নারীর অমূল্যায়িত গৃহস্থালির সেবামূলক শ্রমের আর্থিক মূল্য নির্ধারণ ও জিডিপিতে নারীর এই শ্রমকে অন্তর্ভূক্ত করা গেলে দেশের প্রবৃদ্ধি অনেক বেড়ে যাবে। এছাড়াও গৃহস্থালির সেবামূলক কাজগুলো পরিবার, সমাজ ও সরকারের মাধ্যমে পুর্নবণ্টনের মাধ্যমে নারীদের উপর গৃহস্থালির সেবামূলক কাজের চাপ কমানো ও এ কাজে তাদের সময় কমিয়ে আনতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরী। 

তবে বিষয়গুলো নিয়ে সমাজের মানুষের মধ্যে বিদ্যমান চিন্তাধারায় পরিবর্তন না এনে আইন ও নীতি প্রণয়ন করা হলে তা বিরোধিতার মুখে পড়তে পারে। তাই বিষয়টি সম্পর্কে জনমত গড়তে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে গণমাধ্যমকেও দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে ধর্মীয় উপাসনালয়ও সচেতনতা তৈরিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) ও একশনএইড বাংলাদেশ  এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত গৃহস্থালির সেবামূলক কাজ নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে একটি অনলাইন সংলাপে বক্তারা আজ (বুধবার) এ কথা বলেন।
সংলাপে জাতীয় দৈনিক, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার ৩০ জন সিনিয়র সাংবাদিক অংশ নেন। পিআইবি মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ-এর সভাপতিত্বে সংলাপে প্যনেল আলোচক হিসেবে অংশ নেন দৈনিক ইত্তেফাক-এর সম্পাদক তাসমিমা হোসেন এবং দৈনিক সংবাদ এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনিরুজ্জান।

দৈনিক ইত্তেফাক-এর সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বলেন, সেবামূলক কাজ এর ক্ষেত্রে আমাদের প্রচলিত চিন্তাধারায় পরিবর্তন আনার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য সাংবাদিকদের বিষয়টি সম্পর্কে অবহিতকরণের পাশাপাশি মসজিদের ইমামসহ শিক্ষা ব্যবস্থায়ও বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা নির্ধারণের মাধ্যমে নারীর গৃহস্থালীকাজের স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে।

দৈনিক সংবাদ এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনিরুজ্জান বলেন, “যারা সামাজিক পরিবর্তন আনতে চান তাদের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা থাকতে হবে। নারীর ক্ষমতায়নই প্রধান বিষয় যার জন্য সামাজিক বাধা মোকবিলা করতে হবে। এজন্য সমাজকে প্রস্তুত করতে হবে।

প্রেস ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ এর মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ সভাপতির বক্তব্যে বলেন, “এখনও নারীরা নানা ভাবে নীপিড়িত হচ্ছেন, অবমাননার শিকার হচ্ছেন। আমাদের পূর্বসূরী নারীরা বিবাহসূত্রে অনেকটা দাসী হিসেবে সংসার করতেন এবং শ্রমের বিনিময়ে দু-বেলা দুমুঠো খেতে পেতেন। এই একুশ শতকে এসেও নারীরা কাজের স্বীকৃতি ও ক্ষমতায়ন এর ক্ষেত্রেও বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। নারীর কাজের সঠিক মূল্যায়ন করে জিডিপিতে অন্তর্ভূক্ত করার মাধ্যমে তাদের কাজের স্বীকৃতি দিতে হবে।

একশনএইড বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, আমরা কাজকে এখনও সম্মান করিনা। পাওয়ার শিফট এর বিষয়ে মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। একটি রাষ্ট্রের উন্নতি নারীর ক্ষময়াতনের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। আমরা যদি নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করি তাহলে নীতি নির্ধারণ এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবেন।

সংলাপে স্বাগত বক্তব্য দেন পিআইবি পরিচালক (প্রশাসন) মো. ইলিয়াস ভূইয়া। মূল প্রবন্ধ উপস্থানা করেন, একশনএইড ইন্টারন্যাশনালের সাউথ এশিয়া এ্যাডকোকেসি কোঅর্ডিনেটর মো: হেলাল উদ্দিন। মুক্ত আলোচনা পর্বে অংশ নেন একাত্তর টেলিভিশন এর বার্তা সম্পাদক পলাশ আহসান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন এর সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, সমকাল-এর বিশেষ প্রতিনিধি রাজীর নূর, দৈনিক সময়ের আলো’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কমলেশ রায়, এটিএন বাংলার প্রধান বার্তা সম্পাদক মানস ঘোষ, বাংলাভিশন এর সিনিয়র বার্তা সম্পাদক রুহুল আমিন রুশদ, সংবাদ এর বার্তা সম্পাদক কাজী রফিক, মানুষের জন্য ফাইন্ডেশন এর  কর্মকর্তা মিতুল মাহমুদ,  দৈনিক জনকণ্ঠ’র সিটি এডিটর কাওসার রহমান, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর বিশেষ সংবাদদাতা মাহফুজা জেসমিন, বাংলাদেশ পোস্ট এর নির্বাহী সম্পাদক শিহাবুর রহমান শিহাব, দৈনিক দেশ রূপান্তর এর যুগ্ম সম্পাদক গাজী নাসিরউদ্দিন, চ্যানেল আই এর  বার্তা সম্পাদক মীর মাসরুজ্জামান ও দ্যা ফিনানসিয়াল এক্সপ্রেস পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার কামরুন নাহার শোভাসহ অন্যন্যরা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে