সীমান্তে মিয়ানমারের সেনাদের গতিবিধি গত কয়েকদিনে বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ। রোববার বিকালে রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে ডেকে এ উদ্বেগের কথা জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত কয়েকদিনে এ ধরণের তৎপরতা বৃদ্ধি পাবার প্রেক্ষাপটে উদ্বেগ জানিয়ে রোববার একটি চিঠি দেয়া হয়েছে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, গত শুক্রবার থেকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকার কাছাকাছি মিয়ানমারের সৈন্যদের টহল স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়েছে বলে দেখা গেছে। সীমান্ত এলাকার অন্তত তিনটি পয়েন্টে সৈন্যদের ”ব্যাপক সংখ্যক” উপস্থিতি দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার সেলের মহাপরিচালক মো. দেলোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, বাংলাদেশের উদ্বেগ জানিয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রাখাইনে সংঘাত এলাকায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীও রয়েছে। সে কারণে আমাদের জন্য তা বেশ উদ্বেগের। আবার যদি কোনো কারণে রোহিঙ্গা ঢল নামে আমাদের চাপের উপর চাপ বাড়বে।’
সাধারণত দুই দেশের আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকায় এ ধরণের সেনা টহল যদি বাড়ে, এবং আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশের রাষ্ট্রদূতকে ‘তলব’ করে প্রতিবাদ জানানো হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকায় সেনা টহল বেড়েছে, কিন্তু কোন আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হয়নি, সে কারণে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে উদ্বেগ জানানো হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা খবর পেয়েছেন সেনা টহল দুই দেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের একেবারে কাছ ঘেঁষে হচ্ছে না। কিন্তু তারপরেও সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরণের টহল বাড়ানোর ঘটনা দেখা যায়নি বলেই প্রাথমিকভাবে উদ্বেগ বা কনসার্ন বোধ করেছে বাংলাদেশ।
এছাড়া যেহেতু সীমান্ত এলাকায় স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি সেনা টহল লক্ষ করা গেছে, কর্মকর্তারা মনে করছেন ভবিষ্যতে সেটা উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠতে পারে। এজন্যই আনুষ্ঠানিকভাবে সেটা জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
এখানে আরো একটি বিষয় রয়েছে, মিয়ানমারের এই সেনা টহলের একটি অংশ হয়েছে সিভিলিয়ান বাহনে করে, অর্থাৎ মাছ ধরার নৌকায় করে। আর যে তিনটি পয়েন্টে তাদের দেখা গেছে সেগুলো হল কা নিউন ছুয়া, মিন গালারগি ও গার খুইয়া আর এই জায়গাগুলো মূলত মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা।
এটাকে সন্দেহজনক বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা। কারণ মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় এ ধরণের সেনা টহল বাড়লে পরে, হয়ত সেখানকার মুসলমানদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়তে পারে। যার ফলে আরো কিছু লোকজন হয়ত বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে চাইবে, তারও একটা ঝুঁকি তৈরি হয়। ফলে এই সব বিষয় মাথায় রেখেই আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছে মিয়ানমারকে।