Dhaka ০৬:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজায় লাগাতার ইসরায়েলি হামলায় ৭০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত

  • Reporter Name
  • Update Time : ০২:৫৯:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫
  • 28

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলায় একদিনে কমপক্ষে আরও ৭০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দুই শতাধিক। নিহতদের মধ্যে ক্ষুধার্ত ত্রাণপ্রার্থীও রয়েছেন।

বুধবার (১১ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় মঙ্গলবার ভোর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার হামলায় ৭০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে আল জাজিরাকে জানিয়েছেন স্থানীয় চিকিৎসা কর্মকর্তারা।

নিহতদের মধ্যে ক্ষুধার্ত ত্রাণপ্রার্থীও রয়েছেন। জাতিসংঘের মতে, এখন দুর্ভিক্ষে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে গোটা গাজা।

এদিকে মঙ্গলবার আবারও গাজার কেন্দ্রীয় অংশে ইসরায়েল-নিয়ন্ত্রিত নেতসারিম করিডরের কাছে সামান্য খাবার সংগ্রহে আসা মানুষের ওপর গুলি চালায় ইসরায়েলি সেনারা। গাজা সরকারের তথ্য অফিস জানায়, এতে অন্তত ২০ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ১২ বছরের এক শিশুও রয়েছে। শিশুটির নাম মোহাম্মদ খলিল আল-আথামনেহ বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২০০ জন।

এই ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রগুলো পরিচালনা করছে ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ) নামের একটি বিতর্কিত সংস্থা, যার কার্যক্রম ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে চলছে এবং এটি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রিত এলাকায় কাজ করছে।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় জনগণ এই বিতরণ কেন্দ্রগুলোকে ‘মানব কসাইখানা’ বলে অভিহিত করেছেন। কারণ গত ২৭ মে থেকে সংস্থাটি ত্রাণ কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই ১৫০ জনেরও বেশি মানুষ সেখানে প্রাণ হারিয়েছেন, আর আহত হয়েছেন প্রায় ১৫০০ জন।

গাজা সরকারের তথ্য অফিস এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেছে, জিএইচএফ কার্যত একটি ‘মরণ ফাঁদে’ পরিণত হয়েছে, যেখানে ত্রাণের প্রলোভনে ক্ষুধার্ত মানুষদের টেনে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে।

তাদের ভাষায়, “জিএইচএফ এখন ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হাতে এক ভয়ঙ্কর হাতিয়ার হয়ে উঠেছে, যারা ত্রাণ দেওয়ার নামে নিরস্ত্র ও ক্ষুধার্ত মানুষদের মৃত্যুফাঁদে ডেকে নিচ্ছে।”

আল জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজ্জুম গাজার দেইর আল-বালাহ থেকে জানিয়েছেন, জিএইচএফ-এর এসব ত্রাণকেন্দ্র এখন যেন “পুনরাবৃত্ত রক্তপাতের মঞ্চ” হয়ে উঠেছে, যেখানে পরিকল্পিতভাবে সাধারণ মানুষদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এসব হামলা চালানো হয়েছে বিভিন্ন দিক থেকে। ড্রোন, ট্যাংক ও স্নাইপার ব্যবহার করে এসব বিচ্ছিন্ন ত্রাণকেন্দ্রে অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা। আজ্জুম বলেন, “যা হচ্ছে, তা মূলত মানবিক সহায়তা ব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করার এক প্রক্রিয়া।”

অন্যদিকে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ মঙ্গলবার আবারও সতর্কবার্তা দিয়ে জানিয়েছে, গাজায় মানবিক সংকট ‘অভূতপূর্ব হতাশার পর্যায়ে’ পৌঁছেছে।

সংস্থাটি জানায়, গত মে মাসের শেষ সপ্তাহে ৫ বছরের কম বয়সী অন্তত ২৭০০ শিশুকে চরম অপুষ্টিতে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। আর তাই দ্রুত মানবিক সহায়তা পুনরায় শুরু করার আহ্বানও জানিয়েছে তারা।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় কার্যত কঠোর অবরোধ আরোপ করে রেখেছে। জিএইচএফ-এর মাধ্যমে অল্প কিছু সাহায্য ঢুকলেও, বহু অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় ত্রাণ সংস্থাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে যেসব সংস্থা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গাজার লাখো মানুষের কাছে সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছিল, তাদের কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

গাজায় লাগাতার ইসরায়েলি হামলায় ৭০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত

Update Time : ০২:৫৯:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলায় একদিনে কমপক্ষে আরও ৭০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দুই শতাধিক। নিহতদের মধ্যে ক্ষুধার্ত ত্রাণপ্রার্থীও রয়েছেন।

বুধবার (১১ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় মঙ্গলবার ভোর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার হামলায় ৭০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে আল জাজিরাকে জানিয়েছেন স্থানীয় চিকিৎসা কর্মকর্তারা।

নিহতদের মধ্যে ক্ষুধার্ত ত্রাণপ্রার্থীও রয়েছেন। জাতিসংঘের মতে, এখন দুর্ভিক্ষে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে গোটা গাজা।

এদিকে মঙ্গলবার আবারও গাজার কেন্দ্রীয় অংশে ইসরায়েল-নিয়ন্ত্রিত নেতসারিম করিডরের কাছে সামান্য খাবার সংগ্রহে আসা মানুষের ওপর গুলি চালায় ইসরায়েলি সেনারা। গাজা সরকারের তথ্য অফিস জানায়, এতে অন্তত ২০ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ১২ বছরের এক শিশুও রয়েছে। শিশুটির নাম মোহাম্মদ খলিল আল-আথামনেহ বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২০০ জন।

এই ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রগুলো পরিচালনা করছে ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ) নামের একটি বিতর্কিত সংস্থা, যার কার্যক্রম ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে চলছে এবং এটি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রিত এলাকায় কাজ করছে।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় জনগণ এই বিতরণ কেন্দ্রগুলোকে ‘মানব কসাইখানা’ বলে অভিহিত করেছেন। কারণ গত ২৭ মে থেকে সংস্থাটি ত্রাণ কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই ১৫০ জনেরও বেশি মানুষ সেখানে প্রাণ হারিয়েছেন, আর আহত হয়েছেন প্রায় ১৫০০ জন।

গাজা সরকারের তথ্য অফিস এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেছে, জিএইচএফ কার্যত একটি ‘মরণ ফাঁদে’ পরিণত হয়েছে, যেখানে ত্রাণের প্রলোভনে ক্ষুধার্ত মানুষদের টেনে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে।

তাদের ভাষায়, “জিএইচএফ এখন ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হাতে এক ভয়ঙ্কর হাতিয়ার হয়ে উঠেছে, যারা ত্রাণ দেওয়ার নামে নিরস্ত্র ও ক্ষুধার্ত মানুষদের মৃত্যুফাঁদে ডেকে নিচ্ছে।”

আল জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজ্জুম গাজার দেইর আল-বালাহ থেকে জানিয়েছেন, জিএইচএফ-এর এসব ত্রাণকেন্দ্র এখন যেন “পুনরাবৃত্ত রক্তপাতের মঞ্চ” হয়ে উঠেছে, যেখানে পরিকল্পিতভাবে সাধারণ মানুষদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এসব হামলা চালানো হয়েছে বিভিন্ন দিক থেকে। ড্রোন, ট্যাংক ও স্নাইপার ব্যবহার করে এসব বিচ্ছিন্ন ত্রাণকেন্দ্রে অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা। আজ্জুম বলেন, “যা হচ্ছে, তা মূলত মানবিক সহায়তা ব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করার এক প্রক্রিয়া।”

অন্যদিকে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ মঙ্গলবার আবারও সতর্কবার্তা দিয়ে জানিয়েছে, গাজায় মানবিক সংকট ‘অভূতপূর্ব হতাশার পর্যায়ে’ পৌঁছেছে।

সংস্থাটি জানায়, গত মে মাসের শেষ সপ্তাহে ৫ বছরের কম বয়সী অন্তত ২৭০০ শিশুকে চরম অপুষ্টিতে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। আর তাই দ্রুত মানবিক সহায়তা পুনরায় শুরু করার আহ্বানও জানিয়েছে তারা।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় কার্যত কঠোর অবরোধ আরোপ করে রেখেছে। জিএইচএফ-এর মাধ্যমে অল্প কিছু সাহায্য ঢুকলেও, বহু অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় ত্রাণ সংস্থাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে যেসব সংস্থা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গাজার লাখো মানুষের কাছে সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছিল, তাদের কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।