Dhaka ০৫:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ৩০ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চলতি সপ্তাহেই ঢাকায় আসছেন ট্রাম্প প্রশাসনের দুই কর্মকর্তা, যে সব বিষয়ে হবে আলোচনা

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৫:০১:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫
  • ১৫ Time View

ট্রাম্প প্রশাসনের দুই কর্মকর্তার আসন্ন সফর নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য ঢাকার তরফে অনুরোধ জানানো হবে। মার্কিন সংস্থা ইউএসএআইডির সাহায্য বন্ধে বাংলাদেশে নানামুখী সমস্যার চিত্রও উপস্থাপন করা হবে। পাশাপাশি, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো এবং তাদের আন্তর্জাতিক ত্রাণ সহায়তা বহাল রাখার বিষয়ে জোর দেবে বাংলাদেশ।

চলতি মাসের মাঝামাঝি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দুজন ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি প্রায় একই সময়ে বাংলাদেশ সফরে আসছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাদের আগমন উচ্চপর্যায়ের প্রথম সফর। দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি নিকোল এল চুলিক ১৬ এপ্রিল এবং পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এন্ডু হেরাপ ১৭ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় এবং আঞ্চলিক বিভিন্ন ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি কী হবে সে বিষয়টি জানতে দুই গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার আসন্ন সফর খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এই অঞ্চলের বিষয়াদি দেখভাল করায় তার বাংলাদেশ সফরকে রুটিন সফর বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে তার সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের সামগ্রিক দিক উঠে আসবে। তবে এই সময়ে পূর্ব এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারির সফর খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা মিয়ানমারে যুদ্ধ, আরাকান আর্মির অবস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রের বার্মা অ্যাক্ট বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন জটিল বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এই আলোচনায় সহায়তার লক্ষ্যে মিয়ানমারে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতও ঢাকায় আসছেন।

ট্রাম্প প্রশাসন অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ভূমিকা পালন করছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে হাজারখানেক অবৈধ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাতে পারে দেশটি। বাংলাদেশ সরকারও এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করবে বলে জানিয়ে দিয়েছে। তবে ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের অংশ হিসাবে বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিভিন্ন দেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে চীন বাদে সব দেশের ওপর আরোপিত শুল্ক ১০ শতাংশ রেখে বাকি শুল্ক ৩ মাসের জন্য স্থগিত করেছেন ট্রাম্প। তবে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে জিএসপি সুবিধা বাতিল করার কারণে আগে থেকেই ১৫ শতাংশ শুল্ক বহাল রয়েছে। ট্রাম্পের ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হওয়ায় বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টা এবং বাণিজ্য উপদেষ্টার চিঠিতে উল্লিখিত যুক্তিগুলো নিয়ে আলোচনা করবে বাংলাদেশ।

এদিকে ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প বাড়তি চাপে পড়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি বিশেষ করে সংস্কার এবং নির্বাচনের মতো বিষয় সম্পর্কে জানার চেষ্টা করতে পারেন মার্কিন ওই কর্মকর্তা। পাশাপাশি, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশার কথা জানাতে পারেন তিনি।

ট্রাম্পের গোয়েন্দা প্রধান তুলসি গ্যাবার্ড সম্প্রতি ভারত সফরে এসে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে যে উদ্বেগের কথা বলেছেন; সে ব্যাপারে বাংলাদেশের ব্যাখ্যাও আরেকবার তুলে ধরা হতে পারে। তুলসি গ্যাবার্ডের সফরকালেই বাংলাদেশ বিবৃতি দিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে অবস্থান পরিষ্কার করেছিল। বাংলাদেশ মনে করে, তৃতীয় পক্ষের বদলে ঢাকা-ওয়াশিংটন সরাসরি সম্পর্ক বজায় রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ।

এদিকে, জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মিদের মানবিক সহায়তার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। রাখাইন রাজ্যে অধিকাংশ অঞ্চল আরাকান আর্মি দখলে নিলেও এই বাহিনী বর্তমানে খাদ্য সংকটসহ নানা মানবিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে জাতিসংঘ আরাকান আর্মিকে মানবিক সহায়তা দিতে চায়। তবে এই সহায়তায় বাংলাদেশ সহযোগিতা করলে মিয়ানমারের জান্তা সরকার এবং চীন কীভাবে নেবে সেটি বিবেচনা করে দেখছে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ায় আরাকান আর্মি সহায়তা করলে সহায়তার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে বাংলাদেশ। আরাকান আর্মি অবশ্য স্বাধীনতা চায় না। তারা এক ধরনের স্বায়ত্তশাসন চায়। ফলে তাদের স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশ্ন আসছে না। ভারত ইতোমধ্যে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। বাংলাদেশ মাঠপর্যায়ে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সরকারি পর্যায়ে কোনো যোগাযোগ করেনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

চলতি সপ্তাহেই ঢাকায় আসছেন ট্রাম্প প্রশাসনের দুই কর্মকর্তা, যে সব বিষয়ে হবে আলোচনা

Update Time : ০৫:০১:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫

ট্রাম্প প্রশাসনের দুই কর্মকর্তার আসন্ন সফর নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য ঢাকার তরফে অনুরোধ জানানো হবে। মার্কিন সংস্থা ইউএসএআইডির সাহায্য বন্ধে বাংলাদেশে নানামুখী সমস্যার চিত্রও উপস্থাপন করা হবে। পাশাপাশি, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো এবং তাদের আন্তর্জাতিক ত্রাণ সহায়তা বহাল রাখার বিষয়ে জোর দেবে বাংলাদেশ।

চলতি মাসের মাঝামাঝি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দুজন ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি প্রায় একই সময়ে বাংলাদেশ সফরে আসছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাদের আগমন উচ্চপর্যায়ের প্রথম সফর। দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি নিকোল এল চুলিক ১৬ এপ্রিল এবং পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এন্ডু হেরাপ ১৭ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় এবং আঞ্চলিক বিভিন্ন ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি কী হবে সে বিষয়টি জানতে দুই গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার আসন্ন সফর খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এই অঞ্চলের বিষয়াদি দেখভাল করায় তার বাংলাদেশ সফরকে রুটিন সফর বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে তার সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের সামগ্রিক দিক উঠে আসবে। তবে এই সময়ে পূর্ব এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারির সফর খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা মিয়ানমারে যুদ্ধ, আরাকান আর্মির অবস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রের বার্মা অ্যাক্ট বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন জটিল বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এই আলোচনায় সহায়তার লক্ষ্যে মিয়ানমারে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতও ঢাকায় আসছেন।

ট্রাম্প প্রশাসন অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ভূমিকা পালন করছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে হাজারখানেক অবৈধ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাতে পারে দেশটি। বাংলাদেশ সরকারও এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করবে বলে জানিয়ে দিয়েছে। তবে ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের অংশ হিসাবে বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিভিন্ন দেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে চীন বাদে সব দেশের ওপর আরোপিত শুল্ক ১০ শতাংশ রেখে বাকি শুল্ক ৩ মাসের জন্য স্থগিত করেছেন ট্রাম্প। তবে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে জিএসপি সুবিধা বাতিল করার কারণে আগে থেকেই ১৫ শতাংশ শুল্ক বহাল রয়েছে। ট্রাম্পের ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হওয়ায় বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টা এবং বাণিজ্য উপদেষ্টার চিঠিতে উল্লিখিত যুক্তিগুলো নিয়ে আলোচনা করবে বাংলাদেশ।

এদিকে ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প বাড়তি চাপে পড়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি বিশেষ করে সংস্কার এবং নির্বাচনের মতো বিষয় সম্পর্কে জানার চেষ্টা করতে পারেন মার্কিন ওই কর্মকর্তা। পাশাপাশি, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশার কথা জানাতে পারেন তিনি।

ট্রাম্পের গোয়েন্দা প্রধান তুলসি গ্যাবার্ড সম্প্রতি ভারত সফরে এসে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে যে উদ্বেগের কথা বলেছেন; সে ব্যাপারে বাংলাদেশের ব্যাখ্যাও আরেকবার তুলে ধরা হতে পারে। তুলসি গ্যাবার্ডের সফরকালেই বাংলাদেশ বিবৃতি দিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে অবস্থান পরিষ্কার করেছিল। বাংলাদেশ মনে করে, তৃতীয় পক্ষের বদলে ঢাকা-ওয়াশিংটন সরাসরি সম্পর্ক বজায় রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ।

এদিকে, জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মিদের মানবিক সহায়তার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। রাখাইন রাজ্যে অধিকাংশ অঞ্চল আরাকান আর্মি দখলে নিলেও এই বাহিনী বর্তমানে খাদ্য সংকটসহ নানা মানবিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে জাতিসংঘ আরাকান আর্মিকে মানবিক সহায়তা দিতে চায়। তবে এই সহায়তায় বাংলাদেশ সহযোগিতা করলে মিয়ানমারের জান্তা সরকার এবং চীন কীভাবে নেবে সেটি বিবেচনা করে দেখছে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ায় আরাকান আর্মি সহায়তা করলে সহায়তার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে বাংলাদেশ। আরাকান আর্মি অবশ্য স্বাধীনতা চায় না। তারা এক ধরনের স্বায়ত্তশাসন চায়। ফলে তাদের স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশ্ন আসছে না। ভারত ইতোমধ্যে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। বাংলাদেশ মাঠপর্যায়ে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সরকারি পর্যায়ে কোনো যোগাযোগ করেনি।