প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঁচাত্তরের ৩ নভেম্বর কারাগারে নিহত জাতীয় চার নেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছেন, তাদের আত্মত্যাগ বাঙ্গালি জাতি চিরকাল শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

তিনি আগামীকাল ‘জেলহত্যা দিবস’ উপলক্ষে আজ দেয়া এক বাণীতে চার নেতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আরো বলেন, কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে জাতীয় চার নেতা হত্যাকান্ড ছিল বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ধারাবাহিকতা। এ ঘৃণ্য হত্যাকান্ডের মাধ্যমে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি, দেশ বিরোধী চক্র বাংলার মাটি থেকে আওয়ামী লীগের নাম চিরতরে মুছে ফেলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস এবং বাঙ্গালি জাতিকে নেতৃত্ব শূন্য করার অপচেষ্ট চালিয়েছিল।

‘তিন নভেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত দিন’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জমানকে ১৯৭৫ সালের এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। কারাগারের অভ্যন্তরে এ ধরনের বর্বর হত্যাকান্ড পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন।

শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের সেই ষড়যন্ত্রকারী ও হত্যাকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদদাতারা পরবর্তী ২১ বছর ধরে দেশের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখে। শাসক গোষ্ঠী কখনও সামরিক লেবাসে, কখনও গণতন্ত্রের মুখোশ পরে, অবৈধ ও অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা ধরে রাখে। আত্মস্বীকৃত খুনিদের রক্ষা করতে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে। হত্যাকারীদের বিচারের মুখোমুখি করার বদলে বিদেশে চাকুরি দিয়ে পুরস্কৃত করে এবং অনেককে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়। অবৈধ শাসকরা মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে বাংলাদেশকে পিছনের দিকে ঠেলে দেয়।

‘আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনে’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার কাজ সম্পন্ন করেছি। জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচারও সম্পন্ন হয়েছে। জনগণকে দেয়া ওয়াদা অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য পরিচালনা করছি, বিচারের রায় কার্যকর করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, সংবিধান সংশোধন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ করা হয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি সব সময়ই দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। তারা দেশের গণতান্ত্রিক ধারা ব্যাহত করতে ও স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করতে বারবার হামলা চালিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে আমাকে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। এই হামলায় আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভী রহমানসহ ২২ জন নেতা-কর্মী নিহত হন। আদালত কর্তৃক ভয়াবহ ২১-এ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় হয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার দেশে আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী এবং উন্নয়ন ও গণতন্ত্র-বিরোধীদের যেকোন অপতৎপরতা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে। দেশবাসী মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের ধারা সমুন্নত রাখবেন বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সকল বাধা-বিপত্তি ও দুর্যোগ সামাল দিয়ে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রেখেছি। করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারিতেও এবার ৫.২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তের সাথে সাথে আমরা ৩১-দফা নির্দেশনা জারি করেছিলাম। আর্থিক খাতের আশু সমস্যাগুলি চিহ্নিত করে ২১টি প্যাকেজের আওতায় ১ লাখ ১২ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করি।’

এছাড়াও করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সরকার ও দলের পক্ষ থেকে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন আজ সারা বিশ্বে প্রশংসিত। পৌনে বারো বছরে দেশের আর্থ-সামাজিক প্রতিটি খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছি। গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছি। নাগরিক সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বে মাথা উচুঁ করে চলবে।’

প্রধানমন্ত্রী, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের এই উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মনিয়োগ করে জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

– বাসস

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে