আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
গতবারের স্মৃতি এখনও দীপ্তিমান। আম্পানের ক্ষত এখনও শুকায়নি। এরই মধ্যে আসছে ‘ইয়াস’। আন্দামান ও বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ ২৪ মে নাগাদ এক ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে যাচ্ছে।
সাইক্লোন তাউকতাই পশ্চিম উপকূলে তাণ্ডব চালানোর ১৫ দিনের মধ্যেই ঝাঁপিয়ে পড়তে চলেছে ‘ইয়াস’।
ক্রান্তীয় অঞ্চলে মহাসাগর বা সাগরের ওপরেই তৈরি হয় সাইক্লোন। এই এলাকায় সূর্যের কিরণ সব চেয়ে বেশি পড়ে। এরই ফলে স্থল ও জলভাগ গরম হয়। উষ্ণ বায়ু মহাসাগরের উপরের দিকে উঠে যায়। এর পরেই সেই শূন্য স্থান ভর্তি করতে ছুটে আসে অন্য জায়গার ঠান্ডা হাওয়া। এরপর সেটাও গরম হয়ে একইভাবে উপরে উঠে যায় এবং এইভাবে এই বৃত্তটা চলতেই থাকে।
বায়ু সব সময়ে উচ্চচাপ যুক্ত অঞ্চল থেকে নিম্নচাপযুক্ত অঞ্চলের অভিমুখে ধাবমান হয়। ঠান্ডা এলাকায় উচ্চচাপ তৈরি হয় আর উষ্ণ এলাকায় নিম্নচাপ তৈরি হয়। এছাড়াও এখানে একটা বিষয় কাজ করে- সেটা হলো- পৃথিবীর গতি। সেটা পশ্চিম থেকে পূর্বে। পৃথিবীর গতির কারণেও বায়ুস্রোতে বিচ্যুতি তৈরি হয়। পৃথিবীর বিষুবরেখা বরাবর এই বায়ুর বিচ্যুত হওয়ার গতি মেরু এলাকার চেয়ে অনেক বেশি।
এই যে এইভাবে কোনও জায়গার হাওয়া গরম হয়ে উপরে উঠে যায়, আর পাশ থেকে ঠান্ডা বাতাস ছুটে আসে- এই মুভমেন্টটা চলতেই থাকে, যতক্ষণ না এই গতিশীল বায়ুস্রোত বা সাইক্লোন কোনও স্থলভাগে এসে ধাক্কা মারে। সাইক্লোন যখন স্থলভাগে আঘাত করে তখন উষ্ণ বায়ু উপরে উঠতে থাকে। এদিকে আর্দ্র বায়ু উপরে উঠে মেঘ তৈরি করে ও বৃষ্টিপাত ঘটায়, যা সাইক্লোনের ঘূর্ণাবর্তের সঙ্গেই চলতে থাকে।
এদিকে, আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস মিলে গিয়ে শনিবার পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে। আজ রোববার সকালে সেটি আরও শক্তি সঞ্চয় করবে। সোমবার (২৪ মে) আরও বেশি শক্তি সঞ্চয় করে সেই নিম্নচাপ উত্তর-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে পরিণত হবে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এ।
পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এটি আরও উত্তর-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে থাকবে ও আরও তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। এরপর ২৬ মে বুধবার সন্ধ্যায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আছড়ে পড়বে বলেই জানিয়েছে ভারতীয় আবহাওয়া অধিদফতর।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি ঠিক কোথায় আছড়ে পড়বে তা এখনও অস্পষ্ট। তবে পশ্চিমবঙ্গেই ঘূর্ণিঝড়ের আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ২৬ মে সন্ধ্যার দিকে ‘ইয়াস’ পশ্চিমবঙ্গ, সংলগ্ন উত্তর ওড়িশা এবং বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করবে।
‘ইয়াস’-এর প্রভাবে সোমবার থেকেই রাজ্যে আবহাওয়ার পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাবে। ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে ৪০-৫০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, ২৫ তারিখ থেকে শুরু হবে বৃষ্টি। ২৬ তারিখ থেকে শুরু হবে ভারী বৃষ্টি। ২৫ তারিখ ৭০ কিলোমিটার গতিবেগে বইতে পারে হাওয়া।
‘ইয়াস’-এর মোকাবিলায় জেলায় জেলায় তুঙ্গে প্রস্তুতি। দুই মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় প্রশাসনিক স্তরে ঝড় মোকাবিলায় সব রকম প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে মৎস্যজীবীদের। পাশাপাশি, সমুদ্রে থাকা মৎস্যজীবীদের আগামী কালের মধ্যেই ফিরে আসতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপ এবং পরবর্তীতে গভীর নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অফিস আরও জানায়, বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে ২৩ মের মধ্যে উপকূলে ফিরে আসতে বলা হয়েছে।
বর্তমানে লঘুচাপটির বায়ুর গতিবেগ ঘণ্টায় ৩০-৩৫ কিমি, সর্বোচ্চ বায়ুর ঝাপটা ঘণ্টায় ৪৫-৫০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে সাগর এলাকায় ইতিমধ্যেই প্রচুর মেঘ সঞ্চার ঘটেছে। লঘুচাপটি আগামী ৭ থেকে ৮ ঘণ্টার মধ্যে সুস্পষ্ট লঘুচাপে ও আগামী ১৬-২০ ঘণ্টার মধ্যে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম বলেন, শনিবার বেলা ২টার পরে লঘুচাপটি সৃষ্টি হয়েছে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলকায়।