ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের প্রভাবে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা বাড়লেও দেশের বাজারে এই মুহূর্তে বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ফাওজুল কবির খান।
তিনি জানান, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের ওপর নজর রাখা হচ্ছে। আপাতত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) মুনাফা থেকে সমন্বয় করা হবে।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) বিকেলে বিদ্যুৎ ভবনে লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ পিএলসি এবং জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের মধ্যে ১০ বছর মেয়াদি গ্যাস সরবরাহ চুক্তি অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
চুক্তি অনুযায়ী, জালালাবাদ গ্যাস লাফার্জহোলসিমকে আগামী ১০ বছরে দৈনিক ১৬ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস সরবরাহ করবে, যা আগামী বছরের ১৮ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘যুদ্ধের মধ্যে একটি তেলের জাহাজ বন্দরে এসেছে, বাংলাদেশে পর্যাপ্ত মজুদ হাতে রয়েছে। আমাদের সুবিধা হচ্ছে সরবরাহকারীরা বিভিন্ন জায়গা থেকে নিয়ে আসেন। সোর্স মধ্যপ্রাচ্য হলেও অনেক সরবরাহকারী রয়েছে যারা সিঙ্গাপুর থেকে, কেউ মালয়েশিয়ার মার্কেট থেকে সরবরাহ করেন।
সে কারণে তেলের সরবরাহ নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। তবু আমরা যুদ্ধের ওপর নজর রাখছি।’
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে সেখানে ভর্তুকি দেওয়া হবে কি না, এমন বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে বিপিসির মুনাফা থেকে তা পূরণ করা হবে। আপাতত জ্বালানি তেলে ভর্তুকি কিংবা দাম বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই।
লাফার্জহোলসিমের সঙ্গে চুক্তি প্রসঙ্গে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘এই চুক্তিটা শুধু একটি গ্যাস সরবরাহ চুক্তি না। বাংলাদেশ যে বিনিয়োগের জন্য একটি ভালো জায়গা, সেটিও বিশ্বের কাছে বার্তা দেওয়া। এখানে একটি সুবিধা রয়েছে, অন্য সব কম্পানি ঢাকায়, যেখানে আমাদের গ্যাসের সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। আর লাফার্জে অবস্থান হচ্ছে সিলেট অঞ্চলে।’
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা নতুন বিনিয়োগের পাশাপাশি পুরাতন বিনিয়োগকে ধরে রাখতে কাজ করছি।
লাফার্জ হচ্ছে গ্লোবাল লিডার তাদের সঙ্গে চুক্তি করতে পেরে আমরা আনন্দিত। এই চুক্তির মাধ্যমে একটি বার্তা পৌঁছে দেওয়া। যারা এখানে বিনিয়োগ করতে আসবে তারা হয়তো তাদের কাছে জানার চেষ্টা করবে। তাদের কাছে যেন বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালো ধারণা পায়। তাদের ফিডব্যাক থেকে অনেকেই আগ্রহী হবেন বলে মনে করি।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো সিজফ্রিয়েড রেঙ্গলির বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, এই চুক্তি প্রযুক্তি ব্যবহার বাংলাদেশে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনে অনেক ভূমিকা রাখবে।’
ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য কাজ করছি। এখানে অনেক ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা প্রকাশ করেছে। সেখানে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে খুবই আশাব্যঞ্জক। আমরা এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে একসঙ্গে কাজ করতে চাই।’
লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ পিএলসির সিইও ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘লাফার্জহোলসিম শুধু সিমেন্ট ও ক্লিংকার তৈরি করে না, এখানে স্কিল জনশক্তি তৈরি করছি। যাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা হয়। যারা বিশ্বের অনেক দেশে সুনামের সঙ্গে কাজ করছে।’
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত স্পেনের রাষ্ট্রদূত গ্যাব্রিয়েল মারিয়া সিস্তিয়াগা ওচোয়া ডি চিনচেত্রু বিডার ইনভেস্টমেন্ট সামিট, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রেজানুর রহমান, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম।