ক্রিড়া ডেস্ক :

 দুর্দান্ত এক ফ্রি কিকে পথ দেখালেন লিওনেল মেসি। কিন্তু সুযোগ নষ্টের মিছিলে অধিনায়কের গড়ে দেওয়া ভিত কাজে লাগাতে পারল না আর্জেন্টিনা। উল্টো বিরতির পর হারানো ছন্দের সুযোগে মূল্যবান একটি পয়েন্ট আদায় করে নিল চিলি।

বাংলাদেশ সময় আজ মঙ্গলবার ভোররাত ৩টায় রিও ডি জেনেরিওর অলিম্পিক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত কোপা আমেরিকায় ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়েছে। পিছিয়ে পড়ার পর সমতা টানেন চিলির এডুয়ার্ডো ভার্গাস।

আক্রমণাত্মক কৌশলে ম্যাচের প্রায় পুরোটা সময়েই আধিপত্য দেখায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর ভাগে যখনই একটু ছন্দ হারালো, তখনই মহামূল্যবান গোলটা আদায় করে নেয় চিলি।

বল দখলে সামান্য পিছিয়ে থাকা আর্জেন্টিনা (৪৯%) গোলের উদ্দেশে শট নেয় মোট ১৮টি, যার পাঁচটিই ছিল লক্ষ্যে। বিপরীতে চিলির নেয়া পাঁচটি শটের চারটিই ছিল লক্ষ্যে। যদিও লক্ষ্যভেদ হয়েছে মাত্র একবার করে।

প্রথমার্ধজুড়ে ঘর সামলাতে ব্যস্ত চিলি গোল হজম করতে পারতো ম্যাচের অষ্টম মিনিটেই। তবে সতীর্থের হেডে বাড়ানো বল পেয়ে মেসি যে শটটি নেন, তা দূরের পোস্টের আরও দূর দিয়ে চলে যায়। চার মিনিট পর জিওভানি সেলসোর দারুণ এক ক্রস পেয়েও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় লাউতারো মার্টিনেসের দুর্বল শটটিও।

তবুও চাপ ধরে রেখে ষোলতম মিনিটে প্রথম প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের পরীক্ষা নেয় আর্জেন্টিনা। নিকোলাস গঞ্জালেসের শট ডান দিকে ঝাঁপিয়ে ফেরান ক্লদিও ব্রাভো। পরের দুই মিনিটে আরও দুবার সুযোগ পান স্টুটগার্টের এই ফরোয়ার্ড; কিন্তু খুঁজে পাননি ঠিকানা।

অবশেষে ৩৩তম মিনিটে অসাধারণ এক ফ্রি কিকে দলকে এগিয়ে নেন মেসি। বল রক্ষণপ্রাচীরের ওপর দিয়ে সামান্য বাঁক খেয়ে ঠিকানা খুঁজে নেয়। ঝাঁপিয়ে পরে বলে হাত লাগালেও তা আর রুখতে পারেননি ব্রাভো।

প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে এটি মেসির ৩৯তম গোল। সব মিলিয়ে জাতীয় দলের হয়ে ১৪৫ ম্যাচে ৭৩ গোল হলো আর্জেন্টিনার হয়ে রেকর্ড গোলদাতার।

প্রথমার্ধে লক্ষ্যে একটি শটও নিতে না পারা চিলি সমতায় ফেরে ৫৭তম মিনিটেই। নিকোলাস তাগলিয়াফিকো চিলির ডি-বক্সে আর্তুরো ভিদালকে ফাউল করলে ভিএআরের সাহায্যে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। ইন্টার মিলানের এই মিডফিল্ডারের নেওয়া স্পট কিক ঠেকিয়ে দেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। তবে বল ক্রসবারে লেগে ফেরার পর হেডে তা জালে পাঠান ভার্গাস।

৭১তম মিনিটে আবারও এগিয়ে যেতে পারতো আর্জেন্টিনা। তবে মেসির দূর থেকে নেওয়া শট ঝাঁপিয়ে পড়ে ফেরান ব্রাভো। আট মিনিট পর অধিনায়কের দারুণ ক্রস ছয় গজ বক্সের বাইরে পেয়েও লক্ষ্যভ্রষ্ট হেড করেন গঞ্জালেস।

বাকি সময়েও একচেটিয়া চাপ ধরে রাখে দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু ব্যর্থতার জাল আর ছিঁড়তে পারেনি তারা। শিষ্যদের সুযোগ নষ্টের মিছিল দেখে আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনির মনে নতুন করে জাগে পুরনো ভাবনা। এ মাসের শুরুতেই যে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে এই চিলির বিপক্ষেই প্রায় একইরকম অভিজ্ঞতা হয়েছিল তাদের। মেসির পেনাল্টি থেকে পাওয়া গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর ১-১ এ ড্র করেছিল তারা। ওই ম্যাচেও সুযোগ নষ্ট হয়েছিল অগণিত।

মহাদেশ সেরা টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪ বারের চ্যাম্পিয়নদের জন্য দুর্ভাবনার জায়গা আছে আরও। এ নিয়ে টানা তিন ম্যাচে এগিয়ে যাওয়ার পর ছন্দ হারিয়ে জয় হাতছাড়া করল আকাশী-সাদা জার্সিধারীরা। তাই দ্রুত এ সমস্যার সমাধান না মিললে চলতি আসরের পথচলায় পস্তাতে হতে পারে আলবেসিলেস্তদের।

এখানে জয় না মিললেও কোপা আমেরিকায় চিলির বিপক্ষে আর্জেন্টিনার অপরাজেয় পথচলা অবশ্য আরও লম্বা হলো। এই নিয়ে ২৯ বারের দেখায় ২০ বার জিতেছে তারা। বাকি ৯ ম্যাচ ড্র; তবে এর মধ্যেই আছে ২০১৫ ও ২০১৬ আসরের ফাইনাল। যে দুবার টাইব্রেকারে জিতে শিরোপা উল্লাস করেছিল চিলি।

নিজেদের পরের ম্যাচে বাংলাদেশ সময় আগামী শনিবার ভোরে উরুগুয়ের বিপক্ষে খেলবে আর্জেন্টিনা। সেদিনই বলিভিয়ার মুখোমুখি হবে চিলি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে