ইমদাদুল হক ঝিনাইদহ:
ঝিনাইদহ  পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের  কাঞ্চননগর গ্রামের বাসিন্দা  আব্দুল হালিম মোল্লা, পেশায় একজন ট্রাকচালক ছিলেন। ২০১১ সালে গাড়ি চালাতে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি। বাবা আব্দুল হাকিম মোল্লা মারা গেছেন অনেক বছর  আগেই। বেঁচে আছেন মা জামেলা খাতুন।হালিমের দুই বোন তাদের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় তারা স্বামী সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন স্বামীর সংসারে। ঘটনার সাল ২০১১ ইং। আজ প্রায় ১১ বছর হলে গেল জামেলার বুকের ধন আজও বাড়ি ফিরে আসেনি। বোন জামাই সবাই মিলে সারা বাংলাদেশের এমন কোন শহর নেই যে তারা সেখানে খোঁজ করেনি। হালিমা হালিমের বড় বোন তিনি বলেন আমার ভাই গাড়ীতে কাঁঠাল নিয়ে গেল মাগুরার দিকে আর আমরা গাড়ী খুঁজে পেলাম ইশ্বরদী থানায়। আমরা জানতে চাইলাম এই গাড়ীর চালক কোথায় তখনকার ঐ থানার অফিসার বলেন গাড়ীটিতে ডাকাতি হয়েছিল আমরা চালকে খুঁজে পায়নি। হালিমার স্বামী কোরবান  আলী তার কুটুম যে গাড়ি চালাতো সেই গাড়ির ভিতর রক্ত দেখতে পান। তারা একটা সময় ধরেই নিয়েছেন হয়তো হালিম মারা গেছেন। তারপর থেকে  যেখানেই বেওয়ারিশ লাশের কথা শুনেছেন সেখানেই চলে গিয়েছেন হালিমের বোন জামাই হালিমা ও কোরবান আলী। হালিম যে নিখোঁজ হয়েছেন সেই খবরটি নাকি বাড়ি এসে তার মায়ের কাছে বলে যান পবহাটি গ্রামের হালিমের বন্ধু । হালিমের বড় বোনের কাছে জানা যায় ঐ বন্ধুই নাকি হালিমের সাথে  ছিলেন। সে প্রায়ই তাদের বাড়ি আসতেন।হালিমের বউ তখন গর্ভবতী মাঝে মধ্যে এসে বাজার  খরচ করার টাকা দিয়ে যেতেন। হালিমা তার ভায়ের খোঁজ না পেয়ে থানায়   অনেকবার জিডি করতে গেছেন  থানার অফিসার নাকি তাদের অভিযোগ নেয়নি। হালিমার কাছে জিডির কপি চাইলে তিনি বলেন অনেক দিন আগের কথা এখন খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে  তারা বলেছেন আর একবার চেষ্টা করবেন থানায় জিডি করার জন্য। কোরবান আলীর কথা আমার কুটুম মারা যাক ভালো কথা কিন্তু তার লাশটা তো আমরা খুঁজে পাবো। জামেলাও প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি পথের দিকে তাকিয়ে থাকতেন ছেলে আমার কখন আসবে।মাঝে মধ্যে কাঁদতে কাঁদতে বেহুশ হয়ে যেতেন জামেলা। নিয়মিত গোসল খাওয়া ঘুম হতোনা ছেলের শোকে। গভীর রাতে বাড়ির বাইরে চলে যেতেন জামেলা এই বুঝি ছেলে এলো। এভাবেই কবে থেকে যে জামেলা রাস্তার পাগলি হয়ে যাবেন তা পরিবারের কেউ জানতে পারেনি। এখন আর কাউকে চিনতে পারেনা জামেলা। সারাদিন ঝিনাইদহ বাসটার্মিনালের পাশে গাছের নিচে বসে থাকেন। পথচারী যদি কেউ খুশি হয়ে কিছু কিনে দেন হাত পেতে নেয় আবার নেয়ও না। তবে পাগলামি করতে তেমন দেখা যায় না। মানুষের গালাগালি করা বকাবকি করা এমন কোন ভাব তার মধ্যে নেই, সারাক্ষণ জিম ধরে বসে থাকেন। কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনালের রাস্তার পাশে বসে জুতা শেলায়ের কাজ করা এক মুরব্বির কাছে শোনা গেল, পাগলি  মাঝে হারিয়ে যায় আবার আসে। শহরের বিভিন্ন জায়গায় হেঁটে বেড়ায়, আমি প্রায় ৯/১০ বছর ধরে এখানে কাজ করি পাগলিও দেখে আসছি এতো দিন ধরে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে