রাজশাহী প্রতিনিধি:-
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামানের সহধর্মিণী এবং রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও রাসিক মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটনের মাতা জাহানারা জামানের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী বিনম্র শ্রদ্ধার সাথে পালিত হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীর কাদিরগঞ্জস্থ পারিবারিক কবরস্থানে মরহুমা জাহানারা জামানের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেছেন পরিবারের সদস্যবৃন্দ।
এছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীবৃন্দ, রাসিকের কাউন্সিলর-কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর কবরস্থান সংলগ্ন মাঠে মরহুমার আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
দোয়া মাহফিলে রাসিক মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, পরম আরাধ্য ব্যক্তি মা। মা সন্তানের সুখের জন্য অনেক ত্যাগতীতিক্ষা করে থাকেন। আমার বাবা শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে সকল চড়ায় উৎরায়ে মা ছিলেন আজীবন সঙ্গী। রাজনৈতিক জীবনের সকল কর্মকাণ্ডে পরামর্শ প্রদান করেছেন।
মেয়র আরো বলেন, ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর বাবার মৃত্যুর পর অনেক কষ্টের জীবন অতিবাহিত করতে হয়েছে। বাবা শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান মন্ত্রী থাকার পরও তেমন কোন অর্থসম্পদ ছিলনা। বাবার দুটি ব্যাংকে মাত্র ৭২৫০ টাকা ছিল। আমার পিতার অবর্তমানে পিতার ভূমিকায় ছিলেন আমার মা জাহানারা জামান। আমার পিতার রেখে যাওয়া আদর্শে মা আমাদের বড় করেছেন। তিনি চলে গেছেন, কিন্তু আমাদের জন্য রেখে গেছেন আদর্শ। সেই আদর্শ ধারণ করে আমি ও আমার পরিবার মানুষের পাশে আছি। বাবার মৃত্যুর পর আমি যখন কোলকাতা থেকে বাংলাদেশে আসি তখন মনে হয়েছিলো মাথার উপর ছাদ নেই। সেই সময় আমার মা পরিবারের সকল দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করেছেন। যার জন্য তাঁকে অনেক উত্তাল সাগর পাড়ি দিতে হয়েছে। বাবা সংসদ সদস্য থাকাকালিন যে সম্মানি পেতেন তিনি মাকে সেটা দিয়ে দিতেন। মা সেখান থেকেই কিছু টাকা প্রতিমাসেই সঞ্চয় করতেন। মা পরিবারের খরচের সকল ঋন পরিশোধ করে দিতেন। আমি তখনও কোথাও টাকা পরিশোধ করে না আসলে মা আমাকে বকাবকি করতেন কিন্তু সেই ঋন তিনিই পরিশোধ করে দিতেন। তিনি এত বড় নেতার সহধর্মিণী হয়েও রাজনীতি থেকে কোন সুবিধা নিতে চান নি। আমার শিক্ষাজীবন থেকে প্রতিষ্ঠালাভ অবধি প্রেরণার মূল উৎস আমার মা। তাঁর এই ঋন আমি কখনও পরিশোধ করতে পারবো না। আমি তাঁর প্রতি চিরকৃতজ্ঞ।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধরণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ ভাবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য এবং নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। রাজনীতি করার সময় তিনি যখন পরিবারকে তেমন দেখাশোনা করতে পারতেন না। তখন তাঁর সহধর্মিণী জাহানারা জামান তাঁর ছেলে-মেয়েকে অতি যত্ন সহকারে লালন পালন করেছেন। আমাদেরকে বাবার অনুপস্থিতি অনুভব করতে দেন নি। তাঁর সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করতে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে গেছেন।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় প্রথমে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও রাসিক মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটনের নেতৃত্বে মরহুমার কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন মহানগর আওয়ামী লীগ। এ সময় মরহুমার পুত্রবধূ রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বিশিষ্ট সমাজসেবী শাহীন আকতার রেনী সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পরিবারের পক্ষ থেকে জাহানারা জামানের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন মরহুমার দৌহিত্র আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিয়ষক উপ-কমিটির সদস্য, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ডা. আনিকা ফারিহা জামান অর্ণা এবং অর্ণার স্বামী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের প্রভাষক মো. রেজভী আহমেদ ভূঁইয়া।
মরহুমা জাহানারা জামানের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পর্ণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরবৃন্দ, মহানগর যুবলীগ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহানগর কৃষক লীগ, মহানগর তাতীঁ লীগ, মহানগর মহিলা যুবলীগ, মহানগর জাতীয় শ্রমিক লীগ, রেলওয়ে শ্রমিক লীগ, মহানগর ছাত্রলীগ, রাবি ছাত্রলীগ, রুয়েট ছাত্রলীগ, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড, রাজশাহী ওয়াসা‘র কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, মতিহার থানা আওয়ামী লীগ, ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগসহ ওয়ার্ড ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাওলানা মুহাঃ বারকুল্লাহ বিন দুরুল হুদা।