রাত পোহালেই শনিবার দেশব্যাপী উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদযাত্রার শেষ দিনে গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে শুক্রবার (৬ জুন) সকাল থেকেই যানবাহন ও মানুষের ঢল নেমেছে। গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মোড়ে মোড়ে স্বল্প সময়ের যানজট ও ধীরগতিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। পরিবহন সংকট ও অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করায় ট্রাক-পিকআপসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে গন্তব্যে ছুটছে মানুষ।
সকাল থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যাত্রীদের ঢল নামে। দূরপাল্লার পরিবহন সংকটের কারণে খোলা ট্রাক, কভার্ডভ্যান, পিকআপ, অটোরিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ যে যেভাবে পারছেন বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। সকাল সাড়ে ৯টা, বেলা ১১টা ও সাড়ে ১২টার দিকে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হয়েছে। এতে দুর্ভোগ বাড়ে খোলা ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপে চলাচলকারী যাত্রীদের। বিশেষ করে ভোগান্তিতে পড়েন নারী ও শিশুরা।
এছাড়াও স্বল্প দূরত্বে চলাচলকারী বিভিন্ন বাস, মিনিবাস দূরপাল্লার যাত্রী পরিবহন করছে। মহাসড়কের বিভিন্ন বাস স্টপেজ, মোড় ও জনাকীর্ণ স্থানে আইন না মেনে যাত্রী তুলছেন ট্রাকচালকরা। এতে মহাসড়ক স্বল্প সময়ের জন্য স্থবির হয়ে পড়ে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে।
অপরদিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে সকালে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে তা বেলা বাড়ার সাথে অনেকটা কেটে গেলেও এখন অনেকটাই স্বাভাবিক আছে মহাসড়কে যান চলাচল। মহাসড়কে স্বাভাবিকের চেয়ে যানবাহন চলাচল করায় বিভিন্ন পয়েন্টে যান চলাচলে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। বুধবার রাতে যানজটে আটকে বৃহস্পতিবার নির্দিষ্ট গন্তব্যে দেরিতে পৌঁছা বাসগুলো ৮-১০ ঘণ্টা পর ঢাকায় ফিরেছে। বৃহস্পতিবারের কাউন্টারের বাসগুলো নির্দিষ্ট সময়ের চাইতেও কয়েক ঘণ্টা পর ছেড়ে গেছে।
সাভারের পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার একটি বাস কাউন্টার থেকে গত ২৫ মে ঈদযাত্রার ৫ জুনের রাত ৮টার দুটি টিকিট কিনেন ঠাকুরগাঁওয়ের আল-আমিন।
তিনি বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের আগেই আমরা কাউন্টারে চলে আসি। গভীর রাত পর্যন্ত বাস না আসায় আমরা বারবার কাউন্টার মাস্টারের সাথে কথা বলি। তিনি বিভিন্ন আশ্বাস দিলেও রাত সাড়ে ৩টা পর্যন্ত কোনো বাস আসেনি। আমাদের জানানো হয় যে, বুধবার রাতে দীর্ঘ যানজট থাকায় পরিবহনগুলো নির্দিষ্ট সময়েও গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি। তাই পরিবহনগুলো ঢাকা প্রবেশে দেরি হচ্ছে। পরে যাত্রীরা ওই কাউন্টারের একটি বাস আটকে দিলে তাদের নিয়ে ভোর ৪টার দিকে বাসটি ঠাকুরগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। শুক্রবার দুপুর ২টা পর্যন্ত তিনি বগুড়া পর্যন্ত পৌঁছেছেন।
কালিয়াকৈর পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার পোশাক শ্রমিক অনোয়ার হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে কারখানা ছুটি হয়েছে। এরপর শুক্রবার সকালে গ্রামের বাড়ি বগুড়ায় যাওয়ার জন্য অটোরিকশায় চন্দ্রায় যাই। সেখানে গিয়ে দেখি হাজার হাজার যাত্রী। কোনো বাস খালি নেই। কখন বাস পাব আর কখন বাড়ি পৌঁছাব জানি না।
গাজীপুর মহানগরের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. আক্তারুজ্জামান জানান, শুক্রবার ভোরে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় একটি লরি বিকল পয়ে পড়লে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহন আটকা পড়ে। এতে গাড়ির দীর্ঘ লাইন সৃষ্টি হয়। প্রায় এক ঘণ্টা পর লরিটি উদ্ধার করলে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। তবে এর এক ঘণ্টা পরও গাড়ির চাপ কমেনি। এদিকে মনোযোগ দিতে গিয়ে কারা বেশি ভাড়া নিচ্ছে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। সকাল সাড়ে ৯টার দিকেও গাজীপুরের চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষ ও যানবাহনের প্রচণ্ড ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
নাওজোর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সওগাতুল আলম বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকারখানা ছুটির পর বিকেলে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মৌচাক, চন্দ্রা মোড় ও সফিপুর এলাকায় যাত্রীদের ঢল নামে। শুক্রবার সকালেও একই অবস্থা হয়। যানবাহন সংকটে কিছুটা ভোগান্তি হচ্ছে। মহাসড়কে যানবাহনের চাপ রয়েছে।
ওসি বলেন, বৃহস্পতিবারের তুলনায় শুক্রবার সকালে সড়কে গণপরিবহন ও যাত্রী সংখ্যা বেড়েছে। তবে যাত্রীর তুলনায় গণপরিবহনের সংখ্যা কম। সকালে যাত্রীদের একটু চাপ বেশি থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাপ কমে যাচ্ছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম জানান, গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তায় সকাল থেকেই যাত্রীদের ভিড় থাকায় যানবাহনের চাপ রয়েছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই চাপ কমে আসছে।