Dhaka ০৭:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জিম্মি নারী ও শিশুদের ‘মানবঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করছে সন্ত্রাসীরা

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৩:৫০:৩৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫
  • ১৭ Time View

পাকিস্তানের বেলুচিস্তান অঞ্চলে যাত্রীবাহী একটি ট্রেনে হামলা চালিয়েছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বেলুচিস্তান প্রদেশের বোলান এলাকায় বেলুচ লিবারেশন আর্মির (বিএলএ) সন্ত্রাসীরা কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনে হামলার পর শত শত যাত্রীকে জিম্মি করে।

এই ঘটনায় যাত্রীদের উদ্ধারে সেখানে অভিযান চালাচ্ছে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী। তবে সেনা অভিযান থেকে নিজেদের বাঁচাতে সন্ত্রাসীরা জিম্মি নারী ও শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার (১২ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, হামলার শিকার জাফর এক্সপ্রেস থেকে কিছু নারী ও শিশু জিম্মিকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে সন্ত্রাসীরা যে দাবি করেছে তা খারিজ করে দিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্র ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ প্রতিমন্ত্রী তালাল চৌধুরী। মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, হামলাকারীরা তাদের (নারী ও শিশুদের) “মানবঢাল” হিসেবে ব্যবহার করছে।

জিও নিউজের অনুষ্ঠান ‘আজ শাহজেব খানজাদা কে সাথ’-এ বক্তব্য রাখার সময় তালাল বলেন, “নিরাপত্তা বাহিনী সতর্কতা অবলম্বন করছে কারণ প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে… তারা পূর্ণাঙ্গ অভিযান পরিচালনা করছে এবং শিগগিরই সমস্ত যাত্রীকে উদ্ধার করা হবে।”

এর আগে বেলুচিস্তানের বোলান জেলায় সন্ত্রাসীরা জাফর এক্সপ্রেসে হামলা চালিয়ে নারী ও শিশুসহ যাত্রীদের জিম্মি করে। নিরাপত্তা সূত্রের মতে, ৪০০ জনেরও বেশি যাত্রী নিয়ে ৯ টি বগিতে ট্রেনটি কোয়েটা থেকে খাইবার পাখতুনখাওয়ার রাজধানী পেশোয়ার যাওয়ার পথে হামলার শিকার হয়।

হামলার বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, দুপুরের দিকে একটি প্রত্যন্ত এলাকায় ট্রেনটিকে জিম্মি করা হয়। নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে শুরু করলে কিছু যাত্রীকে মুক্তি দেওয়া হয় বলে তিনি জানান, তবে মুক্তি পাওয়া যাত্রীদের সংখ্যা প্রকাশ করতে পারেননি তিনি।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, মুক্তিপ্রাপ্ত যাত্রীদের নিকটতম স্টেশনে এবং সেখান থেকে তাদের নির্ধারিত গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তিনি নিশ্চিত করেছেন, জিম্মিদের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারও রয়েছেন।

মন্ত্রী আরও বলেন, সন্ত্রাসীরা অনেক যাত্রীকে নিকটবর্তী পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, নারী ও শিশুদের আক্রমণকারীরা ছেড়ে দেয়নি বরং নিরাপত্তা বাহিনীর প্রচেষ্টার মাধ্যমে উদ্ধার করা হয়েছে।

আক্রমণকারীদের কাপুরুষ আখ্যা দিয়ে তালাল বলেন, তারা হামলার জন্য নরম লক্ষ্যবস্তু বেছে নেয় এবং লুকিয়ে আক্রমণ করে। তিনি কোনও গোষ্ঠী বা কারও নাম উল্লেখ না করে বলেন, “দুর্ভাগ্যবশত, এই ধরনের ঘটনাগুলোকে শত্রুদের পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব জনগণও সোশ্যাল মিডিয়ায় সমর্থন করছে।”

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বানও জানান এই প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এই সন্ত্রাসীরা আফগানিস্তান থেকে সমর্থন পায় বলে প্রমাণ রয়েছে। আফগানিস্তানের মাদকের অর্থ দিয়ে তাদের অর্থায়ন করা হচ্ছে।”

এদিকে বেলুচিস্তানে ট্রেনে জঙ্গিদের হাতে জিম্মি ১০৪ জন যাত্রীকে উদ্ধার করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। এসময় অভিযানে অন্তত ১৬ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ৫৮ জন পুরুষ, ৩১ জন নারী ও ১৫ জন শিশু রয়েছে।

এছাড়া ১৭ জন আহত যাত্রীকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে। অন্য যাত্রীদের উদ্ধারে এখনও অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনী।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

জিম্মি নারী ও শিশুদের ‘মানবঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করছে সন্ত্রাসীরা

Update Time : ০৩:৫০:৩৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

পাকিস্তানের বেলুচিস্তান অঞ্চলে যাত্রীবাহী একটি ট্রেনে হামলা চালিয়েছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বেলুচিস্তান প্রদেশের বোলান এলাকায় বেলুচ লিবারেশন আর্মির (বিএলএ) সন্ত্রাসীরা কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনে হামলার পর শত শত যাত্রীকে জিম্মি করে।

এই ঘটনায় যাত্রীদের উদ্ধারে সেখানে অভিযান চালাচ্ছে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী। তবে সেনা অভিযান থেকে নিজেদের বাঁচাতে সন্ত্রাসীরা জিম্মি নারী ও শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার (১২ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, হামলার শিকার জাফর এক্সপ্রেস থেকে কিছু নারী ও শিশু জিম্মিকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে সন্ত্রাসীরা যে দাবি করেছে তা খারিজ করে দিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্র ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ প্রতিমন্ত্রী তালাল চৌধুরী। মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, হামলাকারীরা তাদের (নারী ও শিশুদের) “মানবঢাল” হিসেবে ব্যবহার করছে।

জিও নিউজের অনুষ্ঠান ‘আজ শাহজেব খানজাদা কে সাথ’-এ বক্তব্য রাখার সময় তালাল বলেন, “নিরাপত্তা বাহিনী সতর্কতা অবলম্বন করছে কারণ প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে… তারা পূর্ণাঙ্গ অভিযান পরিচালনা করছে এবং শিগগিরই সমস্ত যাত্রীকে উদ্ধার করা হবে।”

এর আগে বেলুচিস্তানের বোলান জেলায় সন্ত্রাসীরা জাফর এক্সপ্রেসে হামলা চালিয়ে নারী ও শিশুসহ যাত্রীদের জিম্মি করে। নিরাপত্তা সূত্রের মতে, ৪০০ জনেরও বেশি যাত্রী নিয়ে ৯ টি বগিতে ট্রেনটি কোয়েটা থেকে খাইবার পাখতুনখাওয়ার রাজধানী পেশোয়ার যাওয়ার পথে হামলার শিকার হয়।

হামলার বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, দুপুরের দিকে একটি প্রত্যন্ত এলাকায় ট্রেনটিকে জিম্মি করা হয়। নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে শুরু করলে কিছু যাত্রীকে মুক্তি দেওয়া হয় বলে তিনি জানান, তবে মুক্তি পাওয়া যাত্রীদের সংখ্যা প্রকাশ করতে পারেননি তিনি।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, মুক্তিপ্রাপ্ত যাত্রীদের নিকটতম স্টেশনে এবং সেখান থেকে তাদের নির্ধারিত গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তিনি নিশ্চিত করেছেন, জিম্মিদের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারও রয়েছেন।

মন্ত্রী আরও বলেন, সন্ত্রাসীরা অনেক যাত্রীকে নিকটবর্তী পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, নারী ও শিশুদের আক্রমণকারীরা ছেড়ে দেয়নি বরং নিরাপত্তা বাহিনীর প্রচেষ্টার মাধ্যমে উদ্ধার করা হয়েছে।

আক্রমণকারীদের কাপুরুষ আখ্যা দিয়ে তালাল বলেন, তারা হামলার জন্য নরম লক্ষ্যবস্তু বেছে নেয় এবং লুকিয়ে আক্রমণ করে। তিনি কোনও গোষ্ঠী বা কারও নাম উল্লেখ না করে বলেন, “দুর্ভাগ্যবশত, এই ধরনের ঘটনাগুলোকে শত্রুদের পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব জনগণও সোশ্যাল মিডিয়ায় সমর্থন করছে।”

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বানও জানান এই প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এই সন্ত্রাসীরা আফগানিস্তান থেকে সমর্থন পায় বলে প্রমাণ রয়েছে। আফগানিস্তানের মাদকের অর্থ দিয়ে তাদের অর্থায়ন করা হচ্ছে।”

এদিকে বেলুচিস্তানে ট্রেনে জঙ্গিদের হাতে জিম্মি ১০৪ জন যাত্রীকে উদ্ধার করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। এসময় অভিযানে অন্তত ১৬ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ৫৮ জন পুরুষ, ৩১ জন নারী ও ১৫ জন শিশু রয়েছে।

এছাড়া ১৭ জন আহত যাত্রীকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে। অন্য যাত্রীদের উদ্ধারে এখনও অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনী।