মাথায় পানি জমে গেছে। পরবর্তীতে বেঙ্গালুরুতে নিয়ে তার মাথার অস্ত্রপাচার করেন।
এরপর মাঝখানে তিনি বেশ কিছুদিন সুস্থ ছিলেন। ২০১৫ সালে পুন:রায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারপর বেশ কয়েকটি হাসপাতালে তার চিকিৎসা করা হলে ডাক্তাররা তাকে সব গুছিয়ে নিতে বললেন।
অর্থাৎ, এককথায় মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি স্বরূপ ৭২ ঘন্টা সময় বেধে দিলেন। পরে ২০১৫ সালের আজকের এই দিনে (৩রা সেপ্টেম্বর) রাত প্রায় ১২.৩০টা তার ওমরপুরের নিজ বাসভবনে তিনি পরলোক গমন করেন। তার মৃত্যুবার্ষিকিতে জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলী। আল্লাহ তাকে বেহেশতবাসী করুন।

1 মন্তব্য

  1. I am one of the beneficiary . Currently i am working as a Software Engineer in Delhi. Whatever I am today only because him. He do everything for my career building. Even my own brother may not do that Whatever he did. If i am going to explain his contribution to my life, then this place should be less. He guided me from 2000 till the that day when he left for another world. Like me many students are there those are benefited by him. He will never wipe out from our life. He is an example to do for society tirelessly and without any expectation. I will not thanks him for his contribution, i will spend my entire life with his all memories ( eating with him, watched tv with him, scooty ride with him, reading papers with him, and many more.) May Allah (SWT) grant him ” Jannat-ul-Firdaus”.
    Thank you Kalam bhai for publishing this wonderful article for a Great man.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে