সুবীর মণ্ডল, বাঁকুুুড়া জেলাপ্রতিনিধি:

জঙ্গল মহলের সোনার মেয়ে  প্রনতি নায়েক । সাধারণত  জঙ্গলমহল বলতে চার জেলার কিছু  কিছু  ব্লককে  ধরা হয়।  জীবনের  সমস্ত ধরনের  প্রতিকূলতা জয় করে  স্বপ্নপূরণের পথে। সীমাহীন দারিদ্র্য কোন বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। স্বাধীনতার  ৭৪ বছর পরও  বাঁকুুুড়া- পুরুলিয়া-,পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম জঙ্গলমহলে অন্তর্ভুক্ত। এই চারটি জেলা   শিল্প– শিক্ষা– স্বাস্থ্য- ক্রীড়া  সমস্ত  ক্ষেত্রেই পিছিয়ে।  অথচ প্রতিভার  অভাব নেই,  কিন্তু  বিকাশে সীমাহীন বাধা।  অনেক প্রতিভা শুধুমাত্র  সুযোগের অভাবে  অকালে ঝরে যায়।  একক  প্রচেষ্টায়   যারা  অভাবকে জয় করে , তারাই এগিয়ে  যাওয়ার অদমনীয় ইচ্ছাকে সম্বল করে এক আপোহীন লড়াই করে  জয়ের স্বপ্ন দেখে।  এদের মধ্যে  প্রনতি নায়েকের মতো  কেউ কেউ  স্বপ্নপূরণের সিঁড়ি ছোঁয়। জঙ্গলমহলে  অনেক  প্রণতির জন্ম হোক , যারা দেশকে গর্বিত করবে।     অত্যন্ত  আনন্দিত  জঙ্গলমহলের  মানুষ, তারা জেনেছে,  এবারের অলিম্পিকে মহিলা জিমন্যাস্ট বিভাগে ভারতের প্রতিনিধি তাদের ঘরের মেয়ে প্রণতি নায়েক। অলিম্পিক জিমন্যাস্টে আজ পর্যন্ত আর একজন মাত্র ভারতীয় মহিলা সুযোগ পেয়েছিলেন। ন’ বছর বয়স থেকে মেয়েটা লড়াইয়ের ময়দানে। হার-জিত, হার-জিত এইভাবেই কেটেছে। অলিম্পিকে এবারেই হয়ত শেষ সুযোগ ছিল তার।

পশ্চিম মেদিনীপুরের দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা প্রণতির লড়াই  আমাদের  অনুপ্রাণিত করবে।  তার দারিদ্র জয়ের ইতিহাস নতুন  প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের  মধ্যে আশা সঞ্চারিত কববে।ক্রীড়া সাহিত্যিক মতি নন্দীর ‘কোণি ‘ উপন্যাসের  কোণি চরিত্রের  সঙ্গে  প্রণতি নায়কের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।এক স্বপ্নপূরণের  ইতিবৃত্ত  এক কথায় অসাধারণ ও অতুনীয়।  বাংলার জিমন্যাস্ট প্রণতি নায়েক সম্প্রতি অলিম্পিকে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় বাড়ি তাঁর। প্রণতি ভারতের দ্বিতীয় মহিলা জিমন্যাস্ট যিনি অলিম্পিকে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন। তাঁর আগে শুধুমাত্র দীপা কর্মকার এই কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। প্রণতি অলিম্পিকে অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করার পর থেকেই তাঁর বাড়িতে খুশির হাওয়া বইছে। ২০১৯ সালে এশিয়ান আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক চ্যাম্পিয়নশিপে  ভল্ট ডিসিপ্লিনে ব্রোঞ্জ জয়ী প্রণতি এখন কলকাতায় রয়েছেন। আর অলিম্পিকে পদক জয়ে নিজের স্বপ্ন সত্যি করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অলিম্পিক্সের প্রস্তুতি। দীপা কর্মকারের,  পরিবর্তে সেই   স্বপ্ন  কিছুটা  বাঁচিয়ে  চেষ্টা করবে  বাংলার  দুই  জিমন্যাস্টি প্রণতি  নায়েক  ও  প্রণতি  দাস।     পশ্চিমবঙ্গের  এই দুই জিমন্যাস্ট দোহা বিশ্বকাপে যাচ্ছে  টোকিও  অলিম্পিকের আশায়।                গত   সোমবার   নয়াদিল্লিতে  ট্রায়ালে পাশ করেছে  এই দুই জন  জিমন্যাস্ট। শিবিরে ঢাকাই হয়নি  ত্রিপুরার  আগরতলার মেয়ে  দীপা কর্মকারকে। বর্তমানে  দীপা কর্মকার আগরতলায়  নিজের  কোচের  অধীনে অনুশীলনে ব্যস্ত। দীপা কর্মকারের কোচ বিশ্বেশ্বর  নন্দী  জানিয়েছেন ”    বাংলার  দুই  প্রণতির  কাছে  এটা  তিন  নম্বর বিশ্ব মিট। এর মধ্যে কিছুটা  সম্ভাবনা তৈরি   করেছে  পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার প্রণতি নায়েক।  পিংলার  জিমন্যাস্ট প্রণতি এশিয়ান মিটে ব্রোঞ্জ  জিতেছিলেন। এশিয়ান গেমসে চার নম্বরে ছিলেন । কিন্তু এটা বিশ্ব মিট। সিমোনে  বাইলস  সহ বিশ্বের প্রথম সারির জিমন্যাস্টরা দোহাতে  নামবে। ফলে সেখানে  বাংলার দুই  জিমন্যাস্ট প্রণতির  পক্ষে টোকিও অলিম্পিকের  টিকিট পাওয়া কষ্টকর। তবে  দোহা  বিশ্বকাপের মিটে জিতলেই  সরাসরি কোয়ালিফাই  করতে পারবে। টোকিও  অলিম্পিকের টিকিটের জন্য এটাই শেষ  টুর্নামেন্ট। ” জঙ্গলমহলের  মানুষ  প্রণতির সাফল্য কামনা করে,  নানান জায়গায় পুজো দিতে  শুরু করেছে এলাকার মানুষ। জঙ্গলমহলের চার জেলার মানুষ চায় এখানকার তরুণ প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা ক্রীড়া ক্ষেত্রে সুযোগ  সুবিধা গুুলো  পাক।খাতড়া মহকুমা শহরের নিকটে মুকুটমণিপুরে বহু টাকা  খরচ করে  স্পোর্টস আকাদেমি তৈরি হয়ে পড়ে আছে। কবে উদ্বোধন হবে  কেউ জানে না। সরকারের ইতিবাচক সহযোগিতা দরকার। জঙ্গলমহলের  ক্রীড়ার  সার্বিক উন্নয়নে  এই আকাদেমি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে   পারত।দুঃখের বিষয় কয়েক বছর আগে তৈরি হয়েও  তার সুফল থেকে  বঞ্চিত জঙ্গলমহলের মানুষ। এই ধরনের আকাদেমির সুযোগ  সুবিধা পেলে হয়তো  আরও অনেক প্রণতির জন্ম হতে পারতো।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে