চিরদিনের মহানায়ক:এক অম্লান স্মৃতি
কৃষ্ণকলি বসু
সম্প্রতি ২৪শে জুলাই গেল। এই প্রসঙ্গে কয়েকটি টুকরো অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি। আমার জেঠিমার একটা বড় সার্জারি হয়েছিল বেলভিউ নার্সিংহোমে ১৯৭৫ – এ। খুব ক্রিটিকাল অপারেশন বাড়ির সবাই খুবই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। জেঠিমার কিন্তু কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। ওনার একটাই শর্ত জানলার ধারে কেবিন চাই। কারণ উত্তমকুমার তখন মিন্টোপার্কে রোজ প্রাতঃভ্রমণ করতেন | জেঠিমা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন। কিন্তু সুস্থ হবার পরও বেশ কিছুদিন জোর করে বাড়ি আসতে চাননি কারণ উত্তমকুমাকে আর দেখা যাবেনা বলে | জেঠিমার ধারণা ছিল মহানায়ককে রোজ দেখতে পাওয়া টাই তাঁর দ্রুত সুস্থতার কারণ ছিল।
আর একবার শোনা কথা আমার এক বন্ধুর দিদির মুখ। দল বেঁধে ছাত্রীরা একদিন সবাই হানা দিয়েছে ময়রা স্ট্রিটের বাড়িতে। সচরাচর কারো অনুমতি ছিলোনা কিন্তু এতগুলি ছোট মেয়েরা এসেছে শুনে মহানায়ক অনুমতি দিলেন। কিন্তু অটোগ্রাফ নিতে গিয়ে তারা দেখে মহানায়কের পিছনে আসছে এক বিশাল অ্যালসেশিয়ান। তারা তখন ভয়ে মহানায়ককে জড়িয়ে ধরে ‘মেসোমশাই ‘ মেসোমশাই বলে চিৎকার জুড়েছে। উত্তমকুমার তাদের আশ্বস্ত করে অটোগ্রাফ খাতায় সই করেছিলেন। “মেসোমশাই উত্তমকুমার “।
অনেক সুযোগ পেয়েও মানুষটিকে কোনোদিন কাছ থেকে দেখতে যাইনি। তখন হিন্দি ছবির মোহে আচ্ছন্ন। আজ জীবনের সায়ংকালে পৌঁছে বড় আফশোস হয় — একবার যদি দেখতে পেতাম সর্বকালের শ্রেষ্ঠ নায়ককে। অনেকেই আমার সঙ্গে একমত হয়তো হবেন না। কিন্তু আমি বিশ্ববরেণ্য পরিচালক শ্রী সত্যজিৎ রায়ের কথাই অন্তর দিয়ে মানি — নায়ক বলতে একজন কেই বোঝায়। মৃত্যুর একচল্লিশ বছর পার করেও তাঁর অভিনয়, মাধুর্য ও খ্যাতিকে পার করতে পারলোনা কেউ।