Dhaka ১২:৪৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গানকে ব্যবহার করে মমতাজ স্বৈরাচার হাসিনাকে সহায়তা করেছেন : পিপি

  • Reporter Name
  • Update Time : ১২:১৬:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
  • ৩ Time View

রাজধানীর মিরপুর মডেল থানার হত্যা মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমের চার দিন রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার (১৩ মে) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুয়েল রানা এ আদেশ দেন। এদিন রিমান্ড শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘যখন মমতাজ গান গাইতেন, তখন তাকে সব দলমতের মানুষ পছন্দ করত। কিন্তু মানুষের সেই ভালোবাসাকে কাজে লাগিয়ে গানকে ব্যবহার করে মমতাজ বেগম স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে সহায়তা করেছেন।’

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন (সিএমএম) আদালতে আজ মমতাজকে হাজির করে পুলিশ। এদিন আদালতে তার সাত দিন রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে বিচারক তার চার দিন রিমান্ডের আদেশ দেন।

গতকাল সোমবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে রাজধানীর ধানমণ্ডি থেকে মমতাজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আজ দুপুর ২টা ১৭ মিনিটে মমতাজকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তার মাথায় হেলমেট ও বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরানো ছিল। কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় তাকে হাঁটিয়ে আদালতে নেওয়া হয়। তখন সাংবাদিকদের ক্যামেরা দেখে মাথা নিচু করে মুখ লুকানোর চেষ্টা করেন মমতাজ। এরপর বিকেল ৩টায় তাকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুয়েল রানার আদালতে তোলা হয়।

আদালতের এজলাসে তোলার সময় বিক্ষুব্ধ কিছু আইনজীবী ‘ফাইট্টা যায়’ স্লোগান দিয়ে মমতাজের দিকে তেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ সদস্যরা তাদের বাধা দেন।

রিমান্ড শুনানির সময় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘যখন মমতাজ গান গাইতেন, তখন তাকে সব দলমতের মানুষ পছন্দ করত। কিন্তু মানুষের সেই ভালোবাসাকে কাজে লাগিয়ে গানকে ব্যবহার করে মমতাজ বেগম স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে সহায়তা করেছেন। সিংগাইর এলাকার মানুষজন খুবই সহজ সরল। তাদের ভোটাধিকার কেড়ে নেয় মমতাজ বেগম। আমাদের পার্লামেন্টে এক মিনিটে খরচ হয় কয়েক কোটি টাকা। কিন্তু তিনি সেই পার্লামেন্টে শেখ হাসিনাকে নিয়ে গান গাইতেন। তিনি গানে বলেন, শেখ হাসিনার মতো নেত্রী বিশ্বে নাই। এ সময় সবাই শেম শেম বলতে থাকেন।’

রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘মমতাজ আরও বলেন, খালেদা জিয়ার বাবার নাম নাকি তিনি জানেন না। এটা কেমন কথা। দেশের স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে নিয়েও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন এই মমতাজ। ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে মমতাজদের মতো শিল্পীরা কেউ গান গেয়ে, কেউ ক্রিকেট খেলে, কেউ কবিতা লিখে, কেউ অভিনয় করে উজ্জীবিত করেছে। শেখ হাসিনার যখন মন খারাপ থাকত, তিনি যখন অবসর সময় কাটাত তখন মমতাজ তাকে গান শোনাত। হাসিনা ফ্যাসিজমকে দেশে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মমতাজদের মতো শিল্পীদের ব্যবহার করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মমতাজরা শেখ হাসিনাকে উজ্জীবিত করেছে, অর্থ সহায়তা দিয়েছে। তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর প্রার্থনা করছি। শুনানি শেষে বিচারক তার চার দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।’

এরপর, মমতাজের রিমান্ড শুনানি শেষে বেলা সাড়ে ৩টায় সিএমএম আদালতের সাততলায় অবস্থিত ১৮ নম্বর কোর্ট থেকে মমতাজকে লিফটে করে হাজতখানায় নিতে যান পুলিশ সদস্যরা। এ সময় কিছু আইনজীবী বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তারা দাবি করেন, মমতাজকে হাঁটিয়ে হাজতখানায় নিতে হবে। পরে এ নিয়ে হট্টগোল সৃষ্টি হলে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য এসে মমতাজকে লিফটে করে নিচে নামিয়ে হাজতখানায় নেয়।

মামলার নথি থেকে গেছে, গত ১৯ জুলাই মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন মো. সাগর। ওইদিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আসামিরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণ করেন। এ সময় ভুক্তভোগী সাগরের বুকে গুলি লাগে। তার মা বিউটি আক্তার তাকে খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে ওইদিন দিনগত রাত ৩টায় মিরপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার লাশের সন্ধান পাওয়া যায়। পরে সাগরের লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয়।

এ ঘটনায় গত ২৭ নভেম্বর নিহত সাগরের মা বিউটি আক্তার বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন। এতে শেখ হাসিনাসহ ২৪৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া ২৫০ থেকে ৪০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

গানকে ব্যবহার করে মমতাজ স্বৈরাচার হাসিনাকে সহায়তা করেছেন : পিপি

Update Time : ১২:১৬:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

রাজধানীর মিরপুর মডেল থানার হত্যা মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমের চার দিন রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার (১৩ মে) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুয়েল রানা এ আদেশ দেন। এদিন রিমান্ড শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘যখন মমতাজ গান গাইতেন, তখন তাকে সব দলমতের মানুষ পছন্দ করত। কিন্তু মানুষের সেই ভালোবাসাকে কাজে লাগিয়ে গানকে ব্যবহার করে মমতাজ বেগম স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে সহায়তা করেছেন।’

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন (সিএমএম) আদালতে আজ মমতাজকে হাজির করে পুলিশ। এদিন আদালতে তার সাত দিন রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে বিচারক তার চার দিন রিমান্ডের আদেশ দেন।

গতকাল সোমবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে রাজধানীর ধানমণ্ডি থেকে মমতাজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আজ দুপুর ২টা ১৭ মিনিটে মমতাজকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তার মাথায় হেলমেট ও বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরানো ছিল। কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় তাকে হাঁটিয়ে আদালতে নেওয়া হয়। তখন সাংবাদিকদের ক্যামেরা দেখে মাথা নিচু করে মুখ লুকানোর চেষ্টা করেন মমতাজ। এরপর বিকেল ৩টায় তাকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুয়েল রানার আদালতে তোলা হয়।

আদালতের এজলাসে তোলার সময় বিক্ষুব্ধ কিছু আইনজীবী ‘ফাইট্টা যায়’ স্লোগান দিয়ে মমতাজের দিকে তেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ সদস্যরা তাদের বাধা দেন।

রিমান্ড শুনানির সময় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘যখন মমতাজ গান গাইতেন, তখন তাকে সব দলমতের মানুষ পছন্দ করত। কিন্তু মানুষের সেই ভালোবাসাকে কাজে লাগিয়ে গানকে ব্যবহার করে মমতাজ বেগম স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে সহায়তা করেছেন। সিংগাইর এলাকার মানুষজন খুবই সহজ সরল। তাদের ভোটাধিকার কেড়ে নেয় মমতাজ বেগম। আমাদের পার্লামেন্টে এক মিনিটে খরচ হয় কয়েক কোটি টাকা। কিন্তু তিনি সেই পার্লামেন্টে শেখ হাসিনাকে নিয়ে গান গাইতেন। তিনি গানে বলেন, শেখ হাসিনার মতো নেত্রী বিশ্বে নাই। এ সময় সবাই শেম শেম বলতে থাকেন।’

রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘মমতাজ আরও বলেন, খালেদা জিয়ার বাবার নাম নাকি তিনি জানেন না। এটা কেমন কথা। দেশের স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে নিয়েও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন এই মমতাজ। ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে মমতাজদের মতো শিল্পীরা কেউ গান গেয়ে, কেউ ক্রিকেট খেলে, কেউ কবিতা লিখে, কেউ অভিনয় করে উজ্জীবিত করেছে। শেখ হাসিনার যখন মন খারাপ থাকত, তিনি যখন অবসর সময় কাটাত তখন মমতাজ তাকে গান শোনাত। হাসিনা ফ্যাসিজমকে দেশে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মমতাজদের মতো শিল্পীদের ব্যবহার করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মমতাজরা শেখ হাসিনাকে উজ্জীবিত করেছে, অর্থ সহায়তা দিয়েছে। তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর প্রার্থনা করছি। শুনানি শেষে বিচারক তার চার দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।’

এরপর, মমতাজের রিমান্ড শুনানি শেষে বেলা সাড়ে ৩টায় সিএমএম আদালতের সাততলায় অবস্থিত ১৮ নম্বর কোর্ট থেকে মমতাজকে লিফটে করে হাজতখানায় নিতে যান পুলিশ সদস্যরা। এ সময় কিছু আইনজীবী বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তারা দাবি করেন, মমতাজকে হাঁটিয়ে হাজতখানায় নিতে হবে। পরে এ নিয়ে হট্টগোল সৃষ্টি হলে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য এসে মমতাজকে লিফটে করে নিচে নামিয়ে হাজতখানায় নেয়।

মামলার নথি থেকে গেছে, গত ১৯ জুলাই মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন মো. সাগর। ওইদিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আসামিরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণ করেন। এ সময় ভুক্তভোগী সাগরের বুকে গুলি লাগে। তার মা বিউটি আক্তার তাকে খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে ওইদিন দিনগত রাত ৩টায় মিরপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার লাশের সন্ধান পাওয়া যায়। পরে সাগরের লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয়।

এ ঘটনায় গত ২৭ নভেম্বর নিহত সাগরের মা বিউটি আক্তার বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন। এতে শেখ হাসিনাসহ ২৪৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া ২৫০ থেকে ৪০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।