টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ ২০ বছর পূর্ণ করল। ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেছিল টাইগাররা।

সাদা পোশাকের সেই ম্যাচে সৌরভ গাঙ্গুলির নেতৃত্বাধীন ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন নাইমুর রহমান দুর্জয়।

সেই সময়ে ভারতের শক্তিশালী বোলিং লাইনকে সামলে প্রথম ইনিংসে ৪০০ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করায় দুর্জয় বাহিনী। অভিষেক টেস্টে ১৪৫ রানের চোখ ধাঁধানো ইনিংস খেলে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। তবে দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিং ব্যর্থতায় ৯ উইকেটে ম্যাচটি হেরে যায় টাইগাররা।

এর পর এই ২০ বছরে ১১৯টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে জয় মাত্র ১৪ ম্যাচে আর ৮৯ হারের পাশাপাশি ড্র ১৬ ম্যাচে। টাইগারদের জয়ের হার ১১.৭৬।

টেস্ট অভিষেকের চার বছর পর, অর্থাৎ ২০০৫ সালের ১০ জানুয়ারি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম জয় পায় বাংলাদেশ। ৩৪টি টেস্ট ম্যাচ খেলার পর এই জয়ের মুখ দেখে টাইগাররা। চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষের ম্যাচটি ২২৬ রানে নিজেদের করে নেয় হাবিবুল বাশারের নেতৃত্বাধীন দল।

এরপর অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো পরাশক্তিকে হারানোর দারুণ সুখস্মৃতি রয়েছে তাদের, কিন্তু নবীন টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া আফগানিস্তানের কাছে ঘরের মাঠে হেরে যাওয়ার দুঃস্বপ্ন এখনও ভোলার নয়। গত বছর চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২২৪ রানে হেরে বসে টাইগাররা।

এখনও দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান, ভারত ও নিউজিল্যান্ড অধরা থেকে গেছে টাইগারদের। তাতে স্পষ্ট হয়ে গেছে, প্রত্যাশা মতো অবস্থানে পৌঁছাতে পারেনি বাংলাদেশের টেস্ট। দেশে ধারাবাহিক কিছু জয় থাকলেও বিদেশে গিয়ে সামর্থ্যের পরিচয় তেমনটা দিতে পারেনি তারা।

তবে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের টেস্ট সিরিজ জয়ের স্মৃতি আছে। ২০০৯ সালের জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদেরই মাটিতে ২-০ তে সিরিজ হারায় বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেই দলটি ছিল দ্বিতীয় সারির। তবে ২০১৮ সালে পূর্ণ শক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজকেই ঘরের মাঠে ২-০তে হারায় মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকরা।

রঙিন পোশাক, বিশেষ করে ওয়ানডে ফরম্যাটে বাংলাদেশ এখন লড়াকু দল। তবে সাদা পোশাকে এখনো সংগ্রাম করছে দলটি। যদিও টেস্ট অধ্যায়ে আমিনুল ইসলাম, হাবিবুল বাশার, খালেদ মাসুদ পাইলট, মোহাম্মদ রফিক, মোহাম্মদ আশরাফুল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও তামিম ইকবালরা বিশ্ব ক্রিকেটে সুপরিচিতি পেয়েছেন।

সাকিব, তামিম ও মুশফিক পেয়েছেন ডাবল সেঞ্চুরি। বল ও ব্যাট হাতে এখন বিশ্বের বাঘা বাঘা অলরাউন্ডারদের অনায়াসে টেক্কা দেন সাকিব। কিন্তু এই তারকাদের সাফল্য ম্লান হয়ে যায় দলীয় পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতার অভাবে।

টেস্টে ২০ বছর পূর্ণ হওয়ার দিনে চাওয়া-পাওয়া হিসেব মিলালে প্রাপ্তির চেয়ে হাহাকারই বেশই থাকবে। সবচেয়ে বড় যে কথাটি মিলবে- বড় শক্তি হতে বাংলাদেশকে পাড়ি দিতে হবে অনেক পথ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মর্যাদাপূর্ণ ফরম্যাটে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে হলে মনোনিবেশ করতে হবে উন্নতির পথ খোঁজায়। দূরদর্শী পরিকল্পনা করে গড়তে হবে শক্ত ভিত। যেন তিন দশক শেষে প্রস্ফূটিত হয় বাংলাদেশের অগ্রগতি, যুক্ত হয় বলার মতো কিছু সাফল্য!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে