সাইমন হোসেন, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি :
ঠাকুরগাঁওয়ে এক পরিবারকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে চাদাঁবাজির অভিযোগ ৬ জনকে আটক করে সদর থানার পুলিশ।
গত শুক্রবার ভোরে ঠাকুরগাঁও শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে আজ দুপুরে কারাগারে পাঠানো হয়।
আগামী মঙ্গলবার তাদের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদনের উপর শুনানির দিন ধার্য রয়েছে বলে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি তানভিরুল ইসলাম জানান।
উক্ত ঘটনায় গ্রেপ্তাকৃতরা হলেন, সদর উপজেলার সালন্দর ইউনিয়নের আরাজি সিংপাড়া গ্রামের প্রয়াত মিজানুর রহমানের ছেলে রুবেল রানা (২৯), শহরের পূর্ব গোয়ালপাড়া এলাকার প্রয়াত আজিজুর রহমানের ছেলে সাঈদী হোসেন (৩১), টিকাপাড়া এলাকার এহিয়া আলীর ছেলে রুস্তম আলী (৩১), পশ্চিম হাজীপাড়া এলাকার জুলহাস উদ্দিনের ছেলে আব্দুর রশিদ (২৮), টিকাপাড়া এলাকার আশিকুর রহমানের ছেলে শফিকুল আলম (৩১) ও ফকিরপাড়া এলাকার সরোয়ার হোসেনের ছেলে রনি হোসেন (৩১)।
এর আগে শুক্রবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে ভুক্তভোগী মো. রাসেল বাদী হয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানায় আটককৃত ছয় জন সহ আরো সাতজনকে অজ্ঞাত করে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার বরাতে ওসি তানভিরুল ইসলাম বলেন, মামলার বাদী মো. রাসেল রানা তার ৮ মাসের গর্ভবতী স্ত্রী নিয়ে শহরের সরকারপাড়া এলাকার চিকিৎসক ইদ্রিস আলীর বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।
চিকিৎসক ইদ্রিস আলীর বাড়িতে ভাড়ায় ওঠার পর থেকেই স্থানীয় চাঁদাবাজরা রাস্তায় রাসেলকে দেখলেই তার কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিল। বিষয়টি রাসেল তার মামাত দুলাভাই সলেমান আলীকে জানান।
ঘটনার বিস্তারিত শোনার জন্য গত ৫ অগাস্ট বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে রাসেলের ভাড়াটে বাড়িতে আসেন মামাত দুলাভাই সলেমান আলী ও তার স্ত্রী রেহানা বেগম।
এর কিছুক্ষণ পর গ্রেপ্তার রুবেল রানা, সাঈদী হোসেন, রুস্তম আলী, আব্দুর রশিদ, শফিকুল ইসলাম ও রনি হোসেনসহ ৫-৭ জন ব্যক্তি ধারালো অস্ত্র নিয়ে রাসেলের ভাড়াটে বাড়িতে প্রবেশ করে।
তারা রাসেলের কাছে ৭০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে; এ সময় রাসেল তাদেরকে চাঁদা দিতে না চাইলে গ্রেপ্তাররাসহ তাদের সহযোগিরা রাসেল, তার গর্ভবতী স্ত্রী, দুলাভাই সলেমান ও তার স্ত্রীকে মারপিট করে।
এসময় অস্ত্রের মুখে ভয়ে রাসেল তাদেরকে ৪০ হাজার টাকা চাঁদা দেন। অবশিষ্ট ৩০ হাজার টাকা চাঁদা না দিলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে রাসেল ও তার পরিবারকে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা করা হবে হুমকি দেয় তারা।
ওসি তানভিরুল ইসলাম আরো বলেন, “প্রায় বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত গ্রেপ্তারকৃত ৬জনসহ তাদের সহযোগিরা রাসেল ও তার পরিবারের অন্যদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখে টাকার জন্য।
পরে কৌশলে রাসেল ও তার দুলাভাই সলেমান আলী বাড়ি থেকে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী স্কয়ার হাসপাতালের পাশে লুকিয়ে থাকে এবং খোঁজ পেয়ে সেখানেও গ্রেপ্তারকৃতরা এসে রাসেল ও তার দুলাভাই সলেমানকে আটক করে ভয়ভীতি দেখায়।
এক পর্যায়ে নিরুপায় হয়ে সলেমান আলী তার বিকাশ একাউন্ট থেকে তাদেরকে ৮ হাজার টাকা দেয় ও অবশিষ্ট ২২ হাজার টাকা কিছুদিন পরে দেওয়া হবে বলে রাসেল ঐ গ্রেপ্তারকৃতদের জানায়।
তিনি আরো বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাসেল ও তার দুলাভাই সলেমান আলীর কাছে ফাঁকা ৩শ টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে নেয় যদি অবশিষ্ট ২২ হাজার টাকা সময়মত না দেওয়া হয় তাহলে রাসেল ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে হুমকি দেয় তারা।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাসেল ও তার দুলাভাইকে ছেড়ে দেয় গ্রেপ্তারকৃতসহ তাদের সহযোগীরা।
ভুক্তভোগী রাসেল জানান, গ্রেপ্তারকৃতসহ তাদের সহযোগীরা আমাদের ছেড়ে দেওয়ার পর তাৎক্ষণিক বাড়ির মালিক চিকিৎসক ইদ্রিস আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় তিনি আমাদের আইনের আশ্রয় নিতে বলেন।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানায় গিয়ে মামলা দায়ের করলে তাৎক্ষণিক পুলিশ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জাবেদ আলী জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত ৬ জন জানায় তারাসহ তাদের একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপ রয়েছে তাদের কাজ মানুষজনকে জিম্মি করে চাঁদা আদায় করা এছাড়াও গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আরও ৭ দিনের রিমান্ডের জন্য আবদেন করা হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি তানভিরুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ৬ জনের মধ্যে রুস্তর আলীর বিরুদ্ধে ৮টি মামলা রয়েছে, এরমধ্যে ৩টি চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে মামলাটি আমরা তদন্ত করছি, সেই সাথে অজ্ঞাত আসামিদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।