ক্রীড়া ডেস্ক :

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জেতার রেকর্ড আছে আগেই। এবার প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে আজ রোববার তৃতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে স্বাগতিক বাংলাদেশ।

মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায়। সরাসরি দেখাবে গাজী টিভি ও টি-স্পোটর্স চ্যানেল।

প্রথম দুই ম্যাচ জিতে ইতোমধ্যে পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচ ৭ উইকেটে এবং উত্তেজনাপূর্ণ দ্বিতীয় ম্যাচে ৪ রানে জয়লাভ করে টাইগাররা। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশী বোলিং তোপে   নিজেদের সর্বনিম্ন মাত্র ৬০ রানে গুটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড।

তবে দ্বিতীয় ম্যাচে উইকেট ভালো হওয়ায় দারুন লড়াই করে সফরকারীরা। যদিও ভালোভাবে ম্যাচটি শেষ করতে পারেনি তারা। অধিনায়ক টম ল্যাথাম ৪৯ বলে অপরাজিত ৬৫ রান করেও দলের হার এড়াতে পারেননি। শেষ দুই বলে প্রয়োজনীয় ৮ রান নিতে পারেননি কিউই অধিনায়ক।

মূলত: মুস্তাফিজুর রহমানের বোলিংয়ের কারণেই শেষ ওভারে প্রয়োজনীয় ১৯ রান তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন ল্যাথাম। অবশ্য দীর্ঘ সময় পর এ দিনটি ভালো যায়নি মুস্তাফিজের। শেষ ওভারে ১৫ রান দিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করলেও ৪ ওভারে মোট ৩৪ রান দিয়ে উইকেটশুন্য থাকেন দ্য ফিজ।

ওই ওভারের চতুর্থ বলটি বিমার দিয়ে নো বলের সঙ্গে বাউন্ডারি খেয়ে তো ম্যাচটি কঠিন করে ফেলেছিলেন ফিজ। তবে দ্রুতই ঘুরে দাঁড়ান কাটার মাস্টার। শেষ দুই বলে ল্যাথামের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংকে দমন করে দলকে জয়ের স্বাদ দেন মুস্তাফিজ।

তাইতো মুস্তাফিজের প্রশংসা করে অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বলেন, ‘নিজের ওপর আস্থা ছিল মুস্তাফিজের এবং আমরা সত্যিই কাছাকাছি চলে গিয়েছিলাম। এটা (বিমার) অস্বাভাবিক ছিল, কিন্তু মুস্তাফিজের প্রতি আমার আস্থা ছিল। এছাড়া মাহেদি নতুন বল দিয়ে সত্যিই ভালো বোলিং করছে এবং উইকেট আরও ভালো হয়েছে। এই (জয়ের) ধারা অব্যাহত রাখতে পেরে আমরা খুশি।’

মাহমুদুল্লাহ যেখানে দুই ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বসী, সেখানে প্রথম ম্যাচে হতাশাজনক পারফরমেন্সের পর লড়াই করতে পারায় খুশী কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথাম। তিনি বলেন, ‘শেষ ওভারে নিষ্পত্তি হওয়ায় ম্যাচটি দারুণ ছিলো। আমার মনে হয়, আমরা শেষ ম্যাচ থেকে শিখেছি এবং জয়ের সুযোগ তৈরি করে শেষ ওভার পর্যন্ত ম্যাচটা নিয়ে গেছি।’

ল্যাথাম বলেন, ‘আমি মনে করি, একটা ভালো উইকেটেই একটা ভালো ম্যাচ হয় এবং গতকাল (শুক্রবার) সেটাই ছিল। তবে আমরা সম্ভবত নিজেদের পরিকল্পনার জায়গায় ছিলাম না। আমি ভেবেছিলাম ১৩০-১৪০ প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলক স্কোর। কিন্তু এটাকে শেষ ওভারে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমি সত্যিই গর্বিত ছিলাম। কারণ ছেলেরা খেলার চিত্র বদলে দিতে পেরে।’

প্রথম দুই ম্যাচ হারের পর কিউইরা জানে, সিরিজে টিকে থাকার জন্য এটিই শেষ সুযোগ। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, সিরিজে ফিরতে সব ধরনের চেষ্টাই করবে নিউজিল্যান্ড। তবে বাংলাদেশ অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। আজ সিরিজের তৃতীয় ম্যাচেই দারুণ এক মাইলফলক স্পর্শ করতে যাচ্ছেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে শততম ম্যাচ খেলতে যাচ্ছেন রিয়াদ। অবশ্য বিশ্বের অষ্টম খেলোয়াড় হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করবেন তিনি।

এদিকে, শেষ ম্যাচে অপরাজিত ৩৭ রানই ম্যাচ সেরার পুরস্কার এনে দেয় মাহমুদুল্লাহকে। এই ইনিংস খেলার পথে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ওপেনার তামিম ইকবালের রানকে টপকে যান তিনি। এই ফরম্যাটে তামিম করেছেন ১,৭০১ রান। এখন মাহমুদুল্লাহর রান ১,৭০২। ১,৭৫৫ রান নিয়ে সবার উপরে আছেন সাকিব আল হাসান।
মাহমুদুল্লাহর জন্য ঐতিহাসিক এই ম্যাচে সিরিজ জিততে পারলে, সেটি অবিস্মরণীয় হয়েই থাকবে।

মাহমুদুল্লাহর সাথে অনন্য একটি মাইলফলকে দাঁড়িয়ে সাকিব আল হাসানও। আর মাত্র দুটি উইকেট পেলেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে সর্বোচ্চ শিকারী হবেন সাকিব। বর্তমানে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গাকে টপকে যাবেন তিনি।

দুটি উইকেট আরও এক উচ্চতায় বসাবে সাকিবকে। আর মাত্র দুটি উইকেট নিলেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৬শ শিকার পূর্ণ হবে সাকিবের। এতে বিশ্বের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ১২ হাজার রান ও ৬শ উইকেট শিকারী হবেন সাকিব।

যাইহোক, শেষ দশ ম্যাচে অষ্টমবারের মতো জয়ের স্বাদ নিয়েছে বাংলাদেশ। যার মাধ্যমে এক বছরে সর্বোচ্চ জয়ের নজির গড়লো বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের পারফরমেন্স আশানুরুপ নয়। ১১০ ম্যাচ খেলে জয় আছে মাত্র ৪০টি। ৬৮ ম্যাচেই হেরেছে টাইগাররা। পরিত্যক্ত হয় ২টি ম্যাচ।

বাংলাদেশ একাদশ (সম্ভাব্য): মোহাম্মদ নাঈম শেখ, লিটন কুমার দাস, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), আফিফ হোসাইন, নুরুল হাসান সোহান, শেখ মাহেদি হাসান, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, নাসুম আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান।

নিউজিল্যান্ড একাদশ (সম্ভাব্য): রাচিন রবীন্দ্র, টম ব্লান্ডেল/ফিন অ্যালেন, উইল ইয়ং, কলিন ডি গ্রান্ডহোম, টম লাথাম (উইকেটরক্ষক ও অধিনায়ক), হেনরি নিকোলস, কোল ম্যাককঞ্চি, ডগ ব্রেসওয়েল, আজাজ প্যাটেল, হামিশ বেনেট ও বেন সিয়ার্স।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে