ছুলি এক ধরনের চর্মরোগ। এই রোগটি হলে ত্বকের উপর ফ্যাকাসে লাল বা বাদামী রংয়ের ছোট ছোট ফুঁসকুড়ির মতো ছাপ পড়ে। ছুলি হলে কখনও কখনও জ্বালা বা চুলকানির মতো অনুভূতির সৃষ্টি হয়। মুখে, কাঁধে, হাতে, পিঠের ত্বকে মেলানিনের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে ছুলি সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে মুখে ছুলির দাগ থাকলে বিব্রত বোধ করেন অনেকেই।

ছুলি নিরাময়ে একাধিক চিকিৎসা রয়েছে। যেগুলো ব্যায়বহুলও। তবে প্রাকৃতিক উপায়েও ছুলির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। ছুলি নিরাময়ের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক উপায় রয়েছে, যেগুলো অত্যন্ত কার্যকরী। আসুন প্রাকৃতিক উপায়ে ছুলি নিরাময়ের পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

লেবুর রস দিয়ে মালিশ:
ছুলি নিরাময়ের ক্ষেত্রে লেবুর রস অত্যন্ত কার্যকরী। লেবুর রসে চামড়ার রং হালকা করার উপাদান আছে তা ত্বকের গাঢ় দাগ দূর করতে সাহায্য করে। লেবুর রস আক্রান্ত অংশে লাগিয়ে ভাল করে মালিশ করুন। ১৫-২০ মিনিট পর সামান্য উষ্ণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন অন্তত দু’বার এভাবে মালিশ করুন, উপকার পাবেন।

লেবু-চিনির স্ক্রাব:
লেবুকে কাজে লাগিয়ে আরেকটি কার্যকর পদ্ধতি হল লেবুর স্ক্রাব। একটি লেবু মাঝখান থেকে কেটে নিয়ে অর্ধেক অংশের উপর আধা চামচ চিনি ছিটিয়ে নিন। তারপর এটি আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে আলতো করে মালিশ করতে থাকুন। মিনিট দশেক মালিশ করার পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহ দুয়েক নিয়মিত ব্যবহার করলে ছুলির সমস্যায় উপকৃত হবেন।

পেঁয়াজ:
পেঁয়াজে থাকা এক্সফলিয়েটিভ উপাদান ছুলি নিরাময়ের ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর। একটি বড় মাপের পেঁয়াজ মাঝখান থেকে কেটে নিয়ে অর্ধেক অংশটি নিয়ে শরীরের ছুলি আক্রান্ত অংশে দিনে অন্তত দুই বার মালিশ করুন। যত দিন পর্যন্ত না ছুলির রং ফ্যাকাশে হচ্ছে, তত দিন এটি ব্যবহার করুন।

টমেটোর রস:
প্রথমে একটি বড় ও পাকা টমেটো নিয়ে ভাল করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। তারপর টমেটোটিকে ভাল করে চটকে নিয়ে শরীরের ছুলি আক্রান্ত অংশে লাগান। আঙ্গুল দিয়ে আলতোভাবে কিছুক্ষণ মালিশ করুন। ১৫-২০ মিনিট রেখে তারপর পানি দিয়ে ভাল করে ধুয়ে ফেলুন। তবে এটি ব্যবহারের কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত সাবান ব্যবহার করবেন না। দিনে অন্তত ২ বার করে সপ্তাহ দুয়েক এই পদ্ধতি কাজে লাগালে ছুলির দাগ অনেকটাই হালকা হয়ে আসবে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতাও বাড়বে।

টক দই:
টক দইয়ের সাহায্যেও ছুলির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। টক দইয়ের ল্যাক্টিক অ্যাসিড ছুলি দূর করতে খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। টাইরোসিনেজ নামের এনজাইম শরীরের মেলানিন ও অন্যান্য রঞ্জকের উপস্থিতির জন্য দায়ী। ল্যাক্টিক অ্যাসিড টাইরোসিনেজ এনজাইমের অতিরিক্ত উৎপাদনকে বাধা প্রদান করে। ফলে ত্বকের হাইপারপিগমেন্টেশন বাধাপ্রাপ্ত হয়। তিন চামচ টক দই নিয়ে একটি কটন বলের সাহায্যে শরীরের ছুলি আক্রান্ত অংশে লাগান এবং অন্তত মিনিট পনেরো রাখুন। তারপর সামান্য উষ্ণ পানি দিয়ে ভাল করে ধুয়ে ফেলুন। দিনে ৩-৪ বার এটি ব্যবহার করতে পারলে ছুলির সমস্যার সঙ্গে কমবে ব্রণ-ফুঁসকুড়ির সমস্যাও।

ভেজিটেবল মাস্ক:
দুই টুকরা শশা ও দুই টুকরা স্ট্রবেরি নিয়ে একসঙ্গে ভাল করে চটকে নিন। এবার এর সঙ্গে অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি ছুলির উপরে লাগিয়ে স্বাভাবিকভাবে শুকিয়ে নিন। মিশ্রণটি পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ভাল করে ধুয়ে ফেলুন। ছুলির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সপ্তাহে অন্তত চারবার এই মাস্ক ব্যবহার করুন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে