Dhaka ০৯:৪৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জঙ্গলমহলে বিপদসীমা অতিক্রম করছে ডুলুংনদী, বিপজ্জনক সেতুর উপর দিয়ে বইছে জল ; দাবি নতুন সেতু

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৬:৪৭:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুন ২০২১
  • ৫৯ Time View

সুবীর মণ্ডল, বাঁকুুুড়া জেলা প্রতিনিধি:

 (ঝাড়গ্রাম)এত মিষ্টি যে নদীর নাম সে নদী যে সুন্দরী হবে তা ধরেই নেওয়া যায় তবে এই নদী শুধু  সুন্দরীই নয় যুবতীর মতন উচ্ছলও। বিভিন্ন  ঋতুতে রূপ বদলায়।

শীতে  শীর্ণকায়, বর্ষায় উচ্ছল যুবতী, শরীর জুড়ে  দুরন্তপনার চিহ্ন। প্রাচীন কনকদূর্গা মন্দিরের পেছনের দিকের পথ নেমে গেছে কনক অরণ্যের সবুজ দেওয়াল ভেদ করে ডুলুং নদীর ধারে, সংক্ষিপ্ত যাত্রাপথ।জঙ্গলমহলের প্রিয় নদী  সুবর্ণরেখার শাখানদী রূপসী   ডুলুং-এর উৎপত্তি ছোটোনাগপুর মালভূমির বুকে, পূর্ব সিংভুম জেলার (ঝাড়খণ্ড) চাকুলিয়ার কাছে। সেখান থেকে ভিন্ন পথে সুবর্নরেখার এই  শাখানদী বয়ে গেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের বীনপুরের দিকে; বীনপুরের ডুলুংডিহার কাছে বর্ষাস্নাত দেড় নালা, কোপান নালা এবং পালপাতা নালার মতন মরসুমি ঝর্ণা ও নদীর সাথে মিশে, মিষ্টি ডুলুং নাম নিয়ে ঝাড়গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে গোপীবল্লভপুর হয়ে আবারও গিয়ে মিশেছে সেই সুবর্ণরেখাতেই, যাত্রাপথে রেখে গেছে তার রূপকথার সাক্ষী।এবং দুরন্তপনা আপনার মনে ভয় ধরাতে পারে, তখন সে জেগে ওঠে ভয়ংকরী রূপে।নদীর ধারের কটা সিঁড়ি ভেঙে নেমে আসতে হয় লাল কাঁকরের পটভূমিতে, আরো কিছুটা এগোলেই স্পর্শ পাওয়া যাবে স্বচ্ছ, শীতল এবং দুরন্ত ডুলুং নদীর; শান্ত ও স্নিগ্ধ করবেই সে । তবে বর্ষাকালে এর ব্যপ্তি এবং দুরন্তপনা  মনে ভয় ধরাতে পারে, তখন সে জেগে ওঠে ভয়ংকরী রূপে।স্বচ্ছ তার জল বয়ে গেছে ছোটোখাটো পাথুরে বাধা অতিক্রম করে আপন মনে আপনার মনটাকে ভিজিয়ে। নদীর এই পাড় বরাবর জংগল হলেও কিছু কিছু খালি অঞ্চলও আছে, এদিক সেদিক কিছু দূরে গ্রামের মানুষরা তাদের নিত্যকার কাজকর্ম সেরে নিচ্ছেন, ডুলুং যেন প্রান্তভূমির মানুষ জনের নিত্য দিনের সাথী, সুখ- দুঃখের  চিরসাথী, ঘর- গৃৃৃহস্থালিরকাজ সারা, স্নান করা এবং মাছ ধরা। নদীর অপর পাড় সবুজ হও জংগলময় নয়, চাষের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে প্রধানত। জল কম থাকলে নদী পেড়িয়ে কিছুটা হেঁটে পৌঁছে যাওয়া যায় কাছের চিল্কিগড় রাজবাড়ীর সীমানায়, পিকনিকের মরসুমে চুড়ান্ত ভাবে নিগৃহীত হয়  জঙ্গলমহলের  প্রিয় এই ডুলুং, তার ছাপ থেকে যায় অনেকদিন পর্যন্ত।  শীতের সময়  থার্মোকল, চিপ্সের প্যাকেট, প্লাস্টিক বা কাঁচের বোতোল পড়ে থাকে যত্রতত্র, দূষণের ক্ষত বুকে নিয়ে তির তির করে বয়ে চলেছে   আপন ছন্দে, নামে নদী। কয়েক দিনের  একটানা  বৃষ্টিতে,জলস্তর বাড়ছে ক্রমশ। বর্তমানে   সেতুর উপর দিয়ে বইছে জলের স্রোত।

ফলে  ঝাড়গ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন জামবনি। ব্যাহত স্কুল, চিকিৎসা,গণপরিবহণ ব্যবস্থা। বিকল্প রাস্তা বলতে ছ’নম্বর জাতীয় সড়ক। সে পথেও বেহাল সেতু।

কয়েকদিন বাঁকুুুড়া- ঝাড়গ্রাম- পুরুলিয়া জুড়ে    টানা বৃষ্টি। জল বাড়ছে ঝাড়গ্রামের সুবর্ণরেখা, ডুলুং, তারাফেনি নদীর। রাজ্য সড়কে ডুলুং নদীর জল বইছে ডুলুং সেতুর উপর দিয়ে। বহু পুরোন সেতুর এই ছবি প্রতি বর্ষার। এর ফলে ঝাড়গ্রাম সদরের সঙ্গে জামবনি ব্লকের যোগাযোগ আপাতত বিচ্ছিন্ন। সেতু পেরতে না পেরে আটকে আছে লরি, ট্রাক।আতঙ্ক বাড়ছে নদী তীরের বাসিন্দাদের। শুধু এই সেতুই নয়। রংপুর থেকে ঝাড়গ্রাম যাওয়ায় তারাফেনি নদীর উপর সেতুও জলের তলায়।

চিলকিগড়ের বাসিন্দাদের বিভিন্ন কাজে নদী পেরিয়ে ব্লক সদর গিধনিতে যেতে হয়। বিপদে পড়েছেন তাঁরাও। বিকল্প পথ বলতে ছ’নম্বর জাতীয় সড়ক। ঝাড়গ্রামের উপর দিয়ে পথ গিয়েছে ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা। কিন্তু সেই পথেও ডুলুং নদীর উপর সেতু বেহাল। এবড়ো-খেবড়ো, জায়গায় জায়গায় গর্ত। যে কোনও সময়ে ঘটে যেতে পারে বড়সড় বিপদ ।ডুলুং নদীর উপর ভাঙাচোরা সেতুর পাশে সেকোঘাটে নতুন ব্রিজ তৈরির কাজ শুরু করেছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দু’ বছর হয়ে গেলেও কাজ সেভাবে এগোয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের সমস্যা ভগ্ন সেতু।নতুন সেতুর নির্মাণ যাতে দ্রুত এগিয়ে চলে ,সে বিষয়ে সবাই মিলে  দাবি জানাচ্ছে জেলা প্রশাসনের কাছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

জঙ্গলমহলে বিপদসীমা অতিক্রম করছে ডুলুংনদী, বিপজ্জনক সেতুর উপর দিয়ে বইছে জল ; দাবি নতুন সেতু

Update Time : ০৬:৪৭:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুন ২০২১

সুবীর মণ্ডল, বাঁকুুুড়া জেলা প্রতিনিধি:

 (ঝাড়গ্রাম)এত মিষ্টি যে নদীর নাম সে নদী যে সুন্দরী হবে তা ধরেই নেওয়া যায় তবে এই নদী শুধু  সুন্দরীই নয় যুবতীর মতন উচ্ছলও। বিভিন্ন  ঋতুতে রূপ বদলায়।

শীতে  শীর্ণকায়, বর্ষায় উচ্ছল যুবতী, শরীর জুড়ে  দুরন্তপনার চিহ্ন। প্রাচীন কনকদূর্গা মন্দিরের পেছনের দিকের পথ নেমে গেছে কনক অরণ্যের সবুজ দেওয়াল ভেদ করে ডুলুং নদীর ধারে, সংক্ষিপ্ত যাত্রাপথ।জঙ্গলমহলের প্রিয় নদী  সুবর্ণরেখার শাখানদী রূপসী   ডুলুং-এর উৎপত্তি ছোটোনাগপুর মালভূমির বুকে, পূর্ব সিংভুম জেলার (ঝাড়খণ্ড) চাকুলিয়ার কাছে। সেখান থেকে ভিন্ন পথে সুবর্নরেখার এই  শাখানদী বয়ে গেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের বীনপুরের দিকে; বীনপুরের ডুলুংডিহার কাছে বর্ষাস্নাত দেড় নালা, কোপান নালা এবং পালপাতা নালার মতন মরসুমি ঝর্ণা ও নদীর সাথে মিশে, মিষ্টি ডুলুং নাম নিয়ে ঝাড়গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে গোপীবল্লভপুর হয়ে আবারও গিয়ে মিশেছে সেই সুবর্ণরেখাতেই, যাত্রাপথে রেখে গেছে তার রূপকথার সাক্ষী।এবং দুরন্তপনা আপনার মনে ভয় ধরাতে পারে, তখন সে জেগে ওঠে ভয়ংকরী রূপে।নদীর ধারের কটা সিঁড়ি ভেঙে নেমে আসতে হয় লাল কাঁকরের পটভূমিতে, আরো কিছুটা এগোলেই স্পর্শ পাওয়া যাবে স্বচ্ছ, শীতল এবং দুরন্ত ডুলুং নদীর; শান্ত ও স্নিগ্ধ করবেই সে । তবে বর্ষাকালে এর ব্যপ্তি এবং দুরন্তপনা  মনে ভয় ধরাতে পারে, তখন সে জেগে ওঠে ভয়ংকরী রূপে।স্বচ্ছ তার জল বয়ে গেছে ছোটোখাটো পাথুরে বাধা অতিক্রম করে আপন মনে আপনার মনটাকে ভিজিয়ে। নদীর এই পাড় বরাবর জংগল হলেও কিছু কিছু খালি অঞ্চলও আছে, এদিক সেদিক কিছু দূরে গ্রামের মানুষরা তাদের নিত্যকার কাজকর্ম সেরে নিচ্ছেন, ডুলুং যেন প্রান্তভূমির মানুষ জনের নিত্য দিনের সাথী, সুখ- দুঃখের  চিরসাথী, ঘর- গৃৃৃহস্থালিরকাজ সারা, স্নান করা এবং মাছ ধরা। নদীর অপর পাড় সবুজ হও জংগলময় নয়, চাষের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে প্রধানত। জল কম থাকলে নদী পেড়িয়ে কিছুটা হেঁটে পৌঁছে যাওয়া যায় কাছের চিল্কিগড় রাজবাড়ীর সীমানায়, পিকনিকের মরসুমে চুড়ান্ত ভাবে নিগৃহীত হয়  জঙ্গলমহলের  প্রিয় এই ডুলুং, তার ছাপ থেকে যায় অনেকদিন পর্যন্ত।  শীতের সময়  থার্মোকল, চিপ্সের প্যাকেট, প্লাস্টিক বা কাঁচের বোতোল পড়ে থাকে যত্রতত্র, দূষণের ক্ষত বুকে নিয়ে তির তির করে বয়ে চলেছে   আপন ছন্দে, নামে নদী। কয়েক দিনের  একটানা  বৃষ্টিতে,জলস্তর বাড়ছে ক্রমশ। বর্তমানে   সেতুর উপর দিয়ে বইছে জলের স্রোত।

ফলে  ঝাড়গ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন জামবনি। ব্যাহত স্কুল, চিকিৎসা,গণপরিবহণ ব্যবস্থা। বিকল্প রাস্তা বলতে ছ’নম্বর জাতীয় সড়ক। সে পথেও বেহাল সেতু।

কয়েকদিন বাঁকুুুড়া- ঝাড়গ্রাম- পুরুলিয়া জুড়ে    টানা বৃষ্টি। জল বাড়ছে ঝাড়গ্রামের সুবর্ণরেখা, ডুলুং, তারাফেনি নদীর। রাজ্য সড়কে ডুলুং নদীর জল বইছে ডুলুং সেতুর উপর দিয়ে। বহু পুরোন সেতুর এই ছবি প্রতি বর্ষার। এর ফলে ঝাড়গ্রাম সদরের সঙ্গে জামবনি ব্লকের যোগাযোগ আপাতত বিচ্ছিন্ন। সেতু পেরতে না পেরে আটকে আছে লরি, ট্রাক।আতঙ্ক বাড়ছে নদী তীরের বাসিন্দাদের। শুধু এই সেতুই নয়। রংপুর থেকে ঝাড়গ্রাম যাওয়ায় তারাফেনি নদীর উপর সেতুও জলের তলায়।

চিলকিগড়ের বাসিন্দাদের বিভিন্ন কাজে নদী পেরিয়ে ব্লক সদর গিধনিতে যেতে হয়। বিপদে পড়েছেন তাঁরাও। বিকল্প পথ বলতে ছ’নম্বর জাতীয় সড়ক। ঝাড়গ্রামের উপর দিয়ে পথ গিয়েছে ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা। কিন্তু সেই পথেও ডুলুং নদীর উপর সেতু বেহাল। এবড়ো-খেবড়ো, জায়গায় জায়গায় গর্ত। যে কোনও সময়ে ঘটে যেতে পারে বড়সড় বিপদ ।ডুলুং নদীর উপর ভাঙাচোরা সেতুর পাশে সেকোঘাটে নতুন ব্রিজ তৈরির কাজ শুরু করেছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দু’ বছর হয়ে গেলেও কাজ সেভাবে এগোয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের সমস্যা ভগ্ন সেতু।নতুন সেতুর নির্মাণ যাতে দ্রুত এগিয়ে চলে ,সে বিষয়ে সবাই মিলে  দাবি জানাচ্ছে জেলা প্রশাসনের কাছে।