২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী জনসভায় গ্রেনেড হামালার ভয়াবহতাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে স্থাপনা শিল্প প্রদর্শনী ‘এক রক্ত প্রহরের গাঁথা’। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা প্লাজায় আয়োজিত এ প্রদর্শনী আগামী ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ পর্যন্ত চলবে। প্রদর্শনী প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সকলের জন্য উন্মুক্ত।
এ প্রদর্শনী উপলক্ষে শনিবার এক অনলাইন আলোচনার আয়োজন করা হয়। মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে বক্তব্য প্রদান করেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক অধ্যাপক আব্দুস সেলিম এবং গ্রেনেড হামলার প্রত্যক্ষদর্শী বিশিষ্ট সাংবাদিক স্বদেশ রায়। জাহীদ রেজা নূর এর সঞ্চালনায় অনলাইনে যুক্ত ছিলেন বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী দিল আফরোজ রেবা, ইয়াকুব আলী খান, গুরুপদ গুপ্ত, বিশিষ্ট আবৃত্তি শিল্পী মীর বরকত, বিশিষ্ট কবি তারিক সুজাত, বিশিষ্ট যন্ত্রশিল্পী শ্যামল দাস, কণ্ঠশিল্পী হৈমন্তী রক্ষিত, সরদার হীরক রাজা, শবনম মুস্তারি প্রিয়াংকা, মিথিলা মল্লিক এবং শিশুশিল্পী জিনাৎ ফারিহা করিম।
শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত এ প্রদর্শনীর ভাবনা ও পরিকল্পনায় একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী। প্রদর্শনীর সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন একাডেমির সচিব মো. নওসাদ হোসেন, তত্ত্বাবধানে আছেন এ এম মোস্তাক আহমেদ, মনিরুজ্জামান মীর, মাহাবুবুর রহমান, আয়নাল হক, এস এম মিজানুর রহমান।
প্রদর্শনীর সার-সংক্ষেপ
অনেকেরই ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন হয়ে আসে ২১ আগস্টের ভয়াবহতা। ব্যথাটা অসহনীয়। চারদিকে আহাজারি-বাঁচাও বাঁচাও বাঁচাও। আয়েশা, এদিকে আসো, আয়েশা আমার সব শেষ, আমার দুটো পা নেই। ঢাকা মেডিক্যালে ওরা আমাকে মৃত ভেবে একটি লাশের ওপর শুইয়ে দেয়। আমার ড্যামেজ হয়েছে, জীবনটাই। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলার সাথে সাথেই একটি বিকট আওয়াজ হলো, আর আমি কিছুই শুনতে, দেখতে পারছিলাম না, আমার বুকের ভেতরটা চমকে ওঠেছিল, পরে জানলাম আমি হার্ট অ্যাটাক করেছিলাম। আমাদের ভালো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। আমি স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলি, ২৫ দিন পর ফিরে পেলাম।
আমি চাই এমন রায় হবে, যা দেখে এমন হামলা করার দুঃসাহস কেউ না পায়। মাছ যেমন ঢাইলা রাখে পুশকুনি থেকে ধরার পর, এই রকম মানুষ পরে আছে রাস্তায়। আর এক জনের সাহায্যে ছাড়া চলতে পারি না। একটা ঘর থাকে খুঁটি দিয়া আর একটা মানুষ থাকে দুইটা পা দিয়া, সেই পা আমার নাই। আমাগো নেত্রী বাঁইচা আছে, এতেই আমি সুখী। যেই অবস্থায় হামলা করছে, তাতে নেত্রীর বাঁচার কথা না, স্বয়ং আল্লাহ বাঁচাইছে। একটার পর একটা গ্রেনেড পরতেছে, আর শরীরে বেনতেছে, কি বেনতেছে তা জানিনা। বস্তার মতো ছেচড়াইয়া ছেচড়াইয়া আগাইলাম। মাইয়াটা আমার গর্ভেই ছিল, আল্লাহর রহমত বাঁইচ্যা গেছি, অহন মায়ইয়ার লইগাই বাঁইচ্যা আছি। রক্ত মাখা কাপড় পোড়াইয়া ফালাইছি জোট সরকারের গুণ্ডদের ভয়ে। বাবা সবার কান্না থেমে গেছে, কিন্তু আমার কান্না কেউ থামাতে পারেন নাই।